‘সৌদি রাষ্ট্রদূতকে রিজেক্ট করেছি’ : কোরআন হাতে মডেল মেঘনা

- Update Time : ০৬:১৫:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৮৩২ Time View
রাজধানীর সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে কোরআন শরীফ হাতে আলোচিত-সমালোচিত মডেল মেঘনা আলম জানয়েছেন, সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আমি রিজেক্ট করেছি, রিজেক্ট। তার দেওয়া সব উপহার আমি ফেরত দিয়েছি। তবে ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে আমি নিজের কাছে রেখেছি তার দেওয়া আল কোরআন, বোরকা ও জায়নামাজ।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালতে হাজির হন মেঘনা আলম। এরপর রাজধানীর ধানমণ্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় জব্দ থাকা মোবাইল ফোন, আইপ্যাড ও পাসপোর্ট মেঘনা তার নিজের জিম্মায় চাইলেও তা নামঞ্জুর করেন আদালত।
রাজধানীর ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় জব্দ থাকা মোবাইল ফোন, আইপ্যাড ও পাসপোর্ট নিজের জিম্মায় চেয়ে আবেদন করেছেন মেঘনা আলম। এরপর তার আইনজীবী মহসিন রেজা পলাশ ও মহিমা ইসলাম বাঁধন জব্দ থাকা মোবাইল, আইপ্যাড ও পাসপোর্ট নিজ জিম্মায় চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করেন। আবেদন নামঞ্জুর করায় আদালতে অঝোরে কাঁদেন মেঘনা।

শুনানি শেষে মেঘনা আলম গণমাধ্যমে কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি কাঁদতে থাকেন। কেঁদে কেঁদে তিনি বলেন, তারা (রাষ্ট্রপক্ষ) আমার বিরুদ্ধে একটার পর একটা মিথ্যা বলে যাচ্ছে। তারা আমাকে সব মানুষের সামনে অপমান করে ছোট করে দিয়েছে। আদালতে যদি একটার পর একটা মিথ্যা বলতে থাকে, আমরা কীভাবে ন্যায় বিচার পাব? এরপর তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মহসিন রেজা বলেন, আজ তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সময় চেয়ে একটি পিটিশন দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ফরেনসিক রিপোর্ট সম্পন্ন না হওয়ায় সময়ের আবেদন করেন। সে কারণে আজ পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আমাদের করা পিটিশন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। ফরেনসিক রিপোর্ট ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করা হচ্ছে। উনি জামিন পেয়েছেন এপ্রিলের ২৯ তারিখে। পাসপোর্ট, মোবাইল ও ল্যাপটপের আবেদনের পর ২ মাস পার হয়েছে। একটি ফরেনসিক করতে দুই মাস সময় লাগে না। বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘ করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। পরবর্তী তারিখের আগে আশা করি, আমরা ফেরত পাব।
তিনি বলেন, গত ৩১ আগস্ট আদালত পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য মেঘনা আলমকে নির্দেশ দেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা এখনো সেই পাসওয়ার্ড পাননি। সে জন্য ফরেনসিক সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আজকেও তিনি আবেদন করেন। আমরা আদালতকে জানিয়েছি, মেঘনা আলম এখনো পাসওয়ার্ড না দেয়ায় তার ফরেনসিক হয়নি। তার মোবাইল ও ল্যাপটপে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান আছে কিনা জানা যায়নি। এর মধ্যে যদি তাকে পাসপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হারুনুর রশিদ বলেন, মেঘনা আলমের গ্রেপ্তারের সময় তদন্ত কর্মকর্তা তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করেন। গত ২৯ জুলাই জব্দকৃত জিনিসগুলো তার জিম্মায় নেয়ার জন্য আবেদন করেন। আদালত আসামি পক্ষ ও রাষ্ট্র পক্ষের শুনানি নিয়ে আদেশে বলেন, জব্দকৃত আলামতগুলো বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে কি না, মোবাইল ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য করা প্রয়োজন। তদন্ত কর্মকর্তা ২৬ আগস্ট আদালতে মোবাইল ও ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানি শেষে মেঘনা আলম সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমে জানান, ‘কেন সৌদি আরবের একজন রাষ্ট্র দূতের ইশারায় আমাদের দেশের ন্যায় বিচার বন্ধ হয়ে থাকবে? যে ব্যক্তি (সৌদি রাষ্ট্রদূত) আমাকে বিয়ের আংটি পরিয়ে ঘরে তুলতে চেয়েছে। তাকে আমি রিজেক্ট করেছি, রিজেক্ট। আমাকে কেন দিনের পর দিন হয়রানি করা হচ্ছে? এখন আমাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়। সরকার নাকি ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে। আমার দেশের সরকার কীভাবে বিদেশিদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়? স্বৈরাচারের সময়ের মতো এখনো বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। আদালতে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলায় বিচার ব্যবস্থাকে ধিক্কার জানাই।’
