ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
পিএসসির নতুন তিন সদস্যকে শপথ পড়ালেন প্রধান বিচারপতি সিংহ একাই শিকার করে : মোদিকে থালাপতি বিজয়ের হুঁশিয়ারি! কুবির ফিটনেসবিহীন বিআরটিসি বাসের সাথে ট্রাকের ধাক্কা, আহত ৪ রুমিন ফারহানা বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক: হাসনাত আবদুল্লাহ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে গ্রেফতার বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে শোকজ ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই : রুমিন ফারহানা কিশোরগঞ্জে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে ছাত্রলীগ নেতার ভুয়া নিয়োগ মোহাম্মদপুর থানার বিতর্কিত ওসি আলী ইফতেখারসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘেটু জাহিদুরের প্রমোশন

সাবেক আইনমন্ত্রীকে খুশি করে বিচার বিভাগকে নাচায় পিএস মাসুম

আরিফুল হক নভেল
  • Update Time : ০২:৪১:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৫ Time View

বিচার বিভাগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাপ্লাইয়ার হিসেবে পরিচিত মন্ত্রীর সাবেক পিএস দিনাজপুরের মাসুম ছিলেন একজন ছায়া মন্ত্রী। বলা যায়, তার কথাতেই চলতো পুরো বিচার বিভাগ, নিকাহ রেজিস্ট্রারসহ আইজেআর-এর নিয়ন্ত্রণাধীন সারাদেশের রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রারগণ।

তার কথায় একসময় অধঃস্তন আদালতের বিচারকরা মামলা গ্রহণ, জামিন এবং ফরমায়েশী রায় প্রদান করতে বাধ্য হতেন এমন তথ্য জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বিচারক।

মাসুম যখন মন্ত্রীর পিএস ছিলেন, তখন এপিএস রাসেদুল কাওসার ভুঁইয়া ছিলেন এপিএস। একসময় মন্ত্রণালয়ে টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মাসুমের সাথে তার বিরোধ হয়। এই বিরোধের জেরে মন্ত্রীর এলাকার লোক হওয়া সত্বেও মাসুমকে খুশি করার জন্য তাকে মন্ত্রণালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। এই রাসেদুল কাওসার ভূঁইয়া পরিবর্তীতে কসবা উপজেলার চেয়ারম্যান হন। বর্তমানে তিনি জেলে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কিছু পলিটিক্যাল পিএসকে চাকরিতে রেগুলার নিয়োগ দেয়া হয়। যা ছিল আইন বহির্ভুত। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে পিএস চাকুরীতে যাদের নিয়মিত করা হয়, তাদেরকে বাদ দেয়া হয়। তখন তারা হাইকোর্টে গেলে তাদের রীট খারিজ হয়ে যায়। এরপর সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে লিভ টু আপিল করে সেই আপিল মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট আনিসুল হক। উক্ত লিভ টু আপিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রভাব খাটিয়ে শুনানিতে না উঠিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব কাজে লাগিয়ে মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি নেয় এই মাসুম। অথচ রীটটি আপীল বিভাগেই পড়ে রইলো।

মাসুম অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পলিটিক্যাল পিএস হিসেবে স্থায়ী হয়ে ধরা কে সরাজ্ঞান করে। এই মাসুমই পরবর্তীতে আইনমন্ত্রীর পিএস হয়ে দীর্ঘদিন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের সিদ্ধান্ত আসে, প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে কেউ পিএস থাকতে পারবে না। তখনই সে মন্ত্রীর পিএস পদ থেকে বাদ পড়ে যায়। কিন্তু তাতে কি যায় আসে-এরপরও মন্ত্রীত্বের শেষ দিন পর্যন্ত আলোচ্য মাসুম মন্ত্রীর বাসায় সর্বক্ষণ ব্যক্তিগত কাজে সহায়তা, কালেকশনের টাকা মন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়াসহ নানা রকম সাপ্লাইয়ের কাজ চালিয়ে যেতো অবলীলাক্রমে।

