ঢাকা ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ৪ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন জরুরী

২০ জুন থেকে বাজারে মিলবে পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ০৯:০৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • / ১৪ Time View

রংপুরের ঐতিহ‌্য ও নব‌্য জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃত বিষমুক্ত অতি সুমিষ্ট আঁশহীন স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আম নির্দিষ্ট সময় সীমা আগামী ২০ জুন। ১৮ জুন নির্ধারন করা হলেও ঢাকা থেকে নির্দেশ আসার পরে দুই দিন বাড়িয়ে দেওয়া হয় আম পাড়ার দিনক্ষণ।

প্রায় দুই হাজার হেক্টর বাগানে হাঁড়িভাঙ্গার ফলন হয়েছে এ বছর। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরাদের ম‌তে, প্রকৃ‌তি ও বাজার প‌রি‌বেশ ঠিক থাকলে দেড়শ কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি হবে।

মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট, পদগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর নগরের বড়বাড়ী, সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউপিরকাটাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিশাল বিশাল বাগানে সারি সারি আম গাছ। এবার জেলার এসব এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে সব জা‌তের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙা আম। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন।

ধান-তামাকের জেলা রংপুরে এখন হাঁড়িভাঙা আমকে ঘিরে বেকারের সংখ্যা কমেছে। বিশেষত জেলার বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরের লালপুর, পদাগঞ্জ, তেকানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসায় জড়িয়ে বেকারত্ব দূর করেছেন। অনেকে আবার উদ্যোক্তা হিসেবে হাঁড়িভাঙার বাজার সম্প্রসারণ ও চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন।

তরুণ উদ্যোক্তা ও আমচাষিরা প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে আম চাষ শুরু করেছিলো। লাভবান হওয়ার পর থেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে হাঁড়িভাঙা আমের চাষাবাদ ও ব্যবসা করছে। নিজের পাশাপাশি এলাকার অন্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও চেষ্টা করছে।

টেকসই অর্থনীতির জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরী। সেই সা‌থে হাঁড়িভাঙাকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করায় হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক আব্দুস সালাম সরকার ধন‌্যবাদ জানান কর্তৃপক্ষকে।

তিনি বলেন, সরকার প্রধানের উদ্যোগে দেশ-বিদেশে হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। আমরা এতে খুশি। তবে আর একটু দৃষ্টি দিলেই হাঁড়িভাঙাকে ঘিরেই এই অঞ্চলের অর্থনীতি আরও সচল হবে। এজন্য সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন ও পরিবহন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি।

মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি থাকবে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাড়িভাঙ্গা আম ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে। বাজারে হাড়িভাঙ্গা কেনা ছাড়াও বড় বড় বাগান মালিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও আম সরবরাহ করা যাবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, এবারে রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙার ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গার চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির অনেক সময় দামের হেরফের হয়।

এদিকে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তা মনিটরিং করা হবে। বিশেষ করে পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি পরিবহন সুবিধার বিষয়টিও দেখা হবে।

রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, সাদা ল্যাংড়া, কালা ল্যাংড়া, মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালিসহ আরও নানা প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাঁড়িভাঙ্গার। সম্প্রতি হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন জরুরী

২০ জুন থেকে বাজারে মিলবে পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম

Update Time : ০৯:০৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

রংপুরের ঐতিহ‌্য ও নব‌্য জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃত বিষমুক্ত অতি সুমিষ্ট আঁশহীন স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আম নির্দিষ্ট সময় সীমা আগামী ২০ জুন। ১৮ জুন নির্ধারন করা হলেও ঢাকা থেকে নির্দেশ আসার পরে দুই দিন বাড়িয়ে দেওয়া হয় আম পাড়ার দিনক্ষণ।

প্রায় দুই হাজার হেক্টর বাগানে হাঁড়িভাঙ্গার ফলন হয়েছে এ বছর। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরাদের ম‌তে, প্রকৃ‌তি ও বাজার প‌রি‌বেশ ঠিক থাকলে দেড়শ কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি হবে।

মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরাহাট, পদগঞ্জ, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর নগরের বড়বাড়ী, সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউপিরকাটাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিশাল বিশাল বাগানে সারি সারি আম গাছ। এবার জেলার এসব এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে সব জা‌তের আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙা আম। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন।

ধান-তামাকের জেলা রংপুরে এখন হাঁড়িভাঙা আমকে ঘিরে বেকারের সংখ্যা কমেছে। বিশেষত জেলার বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরের লালপুর, পদাগঞ্জ, তেকানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসায় জড়িয়ে বেকারত্ব দূর করেছেন। অনেকে আবার উদ্যোক্তা হিসেবে হাঁড়িভাঙার বাজার সম্প্রসারণ ও চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন।

তরুণ উদ্যোক্তা ও আমচাষিরা প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে আম চাষ শুরু করেছিলো। লাভবান হওয়ার পর থেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে হাঁড়িভাঙা আমের চাষাবাদ ও ব্যবসা করছে। নিজের পাশাপাশি এলাকার অন্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও চেষ্টা করছে।

টেকসই অর্থনীতির জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরী। সেই সা‌থে হাঁড়িভাঙাকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করায় হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক আব্দুস সালাম সরকার ধন‌্যবাদ জানান কর্তৃপক্ষকে।

তিনি বলেন, সরকার প্রধানের উদ্যোগে দেশ-বিদেশে হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। আমরা এতে খুশি। তবে আর একটু দৃষ্টি দিলেই হাঁড়িভাঙাকে ঘিরেই এই অঞ্চলের অর্থনীতি আরও সচল হবে। এজন্য সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপণন ও পরিবহন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি।

মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি থাকবে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাড়িভাঙ্গা আম ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে। বাজারে হাড়িভাঙ্গা কেনা ছাড়াও বড় বড় বাগান মালিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও আম সরবরাহ করা যাবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, এবারে রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙার ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গার চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির অনেক সময় দামের হেরফের হয়।

এদিকে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তা মনিটরিং করা হবে। বিশেষ করে পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি পরিবহন সুবিধার বিষয়টিও দেখা হবে।

রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, সাদা ল্যাংড়া, কালা ল্যাংড়া, মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালিসহ আরও নানা প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাঁড়িভাঙ্গার। সম্প্রতি হাঁড়িভাঙ্গা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।