ঢাকা ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সচিবালয়কে সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত করতে সরকারের সিদ্ধান্ত কুবি শিক্ষার্থী সুমাইয়াকে ‘ধর্ষণের পর’ হত্যা করা হয়েছে: আসামির স্বীকারোক্তি ব্রাজিল সফরে প্রধান বিচারপতি টঙ্গী ফ্লাইওভারে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১ কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় বিপাকে ৪ কর্মকর্তা  নোয়াখালীতে ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু নিস্পত্তির মাধ্যমে মামলা জট কমিয়ে বিচার কাজ এগিয়ে নিতে হবে আদালত থেকে হাতকড়াসহ লাফ দিয়ে হত্যা মামলার আসামির পালানোর চেষ্টা নয় বছর পর ফিরছে ‘ব্রিকলেন কারি ফ্যাস্টিভ্যাল’ ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতির সম্মানে প্রধান বিচারপতির নৈশভোজ

সুমাইয়ার খালি আসনে ফুল ও খাতা

কুবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ১১:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৫১ Time View

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পঞ্চম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা হয়েছে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ছিল তাদের পঞ্চম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা। তবে পরীক্ষার হলে একটি আসন ছিল শূন্য—সেখানে বসেননি তাদের সহপাঠী সুমাইয়া আফরিন।

মাত্র ছয় দিন আগে, ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে পরীক্ষার আগের দিনই সুমাইয়া আফরিন এবং তাঁর মা তাহমিনা বেগমকে কুমিল্লা শহরের কালোয়াজুরী এলাকার ভাড়া বাসায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পরদিন নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করে বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

আজ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ‘পিএ-৩১৪: আরবান গভর্নেন্স ইন বাংলাদেশ’ কোর্সের পরীক্ষা ছিল। সেমিস্টার শুরু হয় ৫৯ জন নিয়ে। তবে, সেই তালিকা থেকে একজন আর ফিরে আসেননি, বসেননি পরীক্ষায়। সহপাঠীরা সুমাইয়ার স্মরণে তাঁর সিটটি খালি রাখেন। সেখানে রাখা হয় একটি খাতা ও একটি ফুলের তোড়া। পরীক্ষার হলে প্রবেশের মুহূর্তে সহপাঠীদের চোখ ভিজে ওঠে স্মৃতিচারণে।

সুমাইয়ার সহপাঠী মন্দিরা দাস বলেন, ‘আজ আমরা শেষ পরীক্ষা দিলাম, কিন্তু সুমাইয়া ছাড়া এই পরীক্ষা কোনোভাবেই পূর্ণতা পেল না। তাঁর খালি সিট যেন আমাদের মনে করিয়ে দিল, আমরা কী ভয়াবহ ক্ষতি সহ্য করেছি।’

আরেক সহপাঠী সজিব আহসান বলেন, ‘এই মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক অঘটন কয়েকদিন যাবত আমাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আমরা কখনো এরকম দিনের সম্মুখীন হবো ভাবিনি। গত তিনটি কোর্সের পরীক্ষা দিয়েছিলাম সবাই একসাথে। শেষ পরীক্ষা দিয়ে স্বস্তি পেতাম সবাই। সুমাইয়ার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে আর আমাদের তাকে ছাড়া এখন থেকে সব পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা আসবে, যাবে, শেষ হবে, হয়ত আমাদের আর স্বস্তি মিলবে না। শোকসন্তপ্ত মনে আজকে তাকে বারবার মনে পড়েছে আর দুঃখিত হয়েছি তার অনুপস্থিতিতে। আল্লাহ পাক তাকে এবং তার মা’কে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুক, আমিন!’