মন্ত্রীর পিএস থাকাকালে তিনি মন্ত্রীর মালিকানাধীন বহুল বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমে (সিএনএস) সমান্তরালভাবে চাকুরী করে যান। ঐ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে তৎকালীন সচিব জহিরুল হক দুলালের দূরত্ব সৃষ্টি করে এই মাসুম। দুলালকে গিয়ে বলতো এক কথা আর মন্ত্রীকে ভিন্ন কথা। পরবর্তীতে দুলালের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রচেষ্টাও নস্যাৎ করে দেয় এই পিএস মাসুম।

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালীন মন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্তে মতামত চাইলে তৎকালীন পার্লামেন্ট সচিবালয়ের আইন শাখা থেকে স্পষ্ট মতামতের ভিত্তিতে স্পীকার তাদের চাকুরী থেকে বাদ দেন। ঐ সময় পার্লামেন্ট সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছিলেন মুনসুর আলম বর্তমানে যিনি বিচারপতি। মাসুম তার বাদ যাবার পিছনে সন্দেহের তীর ছোড়েন তৎকালীন পার্লামেন্ট সচিব মুনসুর আলমের প্রতি। তিনি জেলা জজ হিসেবে পদায়িত হলে মাসুম তার প্রভাব খাটিয়ে তার পদায়ন আটকে দেয়।

মুনসুর আলমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে শাস্তি দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখে মাসুম। অভিযোগের কোন ভিত্তি না থাকায় সুপ্রীম কোর্ট মুনসুর আলমকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। এভাবে পর পর তিনবার তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য সুপ্রীম কোর্টে প্রস্তাব পাঠায়। অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ায় তিনবারই তাকে অব্যাহতি দেয়ার পরামর্শ দেন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি আদেশ জারি না করে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি দীর্ঘদিন আটকিয়ে রেখে বঞ্চিত করেন। মাসুম পিএস থেকে বাদ পড়ার পর মুনসুর আলম পদোন্নতিপ্রাপ্ত হলেও মাসুমের প্রভাবে মন্ত্রণালয় থেকে তাকে জেলা জজ হিসেবে কোন জেলায় পদায়ন করা হয়নি। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার মহিমায় ৫ আগস্টের পর তিনি বিচারপতি মনোনিত হন।

২০১৮ সালে নিয়ম হয় মন্ত্রীরা নিজ পছন্দমত পিএস নিয়োগ করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পিএস নিয়োগ করা হবে। আলোচ্য মাসুম যেহেতু প্রশাসন ক্যাডার বা অন্য কোন ক্যাডারের ছিলেন না, তিনি ছিলেন পার্লামেন্টের নিজস্ব কর্মচারী। এক সময় সে এনআরবিসির পরিচালকও হন। এক সঙ্গে দুই চাকুরী পাশাপাশি চলতে থাকে। অথচ সরকারী চাকুরীর নিয়ম হলো সরকারী চাকুরীরত অবস্থায় কেউ ব্যাংকে নিয়োগ পেতে পারে না।

লিভ টু আপীল মামলাটি সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে খারিজ হয়ে গেলে মাসুম তখন চাকুরীহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে এডভোকেট আনিসুল হক আইনমন্ত্রী হন। এতেই খুলে যায় মাসুমের কপাল।

সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক খারিজকৃত লীভ টু আপীলের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে রিভিউ দায়ের করেন মাসুম। রিভিউ পেন্ডিং থাকা অবস্থায় আনিসুল হকের পিএস হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। আনিসুল হক যখন মাসুমের মামলার উকিল ছিলেন, তখন সেই সুবাধে আনিসুল হককে খুশি করার জন্য এই মাসুম সুন্দরী ললনাসহ বিদেশী দামি মদ সরবরাহ করে মন্ত্রীর খুব কাছের লোক বনে যায়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাব খাটিয়ে বেআইনীভাবে মতামত নিয়ে সে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়। এই মতামতটি আইনসম্মত ছিল না বিধায় ঐ সময় আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত উপসচিব আব্দুল হান্নানকে চাপ সৃষ্টি করেন। এতে আপত্তি তোলায় সেই হান্নান মাসুমের প্রধান শত্রু হয়ে যায়। তার দ্বারা নানাভাবে হয়রানীর শিকার হন। মতামত সংক্রান্ত পত্রটি জাতীয় সংসদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পর যেহেতু এই মতামতটি আইনসম্মত ছিল না তাই ধরা খাওয়ার ভয়ে মাসুম আইন মন্ত্রণালয় থেকে মূল নথিটি গায়েব করে ফেলে।

