ঢাকা ০৩:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সিঙ্গাপুরে বসে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে হাসিনার দোসর কুখ্যাত মাফিয়া মিজান রূপগঞ্জের আলোচিত প্রধান শিক্ষক হরিকান্তকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন মিশরে ক্লিওপেট্রা আমলের সমুদ্রবন্দরের সন্ধান রিসালাত ইসলাম সজীব দিনাজপুরের গর্ব, ভবিষ্যতের রোল মডেল বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মুখ্য অঞ্চলের ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের ব্যবসায়ী উন্নয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত চুরির অভিযোগে কুকুর দিয়ে যুবককে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ৩ প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ ঘোষণার একবছর আরডিজেএ’র সভাপতি বাতেন বিপ্লব, সম্পাদক ইমন রূপগঞ্জে আলোচিত মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের রহস্য উদ্ঘাটন ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইস্পাত কঠিন ঐক্য ধরে রাখুন: তারেক রহমান
৪১% ট্যারিফ বৃদ্ধিতে রপ্তানিকারকদের মধ্যে অসন্তোষ

সিঙ্গাপুরে বসে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে হাসিনার দোসর কুখ্যাত মাফিয়া মিজান

আরিফুল হক নভেল
  • Update Time : ০২:১১:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১২৫ Time View

নিষিদ্ধ ঘোষিত আ.লীগ নেতার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তেল মাফিয়া সিন্ডিকেট। বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যান্টা ওশান কনস্ট্রাকশন সম্প্রতি ডিজেল সাপ্লাইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছে পোর্টল্যান্ড গ্রুপের অনুকূলে।

কার হুকুমে বা মদদে কুখ্যাত মাফিয়া স্বৈরাচার ডিজেল সরবরাহের কাজটি বাগিয়ে নিল, তা এখন আলোচনায় এসেছে। ফ্যাসিষ্ট হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আ.লীগ নেতা প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, ছাগলনাইয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং কুখ্যাত মাফিয়া চক্রের অন্যতম নেতা মিজানুর রহমান মজুমদার।

বাংলাদেশের জ্বালানি ব্যবসার মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। বিপিসি, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি তেল সিন্ডিকেট ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর কিছুদিন স্তব্ধ থাকলেও দ্রুতই নতুন রূপে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, বিদেশি জাহাজ থেকে চোরাই পথে সংগৃহীত ডিজেল সাগরপাড়ে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নতুন করে গড়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট। নেতৃত্বে রয়েছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী মিজানুর রহমান মজুমদার।

বর্তমানে তার দুই ভাই দেশে থেকে পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সিঙ্গাপুরে বসে মজুমদার সার্বক্ষণিক চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। অথচ একাধিকবার গোয়েন্দা সংস্থা পোর্টল্যান্ড গ্রুপের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রিপোর্ট দিলেও, চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের একক সিদ্ধান্তে প্যান্টা ওশান কনস্ট্রাকশনের নামে ২ লাখ লিটার ডিজেল সাপ্লাইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব জনাব ওমর ফারুক এই প্রতিবেদককে বলেন, বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছে জাপানের জাইকা কোম্পানী। তারাই জ্বালানী তেল সরবরাহের কাজটি মিজানুর রহমানের প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। এখানে বন্দর চেয়ারম্যানের কোন হাত নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অক্টোবর মাসে শুরু হতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের মূল কাজ। এই প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করছে জাপানের প্যান্টা ওশান ও টোয়া কর্পোরেশন। প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেট ডিজেল সাপ্লাই ব্যবসা দখলে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠছে।

সিঙ্গাপুরে বসে ষড়যন্ত্র: মাতারবাড়ি বন্দর নিয়ন্ত্রণের পাঁয়তারা : বিশেষ সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার পতনের পর বিপুল অর্থপাচার করে সিঙ্গাপুরে পালানো মিজানুর রহমান মজুমদার এখন বিদেশ থেকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। অভিযোগ আছে, তিনি প্যান্টা ওশানের স্থানীয় কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিককে ম্যানেজ করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ দখলের পরিকল্পনা করছেন।

চোরাই তেল বাণিজ্য ও কোস্টগার্ডে ধরা পড়া : মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন পোর্টল্যান্ড লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে চোরাই তেল ব্যবসায় জড়িত। ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ লাখ ৫৬ হাজার লিটার চোরাই তেল পাচারের সময় কোস্টগার্ড দুইটি জাহাজ আটক করে একটি পানামার পতাকাবাহী এমটি ডলফিন ১৯, অন্যটি ছিল পোর্টল্যান্ডের তেল সরবরাহকারী বাংলাদেশি জাহাজ ওটি ইউনিয়ন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিদেশি জাহাজে তেল সরবরাহ করছিল তারা। কাস্টমস ও কোস্টগার্ড জানায়, এতে সরকারের অন্তত ৪ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়।

