ঢাকা ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেট সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন মেয়র আরিফ

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট
  • Update Time : ০৮:১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩
  • / ২১২ Time View

অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শনিবার (২০ মে ২০২৩) বিকেল ৩টায় সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে তিনি এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, জেলজুলুম নির্যাতন সহ্য করে সিলেটের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলাম। আমার উন্নয়ন কাজ নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাদের বলতে চাই, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। আর তাই সিলেটের মানুষজন মা বোন,যে যেখানেই আমাকে পাচ্ছেন,নির্বাচন করার জন্য বলছেন,অনুরোধ করছেন। তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এখনো আমি মনোনয়নপত্র কিনিনি। অথচ আমার নেতাকর্মীদের ঘরেঘরে পুলিশ তল্লাশী করছে। গ্রেফতার নির্যাতন এমনকি রিমান্ডে নিয়েও নির্যাতন করছে।

তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। ইভিএম এ ভোট উন্নত দেশগুলোও করছেনা। তখন পক্ষপাতিত্বের জন্য সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। ইভিএম- এ আপনার এক মার্কায় ভোট দিবেন। দেখবেন সেটা আরেক মার্কায় চলে গেছে।

তিনি বলেন, আমি বিএনপির একজন নেতা বা কর্মী হিসাবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে থাকতে পারিনা। আমার মা আমার নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নির্দেশে আমি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। তিনি বলেন, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় নয়। আমি আমার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে, দলের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করে এ পাতানো নির্বাচনে আমি অংশ নিতে পারিনা। এজন্য তিনি তার কর্মী শুভাকাংখী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানের ঘোষণা দেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী আজ দুপুরে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করেছেন। এর আগে শনিবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসা নগরের কুমারপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে আরিফ তার প্রার্থিতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। ফলে সিটি নির্বাচন ঘিরে তাঁকে নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনার অবসান তিনি নিজেই করবেন। এদিকে,বিএনপি নেতা আরিফুল হক নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আরিফুল হকের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকান্ডে এই গুঞ্জন ও নগরবাসীর কৌতুহল আরো বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় শনিবার বেলা ২টায় রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ আহ্বান করেন আরিফুল হক। এই সমাবেশ থেকে নির্বাচন ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কারের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

সিলেট সিটি মেয়র আরিফের নাটুকেপনা!

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যতটা না কাজের জন্য আলোচিত, তারচে বহুগুণ বেশি সমালোচিত তার নাটুকেপনা নিয়ে। ইদানিং তার এসব নাটুকেপনায় রীতিমতো অতিষ্ঠ নগরবাসী। স্মরণকালের সবচে বড় নাটক মঞ্চস্ত করেছিলেন তিনি গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন। জনতার কামরান হিসাবে খ্যাত প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকা যখন পতপত করে এগিয়ে যাচ্ছে, সবাই যখন প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন কামরানের নৌকা জয় পেতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আরিফ নগরীর কাজিটুলা এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গণমাধ্যম কর্মীদের ডেকে বলেছিলেন, এমন জঘন্য নির্বাচন তিনি জীবনে কখনো দেখেন নি। আর তাই এই নির্বাচন তিনি প্রত্যাখ্যান করছেন। সেই আরিফই ফলাফল ঘোষণার সময় যখন দেখলেন ভোট গননায় তিনি সমান লড়াই করছেন নৌকার সাথে, এমনকি কোথাও কোথাও থেকে তার জয়ের সংবাদও আসছে! ব্যাস! আর কি! তারই ঘোষিত জঘন্য নির্বাচনটি আস্তে আস্তে বিশুদ্ধ হতে শুরু করে। তিনি ছুটে যান আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। সেখান থেকেই ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ের কিনারায় পৌঁছানোর পর ফলাফল গ্রহণ করেই ওই ক্রীড়া কমপ্লেক্স ত্যাগ করেছিলেন। তার এমন নাটকে মুখটিপে হেসেছিলেন নগরবাসী। আর সমালোচকদের বিষাক্ত তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন তার কর্মী সমর্থক ভোটার এবং নিজেও।

