সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার

- Update Time : ০৫:১৮:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / ৮৬ Time View
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল আটটার দিকে ডিবি পুলিশ তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আটটার কিছুসময় পরে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে আমরা আটক করেছি। তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে এবিএম খায়রুল হক শপথ নেন ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। পরের বছর (২০১১ সাল) ১৭ মে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
এদিকে সম্প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ‘দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর’ উল্লেখ করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানায় সংগঠনটি।
বিচারপতি খায়রুল হককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল
বিচারাঙ্গনে তুমুলভাবে আলোচিত-সমালোচিত এ বিচারপতির বেশ কয়েকটি রায় চরম বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। তিনি নিজে আওয়ামী আমলে নানাভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছিল কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে ডিঙিয়ে।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে ত্রাণ তহবিলের টাকায় নিজের চিকিৎসা করে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। অবসর নেওয়ার কয়েকদিন আগে তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। এতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতের পথ উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতির চূড়ান্ত সুযোগ তৈরি হয়।
রাজনৈতিক একটি বিষয়কে আদালতের আওতাধীন করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন বলে রায় দিয়েছিলেন এবিএম খায়রুল হক। এছাড়া বিতর্কিত একাধিক বিচারপতিকে শপথ পড়ানো, আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৮ আগস্ট ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইমরুল হাসান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তন ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে খায়রুল হক ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
এদিকে, অবৈধভাবে প্লট গ্রহণের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের তথ্য চেয়ে নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) নথি তলবের চিঠি দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান টিম বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওই সুবিধা নিয়েছেন তিনি-এমন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
তলবি চিঠিতে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠিতে সাবেক বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নামে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের (স্মারক নং রাজ-৫/২০০৫/৪৮৫, তারিখ ২১-০৯-২০১০) নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে নিম্নবর্ণিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা একান্ত প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, জরুরি ভিত্তিতে রেকর্ডপত্রের ফটোকপি নিম্নস্বাক্ষরকারীর কাছে সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ/ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হলো।
দুদক সূত্রে জানা যায়, বরাদ্দকৃত প্লটের বিষয়ে বিদ্যমান নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব ৭ সদস্যদের টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত বছর এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে বিচারক হিসেবে ‘দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়।
২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবিএম খায়রুল হক। ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়