ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রবেশে নতুন নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:৪৫:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৩৬ Time View

প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট।

হোয়াইট হাউসের নতুন নিরাপত্তা নীতিমালা সাংবাদিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এবং তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অফিসসহ ওয়েস্ট উইংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবেশ করতে হলে সাংবাদিকদের আগেই অনুমতি নিতে হবে।

ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনএসসি) সম্প্রতি এক নির্দেশনায় জানায়, প্রেস বিভাগের ‘রুম ১৪০’, যা ‘আপার প্রেস’ নামে পরিচিত, সেখানে সাংবাদিকরা হঠাৎ ঢুকতে পারবেন না। বরং আগে থেকে সময় নির্ধারণ করে প্রবেশ করতে হবে। এনএসসি বলছে, গঠনগত পরিবর্তনের পর অফিসে সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া প্রবেশ নয়’
নির্দেশনা জারির ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এক সাংবাদিকতা ঐতিহ্যের ইতি ঘটলো। এতদিন সাংবাদিকরা হোয়াইট হাউসের প্রেস টিমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নিতে পারতেন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে সাংবাদিকরা আর প্রেস সেক্রেটারির অফিস এলাকায় অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারবেন না।

ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি স্টিভেন চুয়েং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে এই পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, কিছু সাংবাদিক অনুমতি ছাড়া ভিডিও, অডিও ও ছবি ধারণ করেছেন, এমনকি গোপন তথ্যের ছবিও তুলেছেন। তার দাবি, কয়েকজন সাংবাদিক সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন এবং কর্মকর্তাদের অপ্রস্তুত করে প্রশ্ন তুলেছেন—যা শিষ্টাচারবহির্ভূত।

স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ
হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউএইচসিএ) এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ওয়েইজিয়া জিয়াং বলেন, “প্রেস সেক্রেটারির অফিসে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করা মানে সরকারের জবাবদিহি প্রক্রিয়া দুর্বল করা। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মিডিয়ার অবাধ প্রবেশাধিকার অপরিহার্য।”

তবে সাংবাদিকরা এখনো প্রেস বিভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশে প্রবেশ করতে পারবেন, যেখানে নিম্নপদস্থ যোগাযোগ কর্মকর্তারা কাজ করেন।

পেন্টাগনের পর হোয়াইট হাউসেও কড়াকড়ি

এই পদক্ষেপটি এসেছে পেন্টাগনের সাম্প্রতিক মিডিয়া নীতির পরপরই। চলতি মাসের শুরুতে প্রতিরক্ষা দপ্তর সাংবাদিকদের ওপর নতুন শর্ত আরোপ করে, যা না মানায় বহু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে অফিস ছাড়তে হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যেসব সাংবাদিককে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে ধরা হবে বা যারা সংবেদনশীল তথ্য জানতে চাইবেন, তাদের প্রেস অ্যাক্সেস বাতিল করা যাবে।

রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ব্লুমবার্গসহ প্রায় ৩০টি সংবাদমাধ্যম এই নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং একে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

এর আগে ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন প্রশাসনও সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করেছিল, যদিও জনমতের চাপে সেই সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়েও কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে প্রেস পুল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে অস্থায়ীভাবে পুনর্বহাল হয়।

বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক এই নীতিকে অনেকেই প্রশাসনের সংবাদমাধ্যমবিরোধী মনোভাবের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। প্রেস স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো হোয়াইট হাউসকে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ সাংবাদিকদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে এবং জনগণের জানার অধিকার সীমিত করবে।

এক জ্যেষ্ঠ হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা বলেন, “যখন সাংবাদিকরা আর স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না, তখন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে।”

সংক্ষিপ্ত সারাংশ
নতুন নিয়মে ওয়েস্ট উইংয়ের ‘আপার প্রেস রুম’-এ সাংবাদিকদের প্রবেশে পূর্বানুমতি বাধ্যতামূলক।

এনএসসি বলছে, সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষাই মূল উদ্দেশ্য।

সাংবাদিক সংগঠনগুলো একে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে দাবি করেছে।

পেন্টাগনের সাম্প্রতিক মিডিয়া নীতির পর হোয়াইট হাউসের এ পদক্ষেপে উদ্বেগ বেড়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রবেশে নতুন নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০৬:৪৫:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

