সামনে অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে : তারেক রহমান
- Update Time : ১০:৩১:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ২৮ Time View
রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত
সামনের দিনগুলো ভালো নয়, অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে এমন মন্তব্য করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ইদানীং বলতে শোনা যায়, ক্ষমতায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলকে দেখা হয়েছে- এবার অমুককে (জামায়াতে ইসলামী) দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন- তাদের তো দেশের মানুষ একাত্তর সালেই দেখেছে।
রোববার (০৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
এতে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন। সকালে দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, আমি গত ৫ আগস্টের পর থেকে বলে আসছি, আমাদের সামনের সময়গুলো কিন্তু খুব ভালো নয়, সামনে অনেক কঠিন সময়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে এই দেশের জনগণ এবং এই ষড়যন্ত্র জনগণকে সাথে নিয়ে রুখে দিতে পারে বিএনপি। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে- গণতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্র। আমরা যদি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, যে কোনো মূল্যে জনগণের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে অবশ্যই অনেক ষড়যন্ত্রকে আমরা রুখে দিতে পারব। কিন্তু ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে পারলেও তারপরেও কিন্তু সামনে অনেক কঠিন সময় বলে শঙ্কার কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা- এই দুটি বিষয় আমাদের এড্রেস করতে হবে। যে কোনো মূল্যে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সেজন্য সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সর্বপ্রথমে আমাদেরকে নজর দিতে হবে, সর্বপ্রথমে আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে- দুর্নীতির লাগাম কীভাবে আমরা টেনে ধরব? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম কীভাবে আমরা টেনে ধরব?
তিনি বলেন, আমরা যদি দুর্নীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে না পারি, তাহলে আমরা যে পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করেছি মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে, দেশের ভবিষ্যৎ সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে, নারী সমাজকে ক্ষমতায়ন করা নিয়ে, দেশের কৃষি ব্যবস্থা প্রত্যেকটি পরিকল্পনা আমাদের বাধাগ্রস্ত হবে, স্লো হয়ে যাবে। যদি আমরা এই দুটি বিষয়ে এড্রেস করতে না পারি, পুরো জাতি এবং দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে। আমরা মনে করি, একমাত্র বিএনপিই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পারবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে পারবে। কারণ- আমরা অতীতে করেছি, ভবিষ্যতে আমরা সুযোগ পেলে এই কাজটি করে দেখাতে পারব ইনশাআল্লাহ। এ সময় বেকার সমস্যা, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়, কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে বিএনপির পরিকল্পনাসমূহে তুলে ধরেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার যেভাবে বিএনপি সম্পর্কে যেসব মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াতো, আমরা ইদানিং লক্ষ্য করছি- কিছু কিছু ব্যক্তি বা দল ঠিক একই সুরে গান গাইছে বা একই সুরে কতগুলো কথা বলার চেষ্টা করছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরও তো দুইজন ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সেই সময় সরকারে ছিলেন। এই দুজন ব্যক্তি পৃথিবীতে আর নেই, দুজনই সিনিয়র মানুষ, দুজনই সিনিয়র রাজনীতিবিদ ছিলেন, তারা গত হয়েছেন। কাজেই যে মানুষ নেই, তাদের সম্পর্কে অবশ্যই খারাপ কথা বলা উচিত নয়। তাদের প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান রেখেই বলতে চাই- সেই দুইজন ব্যক্তির বিএনপি সরকারে শেষদিন পর্যন্ত থাকা যৌক্তিকভাবে দুইটি জিনিস প্রমাণ করে দেয়- এক. তাদের অবশ্যই পূর্ণ কনফিডেন্স ছিল খালেদা জিয়ার উপরে যে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে- সেজন্যই তারা শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন। এখন তাদের দলের অন্য যে যত বড় বড় কথা বলুক না কেন, খালেদা জিয়া শেষ দিন পর্যন্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং দুর্নীতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে-এই আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে ছিল। সেজন্যই তারা শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপি সরকারের সাথে ছিলেন। আমরা অন্য কিছু বলতে চাই না।
