সোহাগ হত্যাকান্ডে মূল আসামী অভি গ্রেফতার

- Update Time : ০৯:০৭:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
- / ৪২ Time View
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে আলোচিত লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যা মামলায় মূল আসামি অভিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ রিজওয়ান উদ্দিন অভি (৩১)। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই ) রাত আনুমানিক ১১:৫৫ ঘটিকায় পটুয়াখালী জেলায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এই হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘হত্যার মূল আসামি রেজোয়ান উদ্দিন অভিকে মঙ্গলবার পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। এ হত্যায় জড়িত সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, গত ৯ জুলাই ২০২৫ বিকেল আনুমানিক ০৫.৪০ ঘটিকার সময় রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) কে প্রকাশ্য দিবালোকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও উপর্যুপরি পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। ৯৯৯ এর মাধ্যমে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে তা চকবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করেন। চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায় ‘চাঁদাবাজদের জায়গা নাই, ব্যবসায়ীদের ভয় নাই’ এরকম স্লোগান দিয়ে অভিযুক্তরা একটা মবের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।
ঘটনাস্থল থেকে তাৎক্ষণিক সন্দিগ্ধ মাহমুদুল হাসান মহিন এবং ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে রবিন নামে অপর একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
ডিএমপি কমিশনার আরও জানান, মামলাটি তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে ভিকটিম সোহাগকে উপর্যুপরি পাথর নিক্ষেপ করা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেলেও সেই সময় তার পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশের বিশেষ টিমের সহায়তায় তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তার অবস্থান চিহ্নিত করে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে (১৫ জুলাই ২০২৫ খ্রি.) মোঃ রিজওয়ান উদ্দিন অভিকে পটুয়াখালী জেলা হতে গ্রেফতার করে।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার এজাহার নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ইতোমধ্যে এজাহারের একটি কপি ছড়িয়ে পড়ে যেটি মূলত মামলার চূড়ান্ত এজাহার দায়েরের পূর্বে ভিকটিমের সাবেক স্ত্রী ও তার সৎভাই কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এজাহারের খসড়া যাতে ২৩ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিলো। পরবর্তীতে মামলার বর্তমান বাদিনী ভিকটিমের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম থানায় এসে মামলা রুজু করার সময় বাদিনীর মেয়ে উক্ত খসড়া এজাহারের ছবি তুলে রাখে। ভিকটিমের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম উক্ত খসড়া এজাহার থেকে পাঁচজনের নাম বাদ দিয়ে নতুন একজনের নাম সংযোজন করে মোট ১৯ জনেকে আসামি করে চূড়ান্ত এজাহার দায়ের করেন এবং এর ভিত্তিতে উক্ত ঘটনায় কোতয়ালী থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত কোন্দল থেকেই এ হত্যাকাণ্ড। সোহাগ ও অভিযুক্তরা চোরাই অ্যালুমিনিয়াম তার বিক্রি করতেন গত ১৭ বছর ধরেই করে। ৫ আগস্টের পর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই এ হত্যা। এতে নির্বাচন বানচাল বা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র নেই।’
নজরুল ইসলাম আরও জানান, হত্যার পর অভিযুক্তরা মব তৈরির চেষ্টা করে। পুলিশ বুঝতে পেরে সেই মব থেকেই মহিন ও রবিন নামের দুজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় ভিকটিমকে পাথর নিক্ষেপকারী একজনসহ এ পর্যন্ত মোট নয়জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য ধৃত আসামীদের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এর আগে গত ৯ জুলাই বিকেলে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে শরীর ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে। এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার মামলা করেন।
এরপর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপর শুক্রবার কেরানীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
শুক্রবার গভীর রাতে টিটন গাজী (৩২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার রাতে কাজী নান্নুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে সোহাগের নিথর দেহের ওপর পাথর নিক্ষেপকারীকে গ্রেপ্তাররের মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তির সংখ্যা ৯ জন।