ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
টাঙ্গাইল শহরের প্রবেশ দ্বারে ময়লার ভাগার, দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীরা জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে মহিলারা সবচাইতে ভালো থাকবে পুলিশের চেকপোস্টে পিস্তল-গুলি ফেলে পালাল সন্ত্রাসী রিফিউজি জীবন চাই না, নিজভূমিতে ফিরতে চাই উখিয়ায় ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযান: আওয়ামী লীগের ১০ নেতাকর্মী গ্রেফতার নিজ দলের লোকই বিএনপির কাছে নিরাপদ নয় – ফজলুল করিম বেরোবি শিক্ষক মাহামুদুল হকের মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন মিথ্যা তথ্য দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে ২ বছরের কারাদণ্ড নির্বাচনের পূর্বে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে – রাশেদ প্রধান গাইবান্ধায় “জনগণের কথা” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বেরোবি শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ২

হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ১০ মাস পর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ দাবি করে হত্যা মামলা

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ০৩:৩২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • / ১৩১ Time View

ছাত্র-জনতার চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ‘হার্ট অ্যাটাক’ করে মারা যাওয়া শহীদ ছমেস উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে সাড়ে ৩টায় রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ম আদালতে নেয়া হলে বিচারক মো. সোয়েবুর রহমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হাজীরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আল মামুন শাহ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট তৎকালীন পুলিশ, প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর ১২নং ওয়ার্ডের রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার মুদি দোকানী ছমেস উদ্দিনকে তার দোকানে এসে হুমকি দেয়। এসময় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছমেস উদ্দিনকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাত্ব করে। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে পুলিশ ও আসামিরা তাকে রেখে পালিয়ে যায়।

পরে পরিবারের সদস্যরা ছমেস উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম বাদি হয়ে হাজীরহাট থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে শিক্ষক মাহমুদুল হককে ৫৪ নম্বর আসামি করা হয়। তাকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এদিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার ১০ মাস পর দায়ের করা হত্যা মামলায় তদন্ত ছাড়াই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে, ১৬ জুন সোমবার একই মামলায় দেলওয়ার হোসেন নামে আরেক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো। তিনি রাধাকৃষ্ণপুর ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া মুদি দোকানদার ছমেস উদ্দিনকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা বানিয়ে তাকে ‘জাতীয় বীর’ দেখিয়ে গত ৩ জুন হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় এজাহারে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বাকি ৫২ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীনকেও আসামি করা হয়।

শুধু তাই নয়, জাতীয় বীর দেখিয়ে ১০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিড আর ৫ লাখ টাকা জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছমেস উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে করা জুলাই আন্দোলনের শহীদদের তালিকায় ১৯ নম্বরে তার নাম রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়_‘স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীর পরামর্শে পুলিশ বিভাগের একটি দল তার বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীকে দেখে ভীতসন্তস্ত্র হয়ে জ্ঞান হারান। পরবর্তীতে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

এদিকে ছমেস উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম, তার ছেলে আশিকুর রহমান স্বীকার করেছে তাদের বাবা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। তারা মামলা করেছে পুলিশের কথামতো। মামলায় কারা আসামি হয়েছে তা তারা জানে না, শুধু স্বাক্ষর নিয়েছে কাগজে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের সাথে মামলার বাদীর এজাহারে গড়মিল রয়েছে। জেলা প্রশাসন ছমেস উদ্দিনকে ছমেট উদ্দিন নামে দেখানোসহ তার মৃত্যুর স্থান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেখিয়েছে। কিন্তু এজাহারে আবার বলা হয়েছে, প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমেছ উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের সময় ২ আগস্ট মুদি দোকানদার ছমেস উদ্দিন দোকানে বসে থাকা অবস্থায় জামায়াত নেতা হাজী নাছির উদ্দিনকে পুলিশ আটক করতে ওই এলাকায় এলে ছমেস উদ্দিন ভয়ে দোকান থেকে নেমে দৌঁড় দেয়। এরপর, কিছু দূর যাওয়ার পর রাস্তায় শুয়ে পড়ে জ্ঞান হারায়। স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে বাড়ির কাছে বেসরকারি প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

এ ঘটনার ১০ মাস পর গত ৩ জুন রংপুর মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন ছমেস উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সমেছ উদ্দিনকে বাড়ির কাছে নজিরেরহাট এলাকায় কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী সমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম অভিযোগ করেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করার নির্দেশ দিলে রংপুরের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গত বছরের ২ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৬টার দিকে মুদি দোকানের সামনে গিয়ে সমেছ উদ্দিনকে আসামিরা নেমে আসতে বলে। এসময় সমেছ উদ্দিন টের পেয়ে দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে। আসামিরা দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় সমেছ উদ্দিন গুরুতর আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় পুলিশ ও আসামিরা তাকে ঘটনাস্থলে রেখে পালিয়ে যায়।’

