ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শেষ তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা

১২শ’ মণ্ডপে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:৫৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৩ Time View

শেষ তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা টাঙ্গাইল জেলায় প্রায় ১২শ’ মণ্ডপে সনাতনীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।

বুধবার(২ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের দেবীপক্ষের শুরু হয়েছে। সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা। হাতের নিপুণ ছোঁয়া ও রঙ-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গার অবয়ব। একই সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর অবয়বও ফুটিয়ে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টায় শিল্পীরা।

টাঙ্গাইল শহরের আদালত পাড়া পূজা সংসদ, শ্রী শ্রী কালীবাড়ি, টাঙ্গাইল কালীহাতি উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের ভুক্তা চৌধুরী বাড়ি ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরি করছে, কেউ রঙের ছোঁয়া দিচ্ছেন। শিল্পীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। দিনরাত প্রতিমার সৌন্দর্য বর্দ্ধনে ব্যস্ত ব্যয় পার করছেন।

প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের চেয়ে কাজ অনেক বেড়েছে। প্রতিমা তৈরির উপকরণ এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশের দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে। সে তুলনায় প্রতীমা শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।

আদালত পাড়া পূজা সংসদের প্রতিমা শিল্পী নিশিকান্ত পাল বলেন আমার বাড়ি নেত্রকোনা উপজেলায় আমি পেশায় ৭ বছর যাবত আসি এবছর মোট পাঁচটি প্রতিমা তৈরি করেছি আদালত পাড়া পূজা সংসদ ১ টি দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নে ১ টি মানিকগঞ্জ জেলায় তিনটি প্রতিমার কাজ নেই আর একটি কাজ রং বাকি আছে, ৪ টি কাজ সম্পূর্ণ করেছি।

প্রতিমা শিল্পীরা জানান জানান, আগে যে বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতেন, এখন তা ৫০০-৬৫০ টাকায় কিনতে হয়। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডপের প্রতিমা হয়ে যেত। এখন একই মণ্ডপের প্রতিমা গড়তে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই কিন্তু দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখন সেই প্রতিমায় খরচ হয় এক লাখ টাকার উপরে। তারা যে উপকরণ গত বছর ১২ হাজার টাকায় কিনেছেন, এবার তা কিনতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকায়। যে রঙ ১৫০ টাকায় কিনতেন, এখন তা ২০০-২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অনেকের প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন রঙ ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। অনেকে তাদের পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রঙ-বেরঙের শাড়ি, অলঙ্কার ও মাথার মুকুট দিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুণ ঝন্টু জানান, জেলায় এবার ১২শ’র মতো মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদ ও রাজনৈতিক দলের লোকদের সাথে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। জেলায় অন্য বছরের ন্যায় এবারও দুর্গোৎসব সুন্দর ও সার্থক হবে বলে আশা করেন তিনি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, দুর্গোৎসব উপলক্ষে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম করা হচ্ছে। ১২৫ জনের স্ট্রাইকিং পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। মোটরসাইকেলে প্রায় ৪৬৩ জন বিভিন্ন ডিউটিতে থাকবে। পুলিশের ২৮টি পিকআপ গাড়িতে ১১২ জন পুলিশ সদস্য সব সময় দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া পুলিশের একটি টিম সাদা পোশাকে নজরদারি করবে।

তিনি আরও জানান, জেলায় এবার সিসিক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় ছোট ছোট কন্ট্রোল রুম থাকবে। ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যত ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করবেন।

প্রকাশ, আগামী ৮ অক্টোবর( মঙ্গলবার) মহাপঞ্চমীর আনুষ্ঠানিক মধ্য দিয়ে দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর (রোববার) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

Please Share This Post in Your Social Media

শেষ তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা

১২শ’ মণ্ডপে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:৫৫:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

শেষ তুলির আঁচড় দিতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা টাঙ্গাইল জেলায় প্রায় ১২শ’ মণ্ডপে সনাতনীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।