এবারের নির্বাচন আসতেই তিনি আবার নাটক শুরু করেন। ছুটে যান লন্ডনে। সেখান থেকে কোন গ্রিন সিগন্যাল আদায় করতে পারেন নি। মানে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই জানিয়ে দেয়া হয় তাকে। দু’সপ্তাহের যুক্তরাজ্য মিশন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সবাই যখন অধির আগ্রহে অপেক্ষায় তার প্রার্থীতার বিষয়ে ঘোষণা শোনার বা জানার, তখন সেই আগ্রহ জিইয়ে রাখতে ঘোষণা দিলেন, ঈদের পর জানাবেন প্রার্থী হবেন কি না। কিন্তু ঈদের পর আরিফ জানান দিলেন, ২০মে রেজিস্ট্রারি মাঠে জনসভায় জানাবেন, তিনি প্রার্থী হবেন কি না। এরমধ্যে আবার শুরু করেন ঢাকা মিশন। সেখানে গিয়ে দুইদিনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে অনেক দেনদরবার করেন প্রার্থী হওয়া আর না হওয়ার লাভ-ক্ষতি নিয়ে। জানা গেছে, প্রার্থী না হলে দল থেকে কিকি সুবিধা তাকে দেয়া হবে তা নিয়েই ছিল তার যাবতীয় দেনদরবা। যে প্রতিশ্রæতিই তিনি আদায় করেন না কেন, বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করছে এবং দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে, এমন সিদ্ধান্তের কথাই তাকে জানানো হয়। চলতে থাকে তার ধারাবাহিক নাটক। কয়েকদিন আগের ঘটনা। হঠাৎ নগরভবনে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন তিনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে নগরবাসীকে জানালেন, তার ব্যক্তিগত ও বাসভবনের নিরাপত্তায় নিযুক্ত আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এজন্য তিনি সরকার এবং সরকারের কিছু অতিউৎসাহী কর্মকর্তাদের দায়ী করেন। কঠোর সমালোচনা করেন সরকারের। এমনকি, সরকার তার বড় কোন ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও ব্যাক্ত করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, সরকার ওই আনসারদের নিযুক্ত করেছিল কি না। কিন্তু তিনি তা বারবার এড়িয়ে জবাব দিয়েছিলেন, আমি মেয়র। আমার বাসাটাও আমার অফিস। সেখান থেকে নিরাপত্তাকর্মী সরিয়ে নিলে আগে আমাকে জানানো উটিৎ ছিল। কিন্তু তা জানানো হয়নি। পরে জানা গেল, তার ব্যক্তিগত বা বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য কোন আনসার সদস্য নিযুক্ত করা হয়নি। বরং সিটি করপোরেশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে নগরভবন এবং নগরভবন সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার জন্য ২৪ জন আনসার সদস্য দেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে বিধিবহির্ভূতভাবে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নিজের বাসভবন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করেছিলেন। সেই পাঁচজনকে আবার নগরভবন ও নগরভবন সংশ্লিষ্ট স্থাপনা সুরক্ষায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে মাত্র। জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্ট এমনটাই জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে।