‘আসামিরা বাদী আমেনা বেগমকে বলে তোর স্বামীকে জামায়াত-শিবির ও সরকারবিরোধী আন্দোলন করার সাধ মিটিয়ে দিলাম। এরপর এলাকাবাসী ও স্বজনরা সমেছ উদ্দিনকে গুরুতর আহত অবস্থায় অটোরিকশাযোগে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টার দিকে জানায় সমেছ উদ্দিন মারা গেছেন। পরে অজ্ঞাত একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয়। এ সময় মৃত সমেছ উদ্দিনের মাথার পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধা দেখতে পাওয়া যায়। পরে নজিরেরহাট মসজিদের ইমাম মমিনুল ইসলাম জানাজা পড়ান।’

ঘটনার ১০ মাস পর মামলা করার বিষয়ে এজাহারে উল্লেখ করেন ‘সে সময় পুলিশের ভয়ে মামলা করা হয়নি। পরে কাগজ সংগ্রহ করে মামলা করতে দেরি হয়েছে।’

মামলাটি দায়ের করার পর হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ মামলাটি নিজেই রেকর্ড করে তিনি নিজেই তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১০ মাস পর হত্যা মামলা দায়ের করার বিষয়টি জানাজানি হলে নজিরেরহাট এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ২ আগস্ট ওই এলাকায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার এতদিন পর কীভাবে তাকে হত্যা করার অভিযোগ করা হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী সমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, তার স্বামী সমেছ উদ্দিনকে ধরতে ২ আগস্ট পুলিশ এলে তিনি দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারান। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

কেন হত্যা মামলা করলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রশাসন তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কাগজে সই করতে বলেছে সে সই করেছে। সে কারও নামে হত্যা মামলা করে নাই বলে জানায়।

অপরদিকে মৃত সমেছ উদ্দনের ছেলে আশিকুর রহমান জানায়, ঘটনার সময় সে রংপুরের বাইরে ছিল। তার বাবাকে পুলিশ ধরতে এলে তিনি দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করলে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। যারা তার বাবাকে ধরতে এসেছিল তাদের বিচার দাবি করেন তিনি। তবে অকপটে স্বীকার করেন তার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের আমির হাজী নাছির উদ্দিন জানান, মূল ঘটনা হচ্ছে ২ আগস্ট তারিখে কয়েকজন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার বাসা ঘেরাও করে। সে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিন ভয়ে দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে আসে নাই। পুলিশ এসেছিল আমাকে গ্রেপ্তার করতে। হার্ট অ্যাটাকের রোগী কীভাবে জাতীয় বীর হয়। সে কীভাবে সরকার থেকে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বলে দুই দফায় ১৫ লাখ টাকা পায়?

তিনি আরও বলেন, পুরো ঘটনা সাজানো। এই ঘটনাকে হত্যা মামলা হিসেবে দায়ের করা অন্যায়। নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সমেছ উদ্দিন হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পর স্থানীয় সাধারণ মানুষকেও আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেহেদী হাসান ও আখতারুল ইসলামের স্বজন মমতাজ বেগম ও সালমা বেগম বলেন, সমেছ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। এটাই শত ভাগ সত্য। অথচ এ ঘটনাকে কালার করে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করে তাদের স্বজনসহ এলাকার নিরীহ মানুষকে আসামি করা সম্পূর্ণ অন্যায়।

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু জানান, সমেছ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। একজন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ব্যক্তি কীভাবে জাতীয় বীর হয়- আমি কল্পনাও করেেত পারছি না। এ ঘটনায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা জয়নালসহ স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা দায়ের করা সত্যিই দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, সমেছ উদ্দিনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কই? ১০ মাস পর মামলা করা হলো এখনও লাশ উত্তোলন করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? পুরো ঘটনা তদন্ত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আলমগীর বলেন, আমি হাজিরহাট থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞাসা করি- হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে কীভাবে হত্যা করার গল্প সাজানো হয়। পুলিশ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেন, নিরীহ লোকদের আসামি করে মামলাবাণিজ্য করা হচ্ছে।

সমেছ উদ্দিনের মরদেহ জানাজায় ইমামতি করা স্থানীয় মসজিদের ইমাম মমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি জানাজা পড়েছেন নিহতের শরীরে কোনো জখম দেখেননি। হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার কথা শুনেছি। হত্যা করার কথা শুনি নাই।

