ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১১:১৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • / ৪৩ Time View

প্রায় আড়াই দশক পর যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সরাসরি বৈঠকের প্রাক্কালে সিরিয়ার ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মঙ্গলবার (১৪ মে) এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক যুগের সূচনা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, আর তার অংশ হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত।

পরদিন বুধবার রিয়াদে সৌদি নেতৃত্বাধীন সম্মেলনে তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারারের সঙ্গে ঐতিহাসিক এক বৈঠকে মিলিত হন।

ট্রাম্প জানান, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, এ সপ্তাহের শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তুরস্কে সিরিয়ার নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ বিষয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে আমার আলোচনায় তারা একমত পোষণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা আছে। আমি সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেব যেন তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো একসময় জরুরি ছিল, কারণ সেগুলো বাশার আল–আসাদের সরকারের অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে সিরীয় জনগণের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করার।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সিরীয় জনগণকে শুভকামনা জানাই। সৌদি আরবের মতো তারাও যেন নিজস্ব পথে এগিয়ে গিয়ে কিছু অসাধারণ অর্জন করতে পারে। আমরা একসঙ্গে অনেক কিছু করেছি, কিন্তু এটি কেবল শুরু। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের জন্য একটি নতুন উজ্জ্বল দিনের সূচনা ঘটছে।’

হোয়াইট হাউজের তরফে আরও জানানো হয়, ট্রাম্প সিরিয়ার নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছেন—দেশটি যেন ফিলিস্তিনি কিছু গোষ্ঠীকে, যাদের যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে, দেশত্যাগে বাধ্য করে। একই সঙ্গে সিরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষিত আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষরের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আইএস সংশ্লিষ্ট বন্দিশিবিরগুলোর দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।

এই ঘোষণার পর সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে আনন্দ ও উৎসবের চিত্র ধরা পড়ে। আরব দেশগুলোর মধ্যে এই পদক্ষেপ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, এই বৈঠক এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

এদিকে, ট্রাম্প বর্তমানে চার দিনের উপসাগরীয় সফরে রয়েছেন। তার সফরসূচিতে রয়েছে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক, যেখানে কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।

সফরের অংশ হিসেবে সৌদি আরব ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এবং ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে। সফরের শেষ দিন ওয়াশিংটন ফেরার আগে ট্রাম্প আবুধাবি হয়ে যেতে পারেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তুরস্কে একটি সম্ভাব্য ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

আজ সৌদিতে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-সারার সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে, এই বৈঠকে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় সিরিয়া-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপন নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করছে লন্ডন টাইমস।

Please Share This Post in Your Social Media

সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ১১:১৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

প্রায় আড়াই দশক পর যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সরাসরি বৈঠকের প্রাক্কালে সিরিয়ার ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মঙ্গলবার (১৪ মে) এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক যুগের সূচনা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, আর তার অংশ হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত।

পরদিন বুধবার রিয়াদে সৌদি নেতৃত্বাধীন সম্মেলনে তিনি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারারের সঙ্গে ঐতিহাসিক এক বৈঠকে মিলিত হন।

ট্রাম্প জানান, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, এ সপ্তাহের শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তুরস্কে সিরিয়ার নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ বিষয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে আমার আলোচনায় তারা একমত পোষণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা আছে। আমি সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেব যেন তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো একসময় জরুরি ছিল, কারণ সেগুলো বাশার আল–আসাদের সরকারের অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এখন সময় এসেছে সিরীয় জনগণের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করার।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সিরীয় জনগণকে শুভকামনা জানাই। সৌদি আরবের মতো তারাও যেন নিজস্ব পথে এগিয়ে গিয়ে কিছু অসাধারণ অর্জন করতে পারে। আমরা একসঙ্গে অনেক কিছু করেছি, কিন্তু এটি কেবল শুরু। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের জন্য একটি নতুন উজ্জ্বল দিনের সূচনা ঘটছে।’

হোয়াইট হাউজের তরফে আরও জানানো হয়, ট্রাম্প সিরিয়ার নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছেন—দেশটি যেন ফিলিস্তিনি কিছু গোষ্ঠীকে, যাদের যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে, দেশত্যাগে বাধ্য করে। একই সঙ্গে সিরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষিত আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষরের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আইএস সংশ্লিষ্ট বন্দিশিবিরগুলোর দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।

এই ঘোষণার পর সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে আনন্দ ও উৎসবের চিত্র ধরা পড়ে। আরব দেশগুলোর মধ্যে এই পদক্ষেপ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, এই বৈঠক এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

এদিকে, ট্রাম্প বর্তমানে চার দিনের উপসাগরীয় সফরে রয়েছেন। তার সফরসূচিতে রয়েছে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক, যেখানে কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।

সফরের অংশ হিসেবে সৌদি আরব ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এবং ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে। সফরের শেষ দিন ওয়াশিংটন ফেরার আগে ট্রাম্প আবুধাবি হয়ে যেতে পারেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তুরস্কে একটি সম্ভাব্য ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

আজ সৌদিতে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-সারার সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে, এই বৈঠকে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় সিরিয়া-ইসরায়েল সম্পর্ক স্থাপন নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করছে লন্ডন টাইমস।