সিলেটবাসীর দাবির সাথে একমত ডিসিঃ ১৫ দিনের আল্টিমেটাম

- Update Time : ০৮:১১:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
- / ৬৪ Time View
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের কাছে বিভিন্ন দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেছেন সিলেটবাসী।
রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে এক ঘণ্টার প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এসময় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “আমরা আমাদের দাবিগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে দিয়েছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো পূরণে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, তা জানাতে হবে। যদি ১৫ দিনের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার প্রধানকে (প্রধান উপদেষ্টা) অনুরোধ করবো, সড়ক পথে একবার সিলেটে আসুন। উনি তখন নিজেই বুঝতে পারবেন—সিলেটের মানুষ কতটা দুর্ভোগে আছে।”
স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, “যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। গত ৫-৭ বছর যাবৎ যোগাযোগ খাতে তেমন কোনো কাজ হয়নি, এজন্য মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা। তবে আমি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি, কাজ শুরু হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অভ্যন্তরীণ বিমানের সকালে-বিকালে ভাড়ার তারতম্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে শিগগির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসবো। পাশাপাশি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দুর্ভোগ লাঘবে অন্তত একটি বিশেষ ট্রেন চালু করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।”
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আরিফুল হক চৌধুরী জানান, “ডিসি মহোদয় আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আজই স্মারকলিপিটি সরকার প্রধানের কাছে পাঠাবেন। ইনশাআল্লাহ, শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সিলেট শহরের দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ রেখে এক ঘণ্টার শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়।
সড়ক, রেল, আকাশ যোগাযোগের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও পানি সংকট নিরসনসহ বিভিন্ন দাবিতে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন সিলেটের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলমত নির্বিশেষে সবাই ব্যানার- ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়ে সিলেটের প্রতি দীর্ঘদিনের বৈষম্যের প্রতিবাদ জানান।
এদিকে,শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর কুমারপাড়াস্থ তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- ‘সিলেটের প্রতি কেন্দ্রীয়ভাবে যে বৈষম্য চলছে, তা আর সহ্য করা যায় না। আওয়ামী লীগের টানা ১৫-১৭ বছরের শাসনামল পার হয়ে গেলেও সিলেটের প্রতি ন্যায্য উন্নয়ন বরাদ্দ হয়নি। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সেই একই পথে হাঁটছে। এই অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।’ এরই অংশ হিসেবেসাবেক মেযর আরিফুর হক সিলেেটের জনগনকে নিয়ে কর্মসূচী পালন করেন। এসময় তিন বলেন , মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেটবাসী। সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের ন্যায্য প্রাপ্যতা আজও নিশ্চিত হয়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি—অর্থাৎ নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর ন্যায্য অধিকার থেকে সিলেটবাসী বারবার বঞ্চিত হচ্ছে।তিনি বলেন, সমগ্র সিলেটের সড়ক ব্যবস্থা অসহনীয়ভাবে হুমকির মুখে। সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ থমকে আছে। শুধুমাত্র মহাসড়ক নয়, সিলেট শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোরও বেহাল অবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সিলেটে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে আম্বরখানা সড়কের তীব্র যানজট সিলেটবাসী সম্পর্কে বহিরাগতদের প্রত্যাশা অনেকাংশে ম্লান করে দেয়। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তারও বেহাল দশা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে পড়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালে যাত্রা শুরুর পর আজ পর্যন্ত সেই মান্ধাতা আমলের নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন। ফলে সিলেটবাসী তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ঘন ঘন দুর্ঘটনা, টাকার বিনিময়ে অনির্দিষ্ট স্থানে ট্রেন থামানো, দালালের কারণে টিকিট না পাওয়া, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়াসহ নানা সমস্যা এখন সিলেটবাসীর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেট-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেন সংযোজনের কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।
এ সময় আরিফুল হক প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেন।তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দেশের মাটিতে পদার্পণের পর নানা ভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। বিমানভাড়ায় যাত্রীরা নাজেহাল হচ্ছেন। এ সময় আরিফ সিলেটের প্রবাসীদের দাবিগুলো তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম, সিলেট-কক্সবাজার রুটে বিমান চালুর দাবি জানান।
আরিফ বলেন, ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট শহর পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়, কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্পটি বন্যাকবলিত অন্য চারটি বিভাগে বাস্তবায়ন করলেও অজ্ঞাত কারণে সিলেট বিভাগে তা বাস্তবায়ন হয়নি।সিলেটের মানুষ বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে আরিফ বলেন, “সিলেটে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট, সেখানে সিলেট বিভাগে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।” ফলে প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটে।
এ সময় তিনি চাহিদা অনুপাতে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।সিলেটের আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “সিলেট বাংলাদেশের গ্যাস ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সিলেটের অনেকগুলো গ্যাসক্ষেত্র জাতীয় গ্রিডকে সমৃদ্ধ করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেটের গ্যাস উৎপাদন সাত গুণ বৃদ্ধি পাবে।” কিন্তু পরিতাপের বিষয়—সিলেটবাসী আবাসিক ও অনাবাসিক গ্যাস সংযোগের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
“সিলেটে গ্যাস থাকবে, আর সিলেটের লোকজন গ্যাস পাবে না—তা হবে না।”
যেখানে খনিজসম্পদ উৎপাদন হচ্ছে, সেই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আরিফ বলেন, “আমাদের সঙ্গে টালবাহানা চলবে না, গ্যাস সংযোগ দিতে হবে; অন্যথায় আন্দোলন গড়ে তুলবো।”সিলেটের শিক্ষা ক্ষেত্রও বৈষম্যের শিকার জানিয়ে তিনি বলেন, “সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষকের ৫২৬টি পদ শূন্য।”
তিনি বলেন, “প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণসহ সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মানসম্মত করে গড়ে তুলতে হবে।”বাজেটের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি প্রশ্ন করেন, “সিলেটের সঙ্গে এটা কেমন বৈষম্য?”প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিভিন্ন দাবি-সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান তারা।সমাবেশে যোগ দেন সিলেটের বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দলমত নির্বিশেষে সবাই সিলেটের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যনারা, ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হন।