বিভাগটির ছাত্র উপদেষ্টা ড. কৃষ্ণ কুমার সাহা বলেন, ‘এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এই দুঃখ ভাষায় প্রকাশের নয়। আমরা বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি; যেন অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।’

সহপাঠীদের কাছে সুমাইয়া আফরিন শুধু একজন শিক্ষার্থী ছিলেন না। তিনি ছিলেন তাদের স্বপ্ন, উচ্ছ্বাস ও বন্ধুত্বের অংশ। আজকের খালি সিটটি যেন সাক্ষী হয়ে রইল, কোনো ফলাফলের খাতায় আর তার নাম লেখা হবে না, তবে স্মৃতিতে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন।

Please Share This Post in Your Social Media

সুমাইয়ার খালি আসনে ফুল ও খাতা

কুবি প্রতিনিধি
Update Time : ১১:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পঞ্চম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা হয়েছে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ছিল তাদের পঞ্চম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা। তবে পরীক্ষার হলে একটি আসন ছিল শূন্য—সেখানে বসেননি তাদের সহপাঠী সুমাইয়া আফরিন।

মাত্র ছয় দিন আগে, ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে পরীক্ষার আগের দিনই সুমাইয়া আফরিন এবং তাঁর মা তাহমিনা বেগমকে কুমিল্লা শহরের কালোয়াজুরী এলাকার ভাড়া বাসায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পরদিন নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করে বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

আজ দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ‘পিএ-৩১৪: আরবান গভর্নেন্স ইন বাংলাদেশ’ কোর্সের পরীক্ষা ছিল। সেমিস্টার শুরু হয় ৫৯ জন নিয়ে। তবে, সেই তালিকা থেকে একজন আর ফিরে আসেননি, বসেননি পরীক্ষায়। সহপাঠীরা সুমাইয়ার স্মরণে তাঁর সিটটি খালি রাখেন। সেখানে রাখা হয় একটি খাতা ও একটি ফুলের তোড়া। পরীক্ষার হলে প্রবেশের মুহূর্তে সহপাঠীদের চোখ ভিজে ওঠে স্মৃতিচারণে।

সুমাইয়ার সহপাঠী মন্দিরা দাস বলেন, ‘আজ আমরা শেষ পরীক্ষা দিলাম, কিন্তু সুমাইয়া ছাড়া এই পরীক্ষা কোনোভাবেই পূর্ণতা পেল না। তাঁর খালি সিট যেন আমাদের মনে করিয়ে দিল, আমরা কী ভয়াবহ ক্ষতি সহ্য করেছি।’

আরেক সহপাঠী সজিব আহসান বলেন, ‘এই মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক অঘটন কয়েকদিন যাবত আমাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আমরা কখনো এরকম দিনের সম্মুখীন হবো ভাবিনি। গত তিনটি কোর্সের পরীক্ষা দিয়েছিলাম সবাই একসাথে। শেষ পরীক্ষা দিয়ে স্বস্তি পেতাম সবাই। সুমাইয়ার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে আর আমাদের তাকে ছাড়া এখন থেকে সব পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা আসবে, যাবে, শেষ হবে, হয়ত আমাদের আর স্বস্তি মিলবে না। শোকসন্তপ্ত মনে আজকে তাকে বারবার মনে পড়েছে আর দুঃখিত হয়েছি তার অনুপস্থিতিতে। আল্লাহ পাক তাকে এবং তার মা’কে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুক, আমিন!’

বিভাগটির ছাত্র উপদেষ্টা ড. কৃষ্ণ কুমার সাহা বলেন, ‘এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এই দুঃখ ভাষায় প্রকাশের নয়। আমরা বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি; যেন অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।’

সহপাঠীদের কাছে সুমাইয়া আফরিন শুধু একজন শিক্ষার্থী ছিলেন না। তিনি ছিলেন তাদের স্বপ্ন, উচ্ছ্বাস ও বন্ধুত্বের অংশ। আজকের খালি সিটটি যেন সাক্ষী হয়ে রইল, কোনো ফলাফলের খাতায় আর তার নাম লেখা হবে না, তবে স্মৃতিতে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন।