ঢাকা ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সালমান শাহ’র সঙ্গে প্রেম নিয়ে মুখ খুললেন শাবনূর

বিনোদন ডেস্ক
  • Update Time : ১২:৩১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৩৫০ Time View

সালমান ও শাবনূর

ঢালিউডের ক্ষণজন্মা নক্ষত্র সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও আজও কোটি ভক্তের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। চলচ্চিত্র জীবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল জুটি ছিলেন সালমান শাহ ও শাবনূর। একসঙ্গে এই জুটি পর্দায় হাজির হলেই দর্শকের কাছে তৈরি হতো এক বিশেষ আকর্ষণ। তাদের রসায়ন ঢাকাই সিনেমায় কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়েছে।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন শাবনূর। গেল সোমবার আদালতের এক আদেশের পর সালমানের মৃত্যুর প্রসঙ্গ আবার সামনে এসেছে। আদেশটি ছিল হত্যা মামলা করার। এতদিন যেসব তদন্ত হয়েছে সেগুলো ছিল রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা ও হত্যা সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে। মঙ্গলবার রাজধানীর রমনা থানাতেই অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এসবের মাঝে সালমান শাহ ও শাবনূরকে নিয়ে আলোচনা ও গুজব সৃষ্টি হয়। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন শাবনূর।

সালমান শাহকে নিয়ে খুলে বললেন মনের কথা। শাবনূর বলেন, ‘সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশে শুধু বলব, এসবের কোনো কথাই সত্য নয়। সালমানের কোনো বোন ছিল না, তাই আমাকে ছোট বোনের মতোই দেখতেন। আমাকে “পিচ্চি” বলে ডাকতেন। তাঁর মা-বাবাও আমাকে খুব আদর করতেন, মেয়ের মতোই ভালোবাসতেন।’

নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও সালমানকে ভাইয়ের মতোই দেখতাম। তবে আমাদের মধ্যে ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। সালমান নাচে একটু দুর্বল ছিল। প্রায়ই বলতেন, “আমাকে একটু নাচ দেখিয়ে দে তো।” আমি হাসতে হাসতে দেখিয়ে দিতাম।’

দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভাইবোনের মতো ছিল বলে জানান সালমান শাহ’র সেই সময়ের সহকারী মুনসুর আলী । বলেন, ‘আমি সাড়ে চার বছর সালমান ভাইয়ের সঙ্গে ছিলাম। তাঁদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে কিছু জানি না। বরং ভাই সব নায়িকাকেই সম্মান করতেন। শাবনূরকে প্রথম দেখেই বলেছিলেন, “আমার তো কোনো বোন নেই, তুমি আমার ছোট বোনের মতো।”

এফডিসিতে সালমানের সঙ্গে শাবনূরের প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিন মৌসুমীর সঙ্গে সালমানের শুটিং চলছিল। পরবর্তী সময়ে ‘তুমি আমার’ ছবিতে সালমানের সঙ্গে কাজের সুযোগ হয় শাবনূরের। সেই ছবির সাফল্যের পর দর্শকেরা তাঁদের নতুন জুটিকে ভালোবাসতে শুরু করেন।

শাবনূর বলেন, ‘আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল অসাধারণ, একই দৃশ্যে আমরা একে অন্যের চোখের ইশারা বুঝতে পারতাম।’

সালমান–শাবনূরের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল—এমন গুঞ্জন দুজনের কাজের শুরু থেকেই প্রচলিত। শাবনূরের ভাষায়, ‘সালমানকে আমি ভাই ছাড়া অন্য কোনো চোখে দেখিনি। কিছু মানুষ আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প বানিয়েছে। কেউ কেউ সেটা দিয়ে ব্যবসাও করেছে। এতে আমার কষ্ট হয়েছে; কারণ, আমি আমার ক্যারিয়ারটা অনেক কষ্ট করে গড়েছি।’

জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা সালমানের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার মুহূর্তটি- জানিয়ে শাবনূর বলেন, ‘হঠাৎ কেউ একজন জানাল, সালমান মারা গেছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। ভেবেছিলাম কেউ মজা করছে। পরে নিশ্চিত হয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। এরপর এফডিসিতে গিয়ে ওকে শেষবার দেখি।’

শাবনূর বলেন, ‘সালমান যদি বেঁচে থাকত, বাংলা চলচ্চিত্রের চেহারাটা আজ ভিন্ন হতো। যেমন উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটি এখনো কিংবদন্তি, আমরা হয়তো তেমনভাবেই জায়গা করে নিতে পারতাম।’ শেষে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দিন সালমানের সঙ্গে দেখা হতো, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম—সালমান, তুমি কেন মরে গেলে? তোমার কী কষ্ট ছিল? এত সাফল্য, এত ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও কেন তুমি চলে গেলে?’

সালমান-শাবনূর অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১৪টি। ছবিগুলো হচ্ছে ‘তুমি আমার’, ‘বিক্ষোভ’, ‘সুজন সখি’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’।

Please Share This Post in Your Social Media

সালমান শাহ’র সঙ্গে প্রেম নিয়ে মুখ খুললেন শাবনূর

বিনোদন ডেস্ক
Update Time : ১২:৩১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

ঢালিউডের ক্ষণজন্মা নক্ষত্র সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও আজও কোটি ভক্তের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। চলচ্চিত্র জীবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল জুটি ছিলেন সালমান শাহ ও শাবনূর। একসঙ্গে এই জুটি পর্দায় হাজির হলেই দর্শকের কাছে তৈরি হতো এক বিশেষ আকর্ষণ। তাদের রসায়ন ঢাকাই সিনেমায় কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়েছে।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন শাবনূর। গেল সোমবার আদালতের এক আদেশের পর সালমানের মৃত্যুর প্রসঙ্গ আবার সামনে এসেছে। আদেশটি ছিল হত্যা মামলা করার। এতদিন যেসব তদন্ত হয়েছে সেগুলো ছিল রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা ও হত্যা সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে। মঙ্গলবার রাজধানীর রমনা থানাতেই অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এসবের মাঝে সালমান শাহ ও শাবনূরকে নিয়ে আলোচনা ও গুজব সৃষ্টি হয়। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন শাবনূর।

সালমান শাহকে নিয়ে খুলে বললেন মনের কথা। শাবনূর বলেন, ‘সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশে শুধু বলব, এসবের কোনো কথাই সত্য নয়। সালমানের কোনো বোন ছিল না, তাই আমাকে ছোট বোনের মতোই দেখতেন। আমাকে “পিচ্চি” বলে ডাকতেন। তাঁর মা-বাবাও আমাকে খুব আদর করতেন, মেয়ের মতোই ভালোবাসতেন।’

নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও সালমানকে ভাইয়ের মতোই দেখতাম। তবে আমাদের মধ্যে ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। সালমান নাচে একটু দুর্বল ছিল। প্রায়ই বলতেন, “আমাকে একটু নাচ দেখিয়ে দে তো।” আমি হাসতে হাসতে দেখিয়ে দিতাম।’

দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভাইবোনের মতো ছিল বলে জানান সালমান শাহ’র সেই সময়ের সহকারী মুনসুর আলী । বলেন, ‘আমি সাড়ে চার বছর সালমান ভাইয়ের সঙ্গে ছিলাম। তাঁদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে কিছু জানি না। বরং ভাই সব নায়িকাকেই সম্মান করতেন। শাবনূরকে প্রথম দেখেই বলেছিলেন, “আমার তো কোনো বোন নেই, তুমি আমার ছোট বোনের মতো।”

এফডিসিতে সালমানের সঙ্গে শাবনূরের প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিন মৌসুমীর সঙ্গে সালমানের শুটিং চলছিল। পরবর্তী সময়ে ‘তুমি আমার’ ছবিতে সালমানের সঙ্গে কাজের সুযোগ হয় শাবনূরের। সেই ছবির সাফল্যের পর দর্শকেরা তাঁদের নতুন জুটিকে ভালোবাসতে শুরু করেন।

শাবনূর বলেন, ‘আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল অসাধারণ, একই দৃশ্যে আমরা একে অন্যের চোখের ইশারা বুঝতে পারতাম।’

সালমান–শাবনূরের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল—এমন গুঞ্জন দুজনের কাজের শুরু থেকেই প্রচলিত। শাবনূরের ভাষায়, ‘সালমানকে আমি ভাই ছাড়া অন্য কোনো চোখে দেখিনি। কিছু মানুষ আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প বানিয়েছে। কেউ কেউ সেটা দিয়ে ব্যবসাও করেছে। এতে আমার কষ্ট হয়েছে; কারণ, আমি আমার ক্যারিয়ারটা অনেক কষ্ট করে গড়েছি।’

জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা সালমানের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার মুহূর্তটি- জানিয়ে শাবনূর বলেন, ‘হঠাৎ কেউ একজন জানাল, সালমান মারা গেছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। ভেবেছিলাম কেউ মজা করছে। পরে নিশ্চিত হয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। এরপর এফডিসিতে গিয়ে ওকে শেষবার দেখি।’

শাবনূর বলেন, ‘সালমান যদি বেঁচে থাকত, বাংলা চলচ্চিত্রের চেহারাটা আজ ভিন্ন হতো। যেমন উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটি এখনো কিংবদন্তি, আমরা হয়তো তেমনভাবেই জায়গা করে নিতে পারতাম।’ শেষে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দিন সালমানের সঙ্গে দেখা হতো, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম—সালমান, তুমি কেন মরে গেলে? তোমার কী কষ্ট ছিল? এত সাফল্য, এত ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও কেন তুমি চলে গেলে?’

সালমান-শাবনূর অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১৪টি। ছবিগুলো হচ্ছে ‘তুমি আমার’, ‘বিক্ষোভ’, ‘সুজন সখি’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’।