সিলেটে চাকরি না ছেড়েই বিদেশে সরকারি প্রাথমিকের হাজারও শিক্ষক, ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

- Update Time : ১১:৫৫:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ৪৯৩ Time View
সিলেটে ছুটি না নিয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় গেল ২১ মাসে ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এর মধ্যে বেশিরভাগকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সিলেটে গত কয়েক বছর ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কেউবা স্টুডেন্ট ভিসা, কেউবা ওয়ার্ক পারমিট আবার কেউ কেউ পরিবারের সাথে পাড়ি দিচ্ছেন ইউরোপ- আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। চাকরি থেকে অব্যাহতি না নিয়ে কেবল ছুটি নিয়েই তারা চলে গেছেন বিদেশে। এতে করে স্কুলগুলোতে দেখা দিয়েছে শিক্ষক শূণ্যতা। ব্যহত হচ্ছে পাঠদান।
সূত্র জানায়, গেল প্রায় ৫ বছরে ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় পারিবারিক ও কাজের ভিসায় সিলেটের কয়েক হাজার মানুষ পাড়ি জমান। বিশেষ করে গত ২-৩ বছরে বিপুল সংখ্যক লোক ভ্রমণ ভিসায় পরিবার নিয়ে কানাডায় যান। ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে সেখানে ‘অ্যাসাইলাম’র আবেদন করে থেকে যান। এছাড়া যুক্তরাজ্যে কেয়ার গিভারসহ বিভিন্ন ধরণের কাজের ভিসায় পরিবার নিয়ে অনেকে।এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ছিলেন। যারা ভ্রমণ বা কাজের ভিসায় ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবারের সাথে গিয়ে দেশে আর ফিরেননি। যাওয়ার সময়ও তারা কর্মস্থল থেকে ছুটি নেননি। কেউ কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদী ছুটি নিয়ে গোপনে বিদেশ চলে যান। এরপর মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকেন।এদিকে, ৬০ দিনের বেশি কর্মস্থলে যারা অনুপস্থিত তাদের ব্যাপারে তদন্তে নেমে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অনেক শিক্ষকের বিদেশ পাড়ি জমানোর তথ্য পায়।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায, গত পাঁচ বছরে সিলেট বিভাগে এভাবে ছুটি ছাড়াই সহস্রাধিক শিক্ষক বিদেশ চলে গেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আর ২৩ জনের মামলা চলমান রয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া মামলার অভিযুক্তদের বেশিরভাগকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষা অফিসের ২১ মাসের তথ্য অনুযায়ী ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষক রয়েছেন প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ ও বিয়ানীবাজারে। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলার ২৪ জন ও বিয়ানীবাজার উপজেলার ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়া অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে সিলেট সদরের ১৬ জন, বালাগঞ্জের ১১ জন, ফেঞ্চুগঞ্জের ৪ জন, গোলাপগঞ্জের ১২ জন, জকিগঞ্জের ১৬ জন, কানাইঘাটের ৭ জন, জৈন্তাপুরের ৪ জন, গোয়াইনঘাটের ১০ জন, কোম্পানীগঞ্জের ১ জন, দক্ষিণ সুরমার ১৮ জন ও ওসমানীনগরের ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাকরি থেকে ইস্তফা না দিয়ে শিক্ষকরা বিদেশ পাড়ি জমানোর কারণে অনেক স্কুলে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। পদশূণ্য না হওয়ায় এসব পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্কুলে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।এ সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাখাওয়াত এরশেদ জানান, যারা ছুটি ছাড়া ৬০ দিনের অধিক কর্মস্লেস্থ অনুপস্থিত তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। ২০২৪-২৫ সালে এরকম অভিযোগে ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০টি নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলো চলমান আছে। বিভাগীয় মামলায় অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের চাকুরিচ্যূত করা হলেও জরিমানার কোন বিধান নেই। তিনি আরও জানান, বর্তমানে সিলেট জেলায় প্রধান শিক্ষকের ৭৮৮টি ও সহকারী শিক্ষকের ৭৫০টি পদ শূণ্য রয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়