এলাকাবাসী জাহিদ, মোস্তাফিজ ও ফিরোজসহ অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ব্যক্তি কীভাবে জাতীয় বীর হয়? এটা নিয়ে হত্যা মামলা কে করালো- সব বিষয় তদন্ত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তারা।

Please Share This Post in Your Social Media

বেরোবি শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ২

হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ১০ মাস পর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ দাবি করে হত্যা মামলা

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
Update Time : ০৩:৩২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

ছাত্র-জনতার চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ‘হার্ট অ্যাটাক’ করে মারা যাওয়া শহীদ ছমেস উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে সাড়ে ৩টায় রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ম আদালতে নেয়া হলে বিচারক মো. সোয়েবুর রহমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হাজীরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আল মামুন শাহ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট তৎকালীন পুলিশ, প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর ১২নং ওয়ার্ডের রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার মুদি দোকানী ছমেস উদ্দিনকে তার দোকানে এসে হুমকি দেয়। এসময় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছমেস উদ্দিনকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাত্ব করে। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে পুলিশ ও আসামিরা তাকে রেখে পালিয়ে যায়।

পরে পরিবারের সদস্যরা ছমেস উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম বাদি হয়ে হাজীরহাট থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে শিক্ষক মাহমুদুল হককে ৫৪ নম্বর আসামি করা হয়। তাকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এদিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার ১০ মাস পর দায়ের করা হত্যা মামলায় তদন্ত ছাড়াই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে, ১৬ জুন সোমবার একই মামলায় দেলওয়ার হোসেন নামে আরেক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো। তিনি রাধাকৃষ্ণপুর ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া মুদি দোকানদার ছমেস উদ্দিনকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা বানিয়ে তাকে ‘জাতীয় বীর’ দেখিয়ে গত ৩ জুন হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় এজাহারে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বাকি ৫২ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীনকেও আসামি করা হয়।

শুধু তাই নয়, জাতীয় বীর দেখিয়ে ১০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিড আর ৫ লাখ টাকা জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছমেস উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে করা জুলাই আন্দোলনের শহীদদের তালিকায় ১৯ নম্বরে তার নাম রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়_‘স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীর পরামর্শে পুলিশ বিভাগের একটি দল তার বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীকে দেখে ভীতসন্তস্ত্র হয়ে জ্ঞান হারান। পরবর্তীতে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

এদিকে ছমেস উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম, তার ছেলে আশিকুর রহমান স্বীকার করেছে তাদের বাবা পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। তারা মামলা করেছে পুলিশের কথামতো। মামলায় কারা আসামি হয়েছে তা তারা জানে না, শুধু স্বাক্ষর নিয়েছে কাগজে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের সাথে মামলার বাদীর এজাহারে গড়মিল রয়েছে। জেলা প্রশাসন ছমেস উদ্দিনকে ছমেট উদ্দিন নামে দেখানোসহ তার মৃত্যুর স্থান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেখিয়েছে। কিন্তু এজাহারে আবার বলা হয়েছে, প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমেছ উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের সময় ২ আগস্ট মুদি দোকানদার ছমেস উদ্দিন দোকানে বসে থাকা অবস্থায় জামায়াত নেতা হাজী নাছির উদ্দিনকে পুলিশ আটক করতে ওই এলাকায় এলে ছমেস উদ্দিন ভয়ে দোকান থেকে নেমে দৌঁড় দেয়। এরপর, কিছু দূর যাওয়ার পর রাস্তায় শুয়ে পড়ে জ্ঞান হারায়। স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে বাড়ির কাছে বেসরকারি প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

এ ঘটনার ১০ মাস পর গত ৩ জুন রংপুর মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন ছমেস উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সমেছ উদ্দিনকে বাড়ির কাছে নজিরেরহাট এলাকায় কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী সমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম অভিযোগ করেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করার নির্দেশ দিলে রংপুরের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গত বছরের ২ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৬টার দিকে মুদি দোকানের সামনে গিয়ে সমেছ উদ্দিনকে আসামিরা নেমে আসতে বলে। এসময় সমেছ উদ্দিন টের পেয়ে দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে। আসামিরা দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় সমেছ উদ্দিন গুরুতর আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় পুলিশ ও আসামিরা তাকে ঘটনাস্থলে রেখে পালিয়ে যায়।’