তার সর্বশেষ নাটক দেখেছেন নগরবাসী শুক্রবার বিকেলে। ২০মে তিনি রেজিস্ট্রারি মাঠে সভার মাধ্যমে নিজের প্রার্থীতার ব্যাপারে ঘোষণা দিতে মাঠটি বরাদ্দ চেয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন তাকে জানিয়েছিল, সভায় সমস্যা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তাই তারা মৌখিকভাবে সভা না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ব্যাস! আর যায় কোথায়! নাটুকে আরিফ পেলেন আরেকিট নাটক মঞ্চস্তের সুযোগ। অনুসারীদের নিয়ে বসে পড়লেন রেজিস্ট্রারি মাঠের মূল গেইটে। জানালেন, পুলিশ তাকে সভা করতে নিষেধ করেছে। তার বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে সরকার। তাই তিনি রাস্তায় বসে পড়েছেন। আবার সরকার তার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর পুলিশ গেইটের তালা খুলে দিলে আরিফ ও তার অনুসারীরা সমাবেশের অনুমতি আদায় করেছেন- বলে প্রচারণা শুরু করেন। অথচ, প্রশাসন তাকে এখানে সভা করতে আদৌ কোন নিষেধাজ্ঞাই দেয়নি। পুলিশ মৌখিকভাবে তাকে সভা না করার পরামর্শ দিয়েছিল এই কারণে যে, শুক্রবার রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির সভা শুরুর আগেই তাদের অভ্যন্তরিন কোন্দলের জেরে দুই গ্রæপে হাতাহাতি পর্যন্ত শুরু করেছিল। মারাত্মক সংঘর্ষে রূপ নেয়ার আগেই পুলিশ হস্তক্ষেপ করে এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি কোর্ট পয়েন্টে পথসভার মাধ্যমে নিজেদের কর্মসূচি সমাপ্ত করেছিল। শনিবার যে, আরও বড় কোন ঘটনা ঘটবেনা- সে নিশ্চয়তাইবা দেবে কে? সেজন্যই পুলিশ প্রশাসন সভা না করার অনুরোধ জানিয়েছিল। তো, মেয়র আরিফের প্যান্ডেল রেজিস্ট্রারি মাঠে প্রস্তুত। বিকেল তিনটায় সেখানে জনসভার মাধ্যমে তিনি তার প্রার্থীতার ব্যাপারে ঘোষণা দিবেন।

সিলেট নগরবাসীর আবেগ-অনুভুতি নিয়ে এতসব নাটক মঞ্চায়ন যিনি করতে পারেন, তার থলে ভর্তি আর কিকি নাটক জমা আছে,তা দেখার অপেক্ষায় সচেতন মহল।

Please Share This Post in Your Social Media

সিলেট সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন মেয়র আরিফ

Update Time : ০৮:১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩

অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শনিবার (২০ মে ২০২৩) বিকেল ৩টায় সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে তিনি এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, জেলজুলুম নির্যাতন সহ্য করে সিলেটের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলাম। আমার উন্নয়ন কাজ নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাদের বলতে চাই, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। আর তাই সিলেটের মানুষজন মা বোন,যে যেখানেই আমাকে পাচ্ছেন,নির্বাচন করার জন্য বলছেন,অনুরোধ করছেন। তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এখনো আমি মনোনয়নপত্র কিনিনি। অথচ আমার নেতাকর্মীদের ঘরেঘরে পুলিশ তল্লাশী করছে। গ্রেফতার নির্যাতন এমনকি রিমান্ডে নিয়েও নির্যাতন করছে।

তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। ইভিএম এ ভোট উন্নত দেশগুলোও করছেনা। তখন পক্ষপাতিত্বের জন্য সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। ইভিএম- এ আপনার এক মার্কায় ভোট দিবেন। দেখবেন সেটা আরেক মার্কায় চলে গেছে।

তিনি বলেন, আমি বিএনপির একজন নেতা বা কর্মী হিসাবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে থাকতে পারিনা। আমার মা আমার নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নির্দেশে আমি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। তিনি বলেন, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় নয়। আমি আমার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে, দলের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করে এ পাতানো নির্বাচনে আমি অংশ নিতে পারিনা। এজন্য তিনি তার কর্মী শুভাকাংখী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানের ঘোষণা দেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী আজ দুপুরে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করেছেন। এর আগে শনিবার দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসা নগরের কুমারপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে আরিফ তার প্রার্থিতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। ফলে সিটি নির্বাচন ঘিরে তাঁকে নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনার অবসান তিনি নিজেই করবেন। এদিকে,বিএনপি নেতা আরিফুল হক নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আরিফুল হকের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকান্ডে এই গুঞ্জন ও নগরবাসীর কৌতুহল আরো বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় শনিবার বেলা ২টায় রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ আহ্বান করেন আরিফুল হক। এই সমাবেশ থেকে নির্বাচন ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কারের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

সিলেট সিটি মেয়র আরিফের নাটুকেপনা!

