ঢাকা ০৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে বন্যার আরও উন্নতি, ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট
  • Update Time : ০৭:০৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • / ১১ Time View

সিলেটের বন্যাকবলিত সিলেট সিটি করর্পোরেশনসহ ১৩টি উপজেলায় বাড়িঘর ও আঙিনা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে বন্যাদুর্গতরা এখন ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠছে পুরো এলাকাজুড়ে। রাস্তাঘাট, মৎস্য ও কৃষি খাতে ৭৭৯ কোটি ৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। পানি কমে যাওয়ায় ভোগান্তি কমলেও চারদিকে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। ফলে নতুন করে চিন্তায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় গত ৮ দিনে ডায়রিয়া, আরটিআই, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৮২৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বন্যা ও পরবর্তী সময়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভাগজুড়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৯৪টি মেডিকেল টিম। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মজয় দত্ত জানান, বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেপ্লক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক,স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইউনিয়নভিত্তিক টিমও কাজ করছে। এদিকে, গোয়াইনঘাটে স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। বিভিন্ন ইউনিয়নে গত ২১ জুন থেকে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে কাজ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা জানান, বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ৩ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক সুধীন চন্দ্র দাস জানান, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ ডায়রিয়া, জন্ডিস, চর্মরোগ এবং টাইফয়েডসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে,সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বুধবারের (২৬ জুন) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমেছে। নগরীর ২৫০ কিলোমিটার রাস্তায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলায় আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এলজিইডি সিলেট জেলার তথ্য বলছে, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। সড়ক ও সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, বন্যায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এদিকে, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঘরে ফেরা মানুষজন পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি। বন্যায় বিধ্বস্ত ঘর মেরামত, বিশুদ্ধ পানির সংকট ও রান্তা-ঘাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলের কষ্টে আছেন তারা। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণের সংকটও রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

Please Share This Post in Your Social Media

সিলেটে বন্যার আরও উন্নতি, ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ

Update Time : ০৭:০৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

সিলেটের বন্যাকবলিত সিলেট সিটি করর্পোরেশনসহ ১৩টি উপজেলায় বাড়িঘর ও আঙিনা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে বন্যাদুর্গতরা এখন ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠছে পুরো এলাকাজুড়ে। রাস্তাঘাট, মৎস্য ও কৃষি খাতে ৭৭৯ কোটি ৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। পানি কমে যাওয়ায় ভোগান্তি কমলেও চারদিকে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। ফলে নতুন করে চিন্তায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় গত ৮ দিনে ডায়রিয়া, আরটিআই, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৮২৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বন্যা ও পরবর্তী সময়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভাগজুড়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৯৪টি মেডিকেল টিম। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মজয় দত্ত জানান, বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেপ্লক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক,স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইউনিয়নভিত্তিক টিমও কাজ করছে। এদিকে, গোয়াইনঘাটে স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। বিভিন্ন ইউনিয়নে গত ২১ জুন থেকে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে কাজ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা জানান, বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ৩ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক সুধীন চন্দ্র দাস জানান, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ ডায়রিয়া, জন্ডিস, চর্মরোগ এবং টাইফয়েডসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে,সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বুধবারের (২৬ জুন) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমেছে। নগরীর ২৫০ কিলোমিটার রাস্তায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলায় আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এলজিইডি সিলেট জেলার তথ্য বলছে, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। সড়ক ও সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, বন্যায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এদিকে, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঘরে ফেরা মানুষজন পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি। বন্যায় বিধ্বস্ত ঘর মেরামত, বিশুদ্ধ পানির সংকট ও রান্তা-ঘাট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলের কষ্টে আছেন তারা। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণের সংকটও রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।