তিনি বলেন, তাদের দলের (জামায়াত) কেউ কেউ বলে থাকে যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু অভিযোগ পাওয়া যায় না। স্বৈরাচারের সময় আমরা দেখেছি- কীভাবে আদালতকে ইনফ্লুয়েন্স করা হতো। কিন্তু স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পরে মোটামুটি আমরা বলতে পারি যে, আদালত এখন নিরপেক্ষ- নিরপেক্ষতা আমরা আশা করি। এই সেই নিরপেক্ষ আদালত থেকে আমরা দেখেছি, কারো বিরুদ্ধেই কোনো জিনিস প্রমাণিত হয়নি। এটি ছিল প্রোভাগান্ডা। আমাদেরকে আজকে এই উপসংহারে আসতে হবে যে, একমাত্র বিএনপি পেরেছিল দেশকে দুর্নীতি থেকে বের করে নিয়ে আসতে। ইনশাল্লাহ আগামী দিনেও বিএনপি পারবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ইদানীং বলতে শুনি বা বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে- অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদেরকে তো দেশের মানুষ একাত্তর সালে দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে কীভাবে লাখো মানুষকে হত্যা করেছে, ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজারো হাজারো মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল- এই কথাটি আমাদেরক মনে রাখতে হবে।
ধর্মভিত্তিক একটি দলের জান্নাতের গ্যারেন্টি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি একটি রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তি বা বেশ কিছু বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন জিনিসের কনফার্মেশন দিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন আমি যতটুকু বুঝি, অনেক মুরুব্বি ব্যক্তি আছেন, বুজুর্গ ব্যক্তি আছেন ধর্মীয় বিষয়ে- আমি একজন সাধারণ নরমাল মুসলমান হিসেবে যতটুকু বুঝি- যা আমার না, আমি যদি তা দেবার কথা বলি অর্থাৎ যেটি আমার না, সেটির কমিটমেন্ট যদি করি- তাহলে আমি তার সাথে পাল্লা দিচ্ছি। দোজক-বেহেশত দুনিয়ার সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটার মালিক আল্লাহ, যেটার কথা একমাত্র আল্লাহ তালাই বলতে পারে, সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই- আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি, সেটি হচ্ছে শিরিক। এটি হচ্ছে শিরিকের পর্যায়ে পড়ে।
ছাত্রদলের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, তোমাদের ঘরে ঘরে যেতে হবে এবং বলতে হবে- যারা এসব কথা বলে, তারা শিরিক করছে। আপনি যদি তাদের কথা শুনেন, আপনিও শিরিকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন। যার অধিকার একমাত্র আল্লাহতালার, সেটি একমাত্র আল্লাহর অধিকার। কে কোথায় যাবে? কার ইহকালে কী হবে, পরকালে কী হবে- সেটির ডিসাইড করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। কাজেই যারা এসব কথা বলে, তারা ইনেমে শিরিক করছে। একজন মুসলমান হিসেবে আমি সেটাই বুঝি। এই কথাগুলো তোমাদের পৌঁছে দিতে হবে।
দেশকে গড়তে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একটাই, কীভাবে দেশকে আমাদের গড়তে হবে। এই দেশকে শহীদ জিয়া গড়েছেন, ঠিক একইভাবে পরবর্তীতে নব্বইয়ে স্বৈরাচারের পতনের পরে এই দেশকে আবারো বেগম খালেদা জিয়া গড়েছিলেন। ২০০১ সালের পরে আবারও ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে, দুর্নীতি নিমজ্জিত একটি দেশকে খালেদা জিয়া আবার উপরে উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা প্রয়োজন। আজ সারা দিন আমরা যেগুলো আলোচনা করেছি, সেগুলো যদি আমরা করতে পারি, তাহলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা সম্ভব। আগামীতে দেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা দেশ গড়ব।
তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া-কানাডা কিংবা যুক্তরাষ্ট্র বানাতে চায় না; আমরা চাই একটি স্বাবলম্বী বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশের মানুষের দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবে, শান্তিতে থাকবে। যেখানে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, দুর্নীতির লাগাম ধরতে আমরা সক্ষম হবো- সে রকম একটি বাংলাদেশ চাই।
এ সময় দেশ গড়ার এই পরিকল্পনা সফল করতে ছাত্রদলকে মানুষের ঘরে ঘরে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অনেক সময় লাগবে, কষ্ট হবে; অনেক কঠিন, অনেক শত্রু আছে- যারা আমাদের বাধা দিবে, কিন্তু এই দেশের মানুষকে কেউ বাধা দিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। ইনশআল্লাহ দেশ গড়ার পরিকল্পনার কাজ যখন আমরা শুরু করব বাংলাদেশের মানুষের রায় নিয়ে, তখনও ইনশআল্লাহ কেউ আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। তোমাদের সকলকে যেতে হবে মানুষের দৌড়গোড়ায়, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির জিয়া উদ্দিন হায়দার, আবদুল মজিদ, আমিনুল হক, মীর শাহে আলম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন আলোচকরা।


















































































































































