যতদুর জানা যায়, ঐ রিভিউ মামলাটি সুপ্রীম কোর্টে এখনো চলমান আছে। মামলাটি নিস্পত্তি হলে এ যাবত তার বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলিত কোটি কোটি টাকার অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা হতো।

Please Share This Post in Your Social Media

সাবেক আইনমন্ত্রীকে খুশি করে বিচার বিভাগকে নাচায় পিএস মাসুম

আরিফুল হক নভেল
Update Time : ০২:৪১:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

বিচার বিভাগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাপ্লাইয়ার হিসেবে পরিচিত মন্ত্রীর সাবেক পিএস দিনাজপুরের মাসুম ছিলেন একজন ছায়া মন্ত্রী। বলা যায়, তার কথাতেই চলতো পুরো বিচার বিভাগ, নিকাহ রেজিস্ট্রারসহ আইজেআর-এর নিয়ন্ত্রণাধীন সারাদেশের রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রারগণ।

তার কথায় একসময় অধঃস্তন আদালতের বিচারকরা মামলা গ্রহণ, জামিন এবং ফরমায়েশী রায় প্রদান করতে বাধ্য হতেন এমন তথ্য জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বিচারক।

মাসুম যখন মন্ত্রীর পিএস ছিলেন, তখন এপিএস রাসেদুল কাওসার ভুঁইয়া ছিলেন এপিএস। একসময় মন্ত্রণালয়ে টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মাসুমের সাথে তার বিরোধ হয়। এই বিরোধের জেরে মন্ত্রীর এলাকার লোক হওয়া সত্বেও মাসুমকে খুশি করার জন্য তাকে মন্ত্রণালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। এই রাসেদুল কাওসার ভূঁইয়া পরিবর্তীতে কসবা উপজেলার চেয়ারম্যান হন। বর্তমানে তিনি জেলে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কিছু পলিটিক্যাল পিএসকে চাকরিতে রেগুলার নিয়োগ দেয়া হয়। যা ছিল আইন বহির্ভুত। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে পিএস চাকুরীতে যাদের নিয়মিত করা হয়, তাদেরকে বাদ দেয়া হয়। তখন তারা হাইকোর্টে গেলে তাদের রীট খারিজ হয়ে যায়। এরপর সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে লিভ টু আপিল করে সেই আপিল মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট আনিসুল হক। উক্ত লিভ টু আপিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রভাব খাটিয়ে শুনানিতে না উঠিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব কাজে লাগিয়ে মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি নেয় এই মাসুম। অথচ রীটটি আপীল বিভাগেই পড়ে রইলো।

মাসুম অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পলিটিক্যাল পিএস হিসেবে স্থায়ী হয়ে ধরা কে সরাজ্ঞান করে। এই মাসুমই পরবর্তীতে আইনমন্ত্রীর পিএস হয়ে দীর্ঘদিন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারের সিদ্ধান্ত আসে, প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে কেউ পিএস থাকতে পারবে না। তখনই সে মন্ত্রীর পিএস পদ থেকে বাদ পড়ে যায়। কিন্তু তাতে কি যায় আসে-এরপরও মন্ত্রীত্বের শেষ দিন পর্যন্ত আলোচ্য মাসুম মন্ত্রীর বাসায় সর্বক্ষণ ব্যক্তিগত কাজে সহায়তা, কালেকশনের টাকা মন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়াসহ নানা রকম সাপ্লাইয়ের কাজ চালিয়ে যেতো অবলীলাক্রমে।

মন্ত্রীর পিএস থাকাকালে তিনি মন্ত্রীর মালিকানাধীন বহুল বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমে (সিএনএস) সমান্তরালভাবে চাকুরী করে যান। ঐ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে তৎকালীন সচিব জহিরুল হক দুলালের দূরত্ব সৃষ্টি করে এই মাসুম। দুলালকে গিয়ে বলতো এক কথা আর মন্ত্রীকে ভিন্ন কথা। পরবর্তীতে দুলালের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রচেষ্টাও নস্যাৎ করে দেয় এই পিএস মাসুম।