‘আসামিরা বাদী আমেনা বেগমকে বলে তোর স্বামীকে জামায়াত-শিবির ও সরকারবিরোধী আন্দোলন করার সাধ মিটিয়ে দিলাম। এরপর এলাকাবাসী ও স্বজনরা সমেছ উদ্দিনকে গুরুতর আহত অবস্থায় অটোরিকশাযোগে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ৮টার দিকে জানায় সমেছ উদ্দিন মারা গেছেন। পরে অজ্ঞাত একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয়। এ সময় মৃত সমেছ উদ্দিনের মাথার পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধা দেখতে পাওয়া যায়। পরে নজিরেরহাট মসজিদের ইমাম মমিনুল ইসলাম জানাজা পড়ান।’

ঘটনার ১০ মাস পর মামলা করার বিষয়ে এজাহারে উল্লেখ করেন ‘সে সময় পুলিশের ভয়ে মামলা করা হয়নি। পরে কাগজ সংগ্রহ করে মামলা করতে দেরি হয়েছে।’

মামলাটি দায়ের করার পর হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ মামলাটি নিজেই রেকর্ড করে তিনি নিজেই তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১০ মাস পর হত্যা মামলা দায়ের করার বিষয়টি জানাজানি হলে নজিরেরহাট এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ২ আগস্ট ওই এলাকায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার এতদিন পর কীভাবে তাকে হত্যা করার অভিযোগ করা হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী সমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগমের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, তার স্বামী সমেছ উদ্দিনকে ধরতে ২ আগস্ট পুলিশ এলে তিনি দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারান। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

কেন হত্যা মামলা করলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রশাসন তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে কাগজে সই করতে বলেছে সে সই করেছে। সে কারও নামে হত্যা মামলা করে নাই বলে জানায়।

অপরদিকে মৃত সমেছ উদ্দনের ছেলে আশিকুর রহমান জানায়, ঘটনার সময় সে রংপুরের বাইরে ছিল। তার বাবাকে পুলিশ ধরতে এলে তিনি দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করলে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। যারা তার বাবাকে ধরতে এসেছিল তাদের বিচার দাবি করেন তিনি। তবে অকপটে স্বীকার করেন তার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের আমির হাজী নাছির উদ্দিন জানান, মূল ঘটনা হচ্ছে ২ আগস্ট তারিখে কয়েকজন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার বাসা ঘেরাও করে। সে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় মুদি দোকানদার সমেছ উদ্দিন ভয়ে দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে আসে নাই। পুলিশ এসেছিল আমাকে গ্রেপ্তার করতে। হার্ট অ্যাটাকের রোগী কীভাবে জাতীয় বীর হয়। সে কীভাবে সরকার থেকে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বলে দুই দফায় ১৫ লাখ টাকা পায়?

তিনি আরও বলেন, পুরো ঘটনা সাজানো। এই ঘটনাকে হত্যা মামলা হিসেবে দায়ের করা অন্যায়। নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সমেছ উদ্দিন হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পর স্থানীয় সাধারণ মানুষকেও আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেহেদী হাসান ও আখতারুল ইসলামের স্বজন মমতাজ বেগম ও সালমা বেগম বলেন, সমেছ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। এটাই শত ভাগ সত্য। অথচ এ ঘটনাকে কালার করে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করে তাদের স্বজনসহ এলাকার নিরীহ মানুষকে আসামি করা সম্পূর্ণ অন্যায়।

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু জানান, সমেছ উদ্দিন হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। একজন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ব্যক্তি কীভাবে জাতীয় বীর হয়- আমি কল্পনাও করেেত পারছি না। এ ঘটনায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা জয়নালসহ স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা দায়ের করা সত্যিই দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, সমেছ উদ্দিনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কই? ১০ মাস পর মামলা করা হলো এখনও লাশ উত্তোলন করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? পুরো ঘটনা তদন্ত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আলমগীর বলেন, আমি হাজিরহাট থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞাসা করি- হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে কীভাবে হত্যা করার গল্প সাজানো হয়। পুলিশ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেন, নিরীহ লোকদের আসামি করে মামলাবাণিজ্য করা হচ্ছে।

সমেছ উদ্দিনের মরদেহ জানাজায় ইমামতি করা স্থানীয় মসজিদের ইমাম মমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি জানাজা পড়েছেন নিহতের শরীরে কোনো জখম দেখেননি। হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার কথা শুনেছি। হত্যা করার কথা শুনি নাই।

এলাকাবাসী জাহিদ, মোস্তাফিজ ও ফিরোজসহ অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ব্যক্তি কীভাবে জাতীয় বীর হয়? এটা নিয়ে হত্যা মামলা কে করালো- সব বিষয় তদন্ত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তারা।