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যতটা না কাজের জন্য আলোচিত, তারচে বহুগুণ বেশি সমালোচিত তার নাটুকেপনা নিয়ে। ইদানিং তার এসব নাটুকেপনায় রীতিমতো অতিষ্ঠ নগরবাসী। স্মরণকালের সবচে বড় নাটক মঞ্চস্ত করেছিলেন তিনি গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন। জনতার কামরান হিসাবে খ্যাত প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকা যখন পতপত করে এগিয়ে যাচ্ছে, সবাই যখন প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন কামরানের নৌকা জয় পেতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আরিফ নগরীর কাজিটুলা এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গণমাধ্যম কর্মীদের ডেকে বলেছিলেন, এমন জঘন্য নির্বাচন তিনি জীবনে কখনো দেখেন নি। আর তাই এই নির্বাচন তিনি প্রত্যাখ্যান করছেন। সেই আরিফই ফলাফল ঘোষণার সময় যখন দেখলেন ভোট গননায় তিনি সমান লড়াই করছেন নৌকার সাথে, এমনকি কোথাও কোথাও থেকে তার জয়ের সংবাদও আসছে! ব্যাস! আর কি! তারই ঘোষিত জঘন্য নির্বাচনটি আস্তে আস্তে বিশুদ্ধ হতে শুরু করে। তিনি ছুটে যান আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে। সেখান থেকেই ফলাফল ঘোষণা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ের কিনারায় পৌঁছানোর পর ফলাফল গ্রহণ করেই ওই ক্রীড়া কমপ্লেক্স ত্যাগ করেছিলেন। তার এমন নাটকে মুখটিপে হেসেছিলেন নগরবাসী। আর সমালোচকদের বিষাক্ত তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন তার কর্মী সমর্থক ভোটার এবং নিজেও।

এবারের নির্বাচন আসতেই তিনি আবার নাটক শুরু করেন। ছুটে যান লন্ডনে। সেখান থেকে কোন গ্রিন সিগন্যাল আদায় করতে পারেন নি। মানে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই জানিয়ে দেয়া হয় তাকে। দু’সপ্তাহের যুক্তরাজ্য মিশন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সবাই যখন অধির আগ্রহে অপেক্ষায় তার প্রার্থীতার বিষয়ে ঘোষণা শোনার বা জানার, তখন সেই আগ্রহ জিইয়ে রাখতে ঘোষণা দিলেন, ঈদের পর জানাবেন প্রার্থী হবেন কি না। কিন্তু ঈদের পর আরিফ জানান দিলেন, ২০মে রেজিস্ট্রারি মাঠে জনসভায় জানাবেন, তিনি প্রার্থী হবেন কি না। এরমধ্যে আবার শুরু করেন ঢাকা মিশন। সেখানে গিয়ে দুইদিনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে অনেক দেনদরবার করেন প্রার্থী হওয়া আর না হওয়ার লাভ-ক্ষতি নিয়ে। জানা গেছে, প্রার্থী না হলে দল থেকে কিকি সুবিধা তাকে দেয়া হবে তা নিয়েই ছিল তার যাবতীয় দেনদরবা। যে প্রতিশ্রæতিই তিনি আদায় করেন না কেন, বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করছে এবং দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে, এমন সিদ্ধান্তের কথাই তাকে জানানো হয়। চলতে থাকে তার ধারাবাহিক নাটক। কয়েকদিন আগের ঘটনা। হঠাৎ নগরভবনে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন তিনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে নগরবাসীকে জানালেন, তার ব্যক্তিগত ও বাসভবনের নিরাপত্তায় নিযুক্ত আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এজন্য তিনি সরকার এবং সরকারের কিছু অতিউৎসাহী কর্মকর্তাদের দায়ী করেন। কঠোর সমালোচনা করেন সরকারের। এমনকি, সরকার তার বড় কোন ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও ব্যাক্ত করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, সরকার ওই আনসারদের নিযুক্ত করেছিল কি না। কিন্তু তিনি তা বারবার এড়িয়ে জবাব দিয়েছিলেন, আমি মেয়র। আমার বাসাটাও আমার অফিস। সেখান থেকে নিরাপত্তাকর্মী সরিয়ে নিলে আগে আমাকে জানানো উটিৎ ছিল। কিন্তু তা জানানো হয়নি। পরে জানা গেল, তার ব্যক্তিগত বা বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য কোন আনসার সদস্য নিযুক্ত করা হয়নি। বরং সিটি করপোরেশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে নগরভবন এবং নগরভবন সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার জন্য ২৪ জন আনসার সদস্য দেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে বিধিবহির্ভূতভাবে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই নিজের বাসভবন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করেছিলেন। সেই পাঁচজনকে আবার নগরভবন ও নগরভবন সংশ্লিষ্ট স্থাপনা সুরক্ষায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে মাত্র। জেলা আনসার ও ভিডিপি কমান্ড্যান্ট এমনটাই জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে।