মেঘনা আলম আরও বলেন, ‘সৌদি অ্যাম্বাসি আমাকে আল কোরআন দিয়েছে। সৌদিরা যখন কাউকে মর্যাদার যোগ্য মনে করে তখন তার হাতে আল কোরআন তুলে দেয়। তারা আমাকে সে সম্মান দেখিয়েছেন। সেজন্য আমি তাদের সে সম্মান বহন করছি। আপনাদের মধ্যে যদি কোনো মানবতা থাকে, তাহলে আমি বলব, আপনারা এ হয়রানি থেকে আমাকে মুক্ত করেন।’
সৌদি রাষ্ট্রদূতকে রিজেক্ট করলেও তার উপহার নিয়ে আদালতে কেন- এমন প্রশ্নে মেঘনা আলম বলেন, ‘তার দেওয়া সব উপহার আমি ফেরত দিয়েছি। তবে ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা থেকে আমি নিজের কাছে রেখেছি তার দেওয়া আল কোরআন, বোরকা ও জায়নামাজ।’
এর আগে, বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলায় জব্দ থাকা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড ও পাসপোর্ট নিজের জিম্মায় চেয়ে আবেদন করেছে মডেল মেঘনা আলম। তবে এসব ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কি না, তা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। গত ২৯ জুলাই শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত আদেশ দেন।
একইসঙ্গে এসব ডিভাইসের মালিকানা যাচাই করে আগামী ৩১ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সেদিন সকালে মেঘনা আলমকে আদালতে হাজির করা হয়। সকাল ১১টা ৯ মিনিটের তার শুনানি শুরু হয়। এ সময় মেঘনা হাতে জায়নামাজ নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় ওঠেন। এরপর মেঘনার আইনজীবী মহসিন রেজা ও মহিমা বাঁধন আসামি মেঘনার ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিতে শুনানি করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হারুন অর রশিদ বিরোধিতা করে বলেন, এটা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর মামলা। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন। ল্যাপটপ, মোবাইল ব্যবহার করে কোনো কোনো ব্যবসায়ী, কূটনীতিককে ব্লাকমেইল করতেন তা জানা প্রয়োজন। তদন্তের স্বার্থে এই আবেদন নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
তখন মেঘনা আলম আদালতের উদ্দেশে বলেন, আমার সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল। তার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমি প্রমাণ দিতে পারব আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়েছিল, না আমি কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলাম। তখন বিচারক তার উদ্দেশে বলেন, এখন এটা আলোচনার বিষয় নয়।
এরপর মেঘনা আলম বলেন, ছয়টি মহাদেশের ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করি। আমার ব্যবহৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফেরত চাই। তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, তিনি নারীদের নিয়ে কী কাজ করেন তা মামলার এজাহারে স্পষ্ট। তিনি মূলত নারীদের দিয়ে ব্লাকমেইল করতেন। তখন মেঘনা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন। এরপর উভয়পক্ষ তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মডেল মেঘনা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তার ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল হয়েছিল। গত ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরপর গত ২৮ এপ্রিল ডিটেনশন আইনে মেঘনা আলমের ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল করা হয়। পরদিন ২৯ এপ্রিল তিনি কারামুক্ত হন। এরপর থেকে তিনি জামিনে আছেন।
গত ৯ এপ্রিল বাসা থেকে আটক হন মেঘনা আলম। পরদিন ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মডেল মেঘনা কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তারের পর গত ১২ এপ্রিল ভাটারা থানার প্রতারণা মামলায় দেওয়ান সমিরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২২ এপ্রিল এ মামলায় তার আরও ৪ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে গত ২৭ এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে চাঁদাবাজি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মেঘনা আলম, সমিরসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে।
প্রসঙ্গত, সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনা আলমের সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে।