আতঙ্কে জাবি শিক্ষার্থীরা
সাভারে চলন্ত বাসে ডাকাতি,ছুরিকাঘাতে আহত ৪

- Update Time : ০১:২০:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১১৪ Time View
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী লেনে একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে অন্তত ৪ জন আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ওয়েলকাম নামক একটি বাসে সাভার থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ডেইরি গেইট পর্যন্ত মাঝামাঝি রাস্তায় এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন মহাসড়কে ডাকাতরা নেমে যায়। এই ঘটনায় আতঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এসময় ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে মো. শামীম হোসাইন নামে এক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি রাজধানীতে একটি বায়িং হাউজে কর্মরত বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
আহত ৪ জনের মধ্যে শামীম হোসেন, হারুন অর রশিদ নামের দুই পোশাকশ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছে। তবে বাকি আহতদের বিস্তারিত পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
আহত হারুন-অর-রশিদ বলেন, উলাইল এলাকার একটি গার্মেন্টসে গিয়েছিলাম। উলাইল স্ট্যান্ড থেকে আমি ওয়েলকাম পরিবহনের একটি গাড়িতে উঠি। মহিলাদের আসনের যে চারটি সিট থাকে সেই সিটে বসেছি। সেখানে আগে থেকেই তিন যাত্রী বসা ছিল। তারা আমাকে জানালার পাশের সিটে বসতে বলেন। তাদের কথামতো জানালার পাশের সিটে বসার প্রায় ৫ মিনিট পরে হঠাৎ করে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। উলাইল থেকে সাভার পার হওয়ার সময় পাশে বসা তিন জন উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তারা যাত্রীদেরসহ আমাকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে আমার মানিব্যাগসহ পকেটে যা ছিল সবই বের করে নেয়। আমার সামনের যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি। পরে রক্ত দেখে বুঝেছি তাকে ছুরিকাঘাত করেছে। রক্ত দেখে আমি আতঙ্কিত হয়। পরে সব যাত্রী আতঙ্কে যার কাছে যা ছিল সব ডাকাতদের দিয়ে দেয়।
ডাকাতি হওয়া এই বাসের পেছনের বাসে আসছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনুপ সরকার দ্বীপ।
তিনি জানান, এই ঘটনা আমাদের জন্য খুবই এলার্মিং। এই রোডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাতায়ত করেন। এখানে পূর্বে শোনা যেত, কেউ হেটে বা রিক্সায় গেলে তারা ছিনতাইয়ের শিকার হতো এখন যদি একটা চলন্ত বাসে এই ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমি যদি ওই বাসে থাকতাম তাহলে আমার আজ কি অবস্থা হতো? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখন আতঙ্ক বেড়ে গেল।
জাবি মেডিকেল সেন্টারে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নিংতম ও ডা. মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা একজন রুগীকে আঘাত মারাত্মক হওয়ায় মেডিকেল সেন্টার নিয়ে আসে। আমরা তাকে আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নয় পাঠিয়ে দিই। রোগীর সাথে শিক্ষার্থীরা কথা বলে জানতে পারে, তার কাছে নগদ দশ হাজার টাকা, আইফোন নিয়ে গেছে। সাথে থাকা ব্যাগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। বুকের ঠিক নিচে পেটে একটা ছুরির আঘাত গুরুতর ছিল। আমাদের প্রটোকলে অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার নিয়ম না থাকলেও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানবতা বিবেচনা করে তাকে অ্যাম্বুলেন্স এর মাধ্যমে এনামে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। রোগীর নাম শামীম। বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি। শ্রীপুর বাড়ি।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পারি সাভার থেকে জাহাঙ্গীরনগর থেকে আসা বাসে এই ডাকাতি হয়। বাসে থাকা প্রায় সকলের জিনিসপত্র নিয়ে যায় ডাকাতদল।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা আরো জানায় এই রোগী ছাড়া আর কেউ আহত হয় নাই তবে সকলকেই আহাজারি করতে দেখা যায়।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাসান মাহবুব বলেন, শামীম নামে ছুরিকাঘাতে আহত একজনকে আনা হয়েছে, তার শরীরের বুকসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শামীম হোসাইন ছাড়াও বাসটিতে থাকা আরও কয়েকজন যাত্রী ডাকাতদের মারধরে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় ডাকাতরা বাসে থাকা সকল যাত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।
হারুন অর রশিদ নামে বাসটিতে থাকা একজন যাত্রী বলেন, বাসটি ঢাকার দিক থেকে সাভারের নবীনগরের দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাসটি সাভার রেডিও কলোনি এলাকা পার হওয়ার পর বাসটিতে থাকা তিন যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে বাসের যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি শুরু করে। প্রথমেই ডাকাতরা বাসের সামনের দিকের একটি সীটে বসে থাকা একজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে। পরে বাসে থাকা সকল যাত্রীর কাছ থেকে যাবতীয় টাকা পয়সা ও মালামাল লুট করে বাস থেকে নেমে যায়।
ওয়েলকাম পরিবহনের একজন প্রতিনিধি গণমাধ্যমকে বলেন, মূলত মহাসড়কের বিপিএটিসি এলাকা থেকে ডাকাতরা বাসে উঠে ডাকাতি করেছে বলে জানতে পেরেছি। বাসটিসহ এর চালক ও হেলপার আশুলিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) অলোক কুমার দে বলেন, ডাকাতি না, এটি একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা। মূলত সাভারের গেন্ডা এলাকা থেকে বাসে ছিনতাইকারীরা উঠেছিল এবং ছিনতাই শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএইচ হল সংলগ্ন গেটের আগেই নেমে যায়। ঘটনাটি সাভার থানা এলাকার হওয়ায় ভুক্তভোগীদের সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়