হোয়াইট হাউসের নতুন নিরাপত্তা নীতিমালা সাংবাদিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এবং তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অফিসসহ ওয়েস্ট উইংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবেশ করতে হলে সাংবাদিকদের আগেই অনুমতি নিতে হবে।

ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এনএসসি) সম্প্রতি এক নির্দেশনায় জানায়, প্রেস বিভাগের ‘রুম ১৪০’, যা ‘আপার প্রেস’ নামে পরিচিত, সেখানে সাংবাদিকরা হঠাৎ ঢুকতে পারবেন না। বরং আগে থেকে সময় নির্ধারণ করে প্রবেশ করতে হবে। এনএসসি বলছে, গঠনগত পরিবর্তনের পর অফিসে সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া প্রবেশ নয়’
নির্দেশনা জারির ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এক সাংবাদিকতা ঐতিহ্যের ইতি ঘটলো। এতদিন সাংবাদিকরা হোয়াইট হাউসের প্রেস টিমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নিতে পারতেন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে সাংবাদিকরা আর প্রেস সেক্রেটারির অফিস এলাকায় অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারবেন না।

ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি স্টিভেন চুয়েং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে এই পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, কিছু সাংবাদিক অনুমতি ছাড়া ভিডিও, অডিও ও ছবি ধারণ করেছেন, এমনকি গোপন তথ্যের ছবিও তুলেছেন। তার দাবি, কয়েকজন সাংবাদিক সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন এবং কর্মকর্তাদের অপ্রস্তুত করে প্রশ্ন তুলেছেন—যা শিষ্টাচারবহির্ভূত।

স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ
হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউএইচসিএ) এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ওয়েইজিয়া জিয়াং বলেন, “প্রেস সেক্রেটারির অফিসে সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করা মানে সরকারের জবাবদিহি প্রক্রিয়া দুর্বল করা। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মিডিয়ার অবাধ প্রবেশাধিকার অপরিহার্য।”

তবে সাংবাদিকরা এখনো প্রেস বিভাগের একটি নির্দিষ্ট অংশে প্রবেশ করতে পারবেন, যেখানে নিম্নপদস্থ যোগাযোগ কর্মকর্তারা কাজ করেন।

পেন্টাগনের পর হোয়াইট হাউসেও কড়াকড়ি

এই পদক্ষেপটি এসেছে পেন্টাগনের সাম্প্রতিক মিডিয়া নীতির পরপরই। চলতি মাসের শুরুতে প্রতিরক্ষা দপ্তর সাংবাদিকদের ওপর নতুন শর্ত আরোপ করে, যা না মানায় বহু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে অফিস ছাড়তে হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যেসব সাংবাদিককে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে ধরা হবে বা যারা সংবেদনশীল তথ্য জানতে চাইবেন, তাদের প্রেস অ্যাক্সেস বাতিল করা যাবে।

রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ব্লুমবার্গসহ প্রায় ৩০টি সংবাদমাধ্যম এই নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং একে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

এর আগে ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন প্রশাসনও সাংবাদিকদের প্রবেশ সীমিত করেছিল, যদিও জনমতের চাপে সেই সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়েও কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে প্রেস পুল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে অস্থায়ীভাবে পুনর্বহাল হয়।

বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক এই নীতিকে অনেকেই প্রশাসনের সংবাদমাধ্যমবিরোধী মনোভাবের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। প্রেস স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো হোয়াইট হাউসকে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ সাংবাদিকদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে এবং জনগণের জানার অধিকার সীমিত করবে।

এক জ্যেষ্ঠ হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা বলেন, “যখন সাংবাদিকরা আর স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না, তখন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে।”

সংক্ষিপ্ত সারাংশ
নতুন নিয়মে ওয়েস্ট উইংয়ের ‘আপার প্রেস রুম’-এ সাংবাদিকদের প্রবেশে পূর্বানুমতি বাধ্যতামূলক।

এনএসসি বলছে, সংবেদনশীল তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষাই মূল উদ্দেশ্য।

সাংবাদিক সংগঠনগুলো একে স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে দাবি করেছে।

পেন্টাগনের সাম্প্রতিক মিডিয়া নীতির পর হোয়াইট হাউসের এ পদক্ষেপে উদ্বেগ বেড়েছে।