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে তৎকালীন মন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্তে মতামত চাইলে তৎকালীন পার্লামেন্ট সচিবালয়ের আইন শাখা থেকে স্পষ্ট মতামতের ভিত্তিতে স্পীকার তাদের চাকুরী থেকে বাদ দেন। ঐ সময় পার্লামেন্ট সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছিলেন মুনসুর আলম বর্তমানে যিনি বিচারপতি। মাসুম তার বাদ যাবার পিছনে সন্দেহের তীর ছোড়েন তৎকালীন পার্লামেন্ট সচিব মুনসুর আলমের প্রতি। তিনি জেলা জজ হিসেবে পদায়িত হলে মাসুম তার প্রভাব খাটিয়ে তার পদায়ন আটকে দেয়।

মুনসুর আলমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে শাস্তি দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখে মাসুম। অভিযোগের কোন ভিত্তি না থাকায় সুপ্রীম কোর্ট মুনসুর আলমকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। এভাবে পর পর তিনবার তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য সুপ্রীম কোর্টে প্রস্তাব পাঠায়। অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়ায় তিনবারই তাকে অব্যাহতি দেয়ার পরামর্শ দেন। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি আদেশ জারি না করে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি দীর্ঘদিন আটকিয়ে রেখে বঞ্চিত করেন। মাসুম পিএস থেকে বাদ পড়ার পর মুনসুর আলম পদোন্নতিপ্রাপ্ত হলেও মাসুমের প্রভাবে মন্ত্রণালয় থেকে তাকে জেলা জজ হিসেবে কোন জেলায় পদায়ন করা হয়নি। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার মহিমায় ৫ আগস্টের পর তিনি বিচারপতি মনোনিত হন।

২০১৮ সালে নিয়ম হয় মন্ত্রীরা নিজ পছন্দমত পিএস নিয়োগ করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পিএস নিয়োগ করা হবে। আলোচ্য মাসুম যেহেতু প্রশাসন ক্যাডার বা অন্য কোন ক্যাডারের ছিলেন না, তিনি ছিলেন পার্লামেন্টের নিজস্ব কর্মচারী। এক সময় সে এনআরবিসির পরিচালকও হন। এক সঙ্গে দুই চাকুরী পাশাপাশি চলতে থাকে। অথচ সরকারী চাকুরীর নিয়ম হলো সরকারী চাকুরীরত অবস্থায় কেউ ব্যাংকে নিয়োগ পেতে পারে না।

লিভ টু আপীল মামলাটি সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে খারিজ হয়ে গেলে মাসুম তখন চাকুরীহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে এডভোকেট আনিসুল হক আইনমন্ত্রী হন। এতেই খুলে যায় মাসুমের কপাল।

সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক খারিজকৃত লীভ টু আপীলের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে রিভিউ দায়ের করেন মাসুম। রিভিউ পেন্ডিং থাকা অবস্থায় আনিসুল হকের পিএস হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। আনিসুল হক যখন মাসুমের মামলার উকিল ছিলেন, তখন সেই সুবাধে আনিসুল হককে খুশি করার জন্য এই মাসুম সুন্দরী ললনাসহ বিদেশী দামি মদ সরবরাহ করে মন্ত্রীর খুব কাছের লোক বনে যায়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাব খাটিয়ে বেআইনীভাবে মতামত নিয়ে সে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়। এই মতামতটি আইনসম্মত ছিল না বিধায় ঐ সময় আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত উপসচিব আব্দুল হান্নানকে চাপ সৃষ্টি করেন। এতে আপত্তি তোলায় সেই হান্নান মাসুমের প্রধান শত্রু হয়ে যায়। তার দ্বারা নানাভাবে হয়রানীর শিকার হন। মতামত সংক্রান্ত পত্রটি জাতীয় সংসদে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পর যেহেতু এই মতামতটি আইনসম্মত ছিল না তাই ধরা খাওয়ার ভয়ে মাসুম আইন মন্ত্রণালয় থেকে মূল নথিটি গায়েব করে ফেলে।

যতদুর জানা যায়, ঐ রিভিউ মামলাটি সুপ্রীম কোর্টে এখনো চলমান আছে। মামলাটি নিস্পত্তি হলে এ যাবত তার বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলিত কোটি কোটি টাকার অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা হতো।