বিপিসির তথ্যমতে, গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে এক ফোঁটা তেলও সংগ্রহ করেনি, অথচ একই সময়ে জাহাজে জাহাজে কোটি কোটি টাকার তেল বিক্রি করেছে। বৈধ বাণিজ্যের আড়ালে মূল ভরসা ছিল চোরাই ব্যবসা।

ছাত্র আন্দোলনে হত্যার দায় ও মাফিয়া সাম্রাজ্য : শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, রাজনৈতিক সহিংসতাতেও কুখ্যাত মিজান কম যাননা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তার নেতৃত্বে অন্তত ১২ জনকে খুন এবং শতাধিক মানুষকে আহত করার অভিযোগ রয়েছে। ফেনীতে ছাত্র-জনতার ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একসময় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।

আওয়ামী সরকারের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক মেয়র আজম নাসির উদ্দীনসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে মিলে গত এক দশকে বন্দরটেন্ডার, তেল ব্যবসা ও মেরিন সাইট থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি : শুধু চোরাই তেল ব্যবসা নয়, রাষ্ট্রের কৌশলগত স্থাপনা চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে মিজানুর রহমানের সক্রিয়তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের আশঙ্কা, শেখ হাসিনার পতনের পরও বিদেশে পালিয়ে থাকা সহযোগীরা যদি আবারও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত দখল করে, তবে দেশে নতুন করে অরাজকতা তৈরি হতে পারে।

চোরাই তেল পাচার, বন্দরের ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপত্য, কোটি কোটি টাকা পাচার, ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকান্ড, আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব সবকিছু মিলিয়ে মিজানুর রহমান মজুমদারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য। শেখ হাসিনার পতনের পরও বিদেশে বসে এ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় খাতের জন্য এখনো তিনি বড় হুমকি হয়ে আছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের অসংখ্য নিরীহ ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর স্পর্ধাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান স্মাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধির কারণে বন্দর ব্যবহারকারীদের শিল্প মালিক ব্যবসায়ীরা চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন। দেশের ৮০ ভাগ  তৈরী পোষাক রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মাত্রাতিরিক্ত মাশুল বাড়ানোর ফলে দেশের প্রধান রপ্তানিমূখী শিল্প মারাত্মক ঝুকির মধ্যে পড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তৈরী পোষাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বি জিএমই এ পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী।

তবে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, সিস্টেম আপগ্রেড করতে কিছুটা সময় লাগছে। মাশুল আগের চেয়ে গড়ে ৩৫-৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ হার কিছুটা এদিক-সেদিক হতে পারে।

তিনি বলেন, ৪০ বছর যাবত কোন ট্যারিফ বাড়েনি। বন্দর খরচের জন্য এই বৃদ্ধি তেমন কোন ক্ষতি ডেকে আনবে না। তবে গতকাল শনিবার বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে এক বৈঠকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে এক মাসের সময় নিয়েছেন উপদেষ্টা মহোদয়।

Please Share This Post in Your Social Media

৪১% ট্যারিফ বৃদ্ধিতে রপ্তানিকারকদের মধ্যে অসন্তোষ

সিঙ্গাপুরে বসে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ন্ত্রণ করছে হাসিনার দোসর কুখ্যাত মাফিয়া মিজান

আরিফুল হক নভেল
Update Time : ০২:১১:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিষিদ্ধ ঘোষিত আ.লীগ নেতার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তেল মাফিয়া সিন্ডিকেট। বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্যান্টা ওশান কনস্ট্রাকশন সম্প্রতি ডিজেল সাপ্লাইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছে পোর্টল্যান্ড গ্রুপের অনুকূলে।

কার হুকুমে বা মদদে কুখ্যাত মাফিয়া স্বৈরাচার ডিজেল সরবরাহের কাজটি বাগিয়ে নিল, তা এখন আলোচনায় এসেছে। ফ্যাসিষ্ট হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আ.লীগ নেতা প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, ছাগলনাইয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং কুখ্যাত মাফিয়া চক্রের অন্যতম নেতা মিজানুর রহমান মজুমদার।

বাংলাদেশের জ্বালানি ব্যবসার মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। বিপিসি, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি তেল সিন্ডিকেট ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর কিছুদিন স্তব্ধ থাকলেও দ্রুতই নতুন রূপে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, বিদেশি জাহাজ থেকে চোরাই পথে সংগৃহীত ডিজেল সাগরপাড়ে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নতুন করে গড়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট। নেতৃত্বে রয়েছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী মিজানুর রহমান মজুমদার।

বর্তমানে তার দুই ভাই দেশে থেকে পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সিঙ্গাপুরে বসে মজুমদার সার্বক্ষণিক চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। অথচ একাধিকবার গোয়েন্দা সংস্থা পোর্টল্যান্ড গ্রুপের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রিপোর্ট দিলেও, চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামানের একক সিদ্ধান্তে প্যান্টা ওশান কনস্ট্রাকশনের নামে ২ লাখ লিটার ডিজেল সাপ্লাইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব জনাব ওমর ফারুক এই প্রতিবেদককে বলেন, বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করছে জাপানের জাইকা কোম্পানী। তারাই জ্বালানী তেল সরবরাহের কাজটি মিজানুর রহমানের প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। এখানে বন্দর চেয়ারম্যানের কোন হাত নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অক্টোবর মাসে শুরু হতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের মূল কাজ। এই প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করছে জাপানের প্যান্টা ওশান ও টোয়া কর্পোরেশন। প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেট ডিজেল সাপ্লাই ব্যবসা দখলে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠছে।

সিঙ্গাপুরে বসে ষড়যন্ত্র: মাতারবাড়ি বন্দর নিয়ন্ত্রণের পাঁয়তারা : বিশেষ সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার পতনের পর বিপুল অর্থপাচার করে সিঙ্গাপুরে পালানো মিজানুর রহমান মজুমদার এখন বিদেশ থেকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। অভিযোগ আছে, তিনি প্যান্টা ওশানের স্থানীয় কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিককে ম্যানেজ করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ দখলের পরিকল্পনা করছেন।

চোরাই তেল বাণিজ্য ও কোস্টগার্ডে ধরা পড়া : মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন পোর্টল্যান্ড লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে চোরাই তেল ব্যবসায় জড়িত। ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে ৩ লাখ ৫৬ হাজার লিটার চোরাই তেল পাচারের সময় কোস্টগার্ড দুইটি জাহাজ আটক করে একটি পানামার পতাকাবাহী এমটি ডলফিন ১৯, অন্যটি ছিল পোর্টল্যান্ডের তেল সরবরাহকারী বাংলাদেশি জাহাজ ওটি ইউনিয়ন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিদেশি জাহাজে তেল সরবরাহ করছিল তারা। কাস্টমস ও কোস্টগার্ড জানায়, এতে সরকারের অন্তত ৪ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়।

বিপিসির তথ্যমতে, গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে এক ফোঁটা তেলও সংগ্রহ করেনি, অথচ একই সময়ে জাহাজে জাহাজে কোটি কোটি টাকার তেল বিক্রি করেছে। বৈধ বাণিজ্যের আড়ালে মূল ভরসা ছিল চোরাই ব্যবসা।

ছাত্র আন্দোলনে হত্যার দায় ও মাফিয়া সাম্রাজ্য : শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, রাজনৈতিক সহিংসতাতেও কুখ্যাত মিজান কম যাননা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তার নেতৃত্বে অন্তত ১২ জনকে খুন এবং শতাধিক মানুষকে আহত করার অভিযোগ রয়েছে। ফেনীতে ছাত্র-জনতার ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একসময় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।

আওয়ামী সরকারের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক মেয়র আজম নাসির উদ্দীনসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে মিলে গত এক দশকে বন্দরটেন্ডার, তেল ব্যবসা ও মেরিন সাইট থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি : শুধু চোরাই তেল ব্যবসা নয়, রাষ্ট্রের কৌশলগত স্থাপনা চট্টগ্রাম ও মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে মিজানুর রহমানের সক্রিয়তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের আশঙ্কা, শেখ হাসিনার পতনের পরও বিদেশে পালিয়ে থাকা সহযোগীরা যদি আবারও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত দখল করে, তবে দেশে নতুন করে অরাজকতা তৈরি হতে পারে।

চোরাই তেল পাচার, বন্দরের ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপত্য, কোটি কোটি টাকা পাচার, ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকান্ড, আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব সবকিছু মিলিয়ে মিজানুর রহমান মজুমদারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য। শেখ হাসিনার পতনের পরও বিদেশে বসে এ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় খাতের জন্য এখনো তিনি বড় হুমকি হয়ে আছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের অসংখ্য নিরীহ ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর স্পর্ধাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান স্মাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধির কারণে বন্দর ব্যবহারকারীদের শিল্প মালিক ব্যবসায়ীরা চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন। দেশের ৮০ ভাগ  তৈরী পোষাক রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মাত্রাতিরিক্ত মাশুল বাড়ানোর ফলে দেশের প্রধান রপ্তানিমূখী শিল্প মারাত্মক ঝুকির মধ্যে পড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তৈরী পোষাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বি জিএমই এ পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী।

তবে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, সিস্টেম আপগ্রেড করতে কিছুটা সময় লাগছে। মাশুল আগের চেয়ে গড়ে ৩৫-৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ হার কিছুটা এদিক-সেদিক হতে পারে।

তিনি বলেন, ৪০ বছর যাবত কোন ট্যারিফ বাড়েনি। বন্দর খরচের জন্য এই বৃদ্ধি তেমন কোন ক্ষতি ডেকে আনবে না। তবে গতকাল শনিবার বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে এক বৈঠকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে এক মাসের সময় নিয়েছেন উপদেষ্টা মহোদয়।