তার সর্বশেষ নাটক দেখেছেন নগরবাসী শুক্রবার বিকেলে। ২০মে তিনি রেজিস্ট্রারি মাঠে সভার মাধ্যমে নিজের প্রার্থীতার ব্যাপারে ঘোষণা দিতে মাঠটি বরাদ্দ চেয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন তাকে জানিয়েছিল, সভায় সমস্যা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তাই তারা মৌখিকভাবে সভা না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ব্যাস! আর যায় কোথায়! নাটুকে আরিফ পেলেন আরেকিট নাটক মঞ্চস্তের সুযোগ। অনুসারীদের নিয়ে বসে পড়লেন রেজিস্ট্রারি মাঠের মূল গেইটে। জানালেন, পুলিশ তাকে সভা করতে নিষেধ করেছে। তার বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে সরকার। তাই তিনি রাস্তায় বসে পড়েছেন। আবার সরকার তার বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর পুলিশ গেইটের তালা খুলে দিলে আরিফ ও তার অনুসারীরা সমাবেশের অনুমতি আদায় করেছেন- বলে প্রচারণা শুরু করেন। অথচ, প্রশাসন তাকে এখানে সভা করতে আদৌ কোন নিষেধাজ্ঞাই দেয়নি। পুলিশ মৌখিকভাবে তাকে সভা না করার পরামর্শ দিয়েছিল এই কারণে যে, শুক্রবার রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপির সভা শুরুর আগেই তাদের অভ্যন্তরিন কোন্দলের জেরে দুই গ্রæপে হাতাহাতি পর্যন্ত শুরু করেছিল। মারাত্মক সংঘর্ষে রূপ নেয়ার আগেই পুলিশ হস্তক্ষেপ করে এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি কোর্ট পয়েন্টে পথসভার মাধ্যমে নিজেদের কর্মসূচি সমাপ্ত করেছিল। শনিবার যে, আরও বড় কোন ঘটনা ঘটবেনা- সে নিশ্চয়তাইবা দেবে কে? সেজন্যই পুলিশ প্রশাসন সভা না করার অনুরোধ জানিয়েছিল। তো, মেয়র আরিফের প্যান্ডেল রেজিস্ট্রারি মাঠে প্রস্তুত। বিকেল তিনটায় সেখানে জনসভার মাধ্যমে তিনি তার প্রার্থীতার ব্যাপারে ঘোষণা দিবেন।

সিলেট নগরবাসীর আবেগ-অনুভুতি নিয়ে এতসব নাটক মঞ্চায়ন যিনি করতে পারেন, তার থলে ভর্তি আর কিকি নাটক জমা আছে,তা দেখার অপেক্ষায় সচেতন মহল।