সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ১১৮ বারের মতো পেছালো

- Update Time : ০৭:১১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / ৩৭ Time View
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়ে আগামী ৮ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ নিয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ১১৮ বার পেছানো হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালত এ দিন ধার্য করেন।
আদালত সূত্র বলছে, এদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই’র অতিরিক্ত এসপি মো. আজিজুল হক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য আদালত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন-রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছে। বাকিরা কারাগারে আটক রয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর দম্পতি সাগর ও রুনি হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তাদেরকে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হয়। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত থেকে র্যাবকে সরিয়ে দেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়। পরে ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টের নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগ থেকে টাস্কফোর্স গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে পিবিআই প্রধানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনঃ সাগর-রুনী হত্যায় অংশ নেন দুজন
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী আত্মহত্যা করেননি, তারা খুন হয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন দুজন। প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনীকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়েছিলেন তারা। তবে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) অস্পষ্টতায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তদন্তের জন্য আরও সময় লাগবে উল্লেখ করে সম্প্রতি হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ মামলাটি তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্সের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল (পিবিআই প্রধান) শনিবার (৩মে ২০২৫) রাতে বিষয়টি গনমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্ট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে কী কী কাজ করা হয়েছে। সেগুলোই হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তদন্তে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি টাস্কফোর্স। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি। রান্নাঘরে থাকা ছুরি ও বঁটি দিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। ক্ষত নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন তারা। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করে কেউ প্রবেশ করেনি।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে র্যাবের কাছ থেকে সাগর-রুনী হত্যার তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। র্যাব ২০১২ সালে মামলাটির দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এমন নির্দেশ দেন। এরপর নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেননি তারা। এখন পর্যন্ত নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাস্কফোর্স।
সম্প্রতি জমা দেওয়া টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন সাগর-রুনী। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি জানায়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনীকে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হত্যায় সাগর বাধা দিতে পারে-এমন ধারণায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। রুনী নারী হিসাবে দুর্বল চিন্তা করে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। ‘ব্লাড প্যাটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনী। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্সও বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।
হাইকোর্টে দাখিল করা টাস্কফোর্সের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন (হত্যার রাতের পরদিন সকাল) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। এর আগে গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে ধ্বংস হয়ে যায় আলামত। তবে রান্নাঘরের বারান্দা সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল। তা দিয়ে সহজে মানুষ ঢুকতে ও বের হতে পারে। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি। এদিকে সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানায়, একসঙ্গে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনী। মাছরাঙা টিভিতে কর্মরত ছিলেন সাগর। আর রুনী এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর রুনীর ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।