ঢাকা ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

নওগাঁ প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:৩১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • / ৫০ Time View

ছবিঃ সংগৃহীত

নওগাঁয় স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য হত্যা করার অভিযোগে মো. মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসামছ জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০০৭ সালে নওগাঁর মান্দা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মো. আনিছুর রহমান সাকিদারের মেয়ে মোছা. রাণী বেগমের সঙ্গে নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৪০ হাজার টাকা, একটি ভ্যান গাড়ি ও একটি সেলাই মেশিন যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

তবে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মোস্তাফিজুর রহমান পুনরায় যৌতুক দাবি করে রাণী বেগমের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। স্ত্রীর পিত্রালয়ে ফিরে যাওয়া ও পরে দ্বিতীয়বার পুনরায় বিয়ের পরও চলতে থাকে যৌতুকের দাবি। সর্বশেষ তিনি ভটভটি কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এতে সম্মতি না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট রাতে নিজ ঘরে কাঠের খাটিয়া দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্ত্রী রাণী বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করেন তিনি।

পরদিন নিহতের বাবা মো. আনিছুর রহমান নিয়ামতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় গৃহীত হয় (মামলা নম্বর- ১১১/২০১৬)। মামলার তদন্ত করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. ইকবাল জামিল চৌধুরী (লাকি)। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ।

সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা শেষে আদালত রায়ে বলেন, “আসামি মোস্তাফিজুর রহমান স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ অপরাধের একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

আদালত রায়ে আরও বলেন, আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং সেই অর্থ রাণী বেগমের পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের নির্দেশ দেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে আসামিকে ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে।

এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রাণী বেগমের পরিবার। তারা জানিয়েছেন, “বিচার পেয়েছি, তবে মেয়েটা তো আর ফিরে আসবে না।”

Please Share This Post in Your Social Media

স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

নওগাঁ প্রতিনিধি
Update Time : ০৪:৩১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

নওগাঁয় স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য হত্যা করার অভিযোগে মো. মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসামছ জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০০৭ সালে নওগাঁর মান্দা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মো. আনিছুর রহমান সাকিদারের মেয়ে মোছা. রাণী বেগমের সঙ্গে নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৪০ হাজার টাকা, একটি ভ্যান গাড়ি ও একটি সেলাই মেশিন যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

তবে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মোস্তাফিজুর রহমান পুনরায় যৌতুক দাবি করে রাণী বেগমের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। স্ত্রীর পিত্রালয়ে ফিরে যাওয়া ও পরে দ্বিতীয়বার পুনরায় বিয়ের পরও চলতে থাকে যৌতুকের দাবি। সর্বশেষ তিনি ভটভটি কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এতে সম্মতি না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট রাতে নিজ ঘরে কাঠের খাটিয়া দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্ত্রী রাণী বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করেন তিনি।

পরদিন নিহতের বাবা মো. আনিছুর রহমান নিয়ামতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় গৃহীত হয় (মামলা নম্বর- ১১১/২০১৬)। মামলার তদন্ত করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. ইকবাল জামিল চৌধুরী (লাকি)। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ।

সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা শেষে আদালত রায়ে বলেন, “আসামি মোস্তাফিজুর রহমান স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ অপরাধের একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।”

আদালত রায়ে আরও বলেন, আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং সেই অর্থ রাণী বেগমের পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের নির্দেশ দেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে আসামিকে ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে।

এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রাণী বেগমের পরিবার। তারা জানিয়েছেন, “বিচার পেয়েছি, তবে মেয়েটা তো আর ফিরে আসবে না।”