হার্ট সুস্থ রাখতে পুষ্টিবিদের পরামর্শে ডায়েট

- Update Time : ০৯:৪৮:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
- / ১১৪ Time View
আমরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলি, যা হার্টের ক্ষতি করে। নিয়মিত ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেল বা ভাজাপোড়া খাবার — এসবই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অথচ সঠিক খাবার বেছে নিলেই হার্টকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখা যায়।
এ বিষয়ে কথা বলেছেন রায়ান হেলথ কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আক্তার। (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবসে জেনে নিন হার্টের যত্নে পাতে কোন খাবারগুলো রাখা জরুরি –
হার্টের সুস্থতার জন্য কোন ধরনের ডায়েট ভালো?
বর্তমানে সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট হলো মেডিটারেনিয়ান ডায়েট। এতে পূর্ণ শস্য, শাকসবজি, সালাদ, ফলমূল, বাদাম, ডাল, মটরশুটি, টকদই, সামুদ্রিক মাছ, চর্বিহীন মাংস, দুধ, অলিভ অয়েল এবং পর্যাপ্ত পানি থাকে। এই ডায়েট হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও টাইপ–টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে — রসুন, কালোজিরা, গ্রিন টি, মাশরুম, ডার্ক চকলেট, স্পিরুলিনা ইত্যাদিও হার্টের জন্য উপকারী।
খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কতটা কমাতে পারে?
গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৪ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমে। এমনকি উদ্ভিদভিত্তিক খাবার, মাছ, গোটা শস্য ও জলপাই তেল খেলে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি ৫২ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিবর্তে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কমে, আর মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে কমে ১৫ শতাংশ। প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম (২৮ গ্রাম) খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল কমে ও হার্টের ঝুঁকি ২১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
তাই প্রতিদিন পাঁচ পরিবেশন সবজি ও দুই পরিবেশন ফল খাওয়া হার্টের জন্য উপকারী।
প্রতিদিনের হার্ট-বান্ধব খাবার কেমন হবে?
একটি সুষম প্লেটে অর্ধেক জায়গা থাকবে শাকসবজি ও সালাদের, এক-চতুর্থাংশ বা হাতের তালুর সমান থাকবে প্রোটিন, আর এক-চতুর্থাংশ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। এর সঙ্গে সামান্য পরিমাণে স্বাস্থ্যকর তেল বা চর্বি যোগ করতে হবে।
কোন ফল ও শাকসবজি হার্টের জন্য উপকারী?
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত ও মৌসুমি ফল খেতে হবে। যেমন পেয়ারা, আমলকি, স্ট্রবেরি, নাশপাতি, কলা, পেঁপে ইত্যাদি।
শাকসবজির মধ্যে গাঢ় সবুজ শাক যেমন পালং, পাট, কলমি, লাউ, মটরশাক এবং সবজির মধ্যে ব্রকলি, করলা, গাজর, ঢেঁড়শ, বিটরুট, টমেটো, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি আলু, সজনে উপকারী।
বাদাম, মাছ না অলিভ অয়েল – কোনটি বেশি কার্যকর?
তিনটিই উপকারী, যদি সুষমভাবে খাদ্যতালিকায় থাকে। মাছে আছে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্ত জমাট বাধা রোধ করে ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সপ্তাহে ২–৩ বার সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত। আবার বাদাম ও জলপাই তেল মনো ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের উৎস, যা খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল কমায়। প্রতিদিন ৩০ গ্রাম বাদাম ও ৪ টেবিল চামচ জলপাই তেল গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে।
চর্বিযুক্ত খাবার কি পুরোপুরি বাদ দিতে হবে?
না। সব চর্বি খারাপ নয়। তবে কঠিন স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যেমন যেমন মাখন, পনির, মাংসের চর্বি, সীমিত খেতে হবে। তরল আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যেমন বাদাম, বীজ, জলপাই তেল, এগুলো উপকারী।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন পরামর্শ দিয়েছে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট দৈনিক ক্যালরির ১০ শতাংশের নিচে রাখতে।
লাল মাংস কতটা ক্ষতিকর?
লাল মাংস পুরোপুরি বর্জন না করে সপ্তাহে একবার ৩–৪ টুকরো চর্বিহীন মাংস খাওয়া নিরাপদ। প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন সসেজ, বেকন বা হটডগে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও সোডিয়াম বেশি থাকে, যা রক্তচাপ বাড়ায়। তাই এগুলো এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রসেস মিট খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ বাড়ে।
চা-কফি পান কি হার্টের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে?
পরিমিত চা বা কফি উপকারী, তবে অতিরিক্ত খেলে উদ্বেগ, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি ও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। তবে চায়ে চিনি, ক্রিম বা সিরাপ না মেশানোই ভালো। অতিরিক্ত চা-কফির ট্যানিনের কারণে আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে।
ভাজা বা প্রক্রিয়াজাত খাবার কেন বিপজ্জনক?
ডুবো তেলে ভাজা খাবারে স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাট থাকে, যা ধমনী সংকুচিত করে রক্তপ্রবাহ কমায়। ফাস্টফুড, স্ট্রিট ফুড ও বেকারিপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হাইড্রোজেনেটেড তেল হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।
ব্যস্ত জীবনে হার্ট-বান্ধব ডায়েট কেমন হবে?
অফিসে বা চলার পথে সহজে খাওয়া যায় এমন খাবার রাখতে পারেন— সিদ্ধ ডিম, এক মুঠো বাদাম, টকদই, চিড়া বা ওটস, মৌসুমি ফল ও সবজি।
ছোলাসিদ্ধ সালাদ, সবজি খিচুড়ি, ডিটক্স ওয়াটার বা লেবু পানি — এগুলোও কার্যকর। সেই সঙ্গে বাইরের ভাজাপোড়া ও প্যাকেটজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোন অভ্যাস সবচেয়ে ক্ষতিকর?
অতিরিক্ত লবণ, আচার, চিপস, চানাচুর, একই তেলে ভাজা খাবার, টেস্টিং সল্ট ও ফাস্টফুড—
এসবই হৃদরোগের বড় ঝুঁকি। বর্তমানে শিশু-কিশোররা প্যাকেটজাত ও বাইরের খাবারে ঝুঁকে পড়ায় ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়ছে।
হার্টের যত্নে সচেতন হউন, খাবারে বৈচিত্র আনুন। সুস্থ হৃদয় থেকেই শুরু হোক সুস্থ জীবন।