বুধবার(২ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের দেবীপক্ষের শুরু হয়েছে। সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত টাঙ্গাইলের মৃৎশিল্পীরা। হাতের নিপুণ ছোঁয়া ও রঙ-তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গার অবয়ব। একই সঙ্গে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর অবয়বও ফুটিয়ে তোলার প্রাণান্ত চেষ্টায় শিল্পীরা।

টাঙ্গাইল শহরের আদালত পাড়া পূজা সংসদ, শ্রী শ্রী কালীবাড়ি, টাঙ্গাইল কালীহাতি উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের ভুক্তা চৌধুরী বাড়ি ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমাশিল্পীদের কেউ প্রতিমা তৈরি করছে, কেউ রঙের ছোঁয়া দিচ্ছেন। শিল্পীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। দিনরাত প্রতিমার সৌন্দর্য বর্দ্ধনে ব্যস্ত ব্যয় পার করছেন।

প্রতিমাশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের চেয়ে কাজ অনেক বেড়েছে। প্রতিমা তৈরির উপকরণ এঁটেল মাটি, বাঁশ, কাঠ, খড়, পাটের আঁশের দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে। সে তুলনায় প্রতীমা শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়েনি।

আদালত পাড়া পূজা সংসদের প্রতিমা শিল্পী নিশিকান্ত পাল বলেন আমার বাড়ি নেত্রকোনা উপজেলায় আমি পেশায় ৭ বছর যাবত আসি এবছর মোট পাঁচটি প্রতিমা তৈরি করেছি আদালত পাড়া পূজা সংসদ ১ টি দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নে ১ টি মানিকগঞ্জ জেলায় তিনটি প্রতিমার কাজ নেই আর একটি কাজ রং বাকি আছে, ৪ টি কাজ সম্পূর্ণ করেছি।

প্রতিমা শিল্পীরা জানান জানান, আগে যে বাঁশ ২০০-২৫০ টাকায় কিনতেন, এখন তা ৫০০-৬৫০ টাকায় কিনতে হয়। আগে তিন হাজার টাকার খড় দিয়ে একটা মণ্ডপের প্রতিমা হয়ে যেত। এখন একই মণ্ডপের প্রতিমা গড়তে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার খড় লাগে। খড়ের পরিমাণ একই কিন্তু দাম দ্বিগুণ। আগে যে প্রতিমা তৈরিতে খরচ হত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখন সেই প্রতিমায় খরচ হয় এক লাখ টাকার উপরে। তারা যে উপকরণ গত বছর ১২ হাজার টাকায় কিনেছেন, এবার তা কিনতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকায়। যে রঙ ১৫০ টাকায় কিনতেন, এখন তা ২০০-২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অনেকের প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন রঙ ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। অনেকে তাদের পছন্দের শাড়ি দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে নামিদামি রঙ-বেরঙের শাড়ি, অলঙ্কার ও মাথার মুকুট দিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুণ ঝন্টু জানান, জেলায় এবার ১২শ’র মতো মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদ ও রাজনৈতিক দলের লোকদের সাথে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মিটিং হয়েছে। জেলায় অন্য বছরের ন্যায় এবারও দুর্গোৎসব সুন্দর ও সার্থক হবে বলে আশা করেন তিনি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, দুর্গোৎসব উপলক্ষে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম করা হচ্ছে। ১২৫ জনের স্ট্রাইকিং পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। মোটরসাইকেলে প্রায় ৪৬৩ জন বিভিন্ন ডিউটিতে থাকবে। পুলিশের ২৮টি পিকআপ গাড়িতে ১১২ জন পুলিশ সদস্য সব সময় দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া পুলিশের একটি টিম সাদা পোশাকে নজরদারি করবে।

তিনি আরও জানান, জেলায় এবার সিসিক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ড্রোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় ছোট ছোট কন্ট্রোল রুম থাকবে। ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যত ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করবেন।

প্রকাশ, আগামী ৮ অক্টোবর( মঙ্গলবার) মহাপঞ্চমীর আনুষ্ঠানিক মধ্য দিয়ে দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর (রোববার) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।