সাকিবকে আর কখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না : ক্রীড়া উপদেষ্টা

- Update Time : ০৯:৩৭:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১০৪ Time View
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। শুধু বাংলাদেশ নয়, দীর্ঘদিন বিশ্বক্রিকেটেই শাসন করেছেন এই অলরাউন্ডার। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে বদলে যায় পরিস্থিতি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে আর জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়নি সাবেক এই নাম্বার ওয়ানকে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান অধ্যায় শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়! লাল-সবুজ জার্সিতে আর কখনো খেলতে দেখা যাবে না তাকে। সাকিব দেশের হয়ে খেলবেন না- এমন ঘোষণা দেননি। তবে তাকে আর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেওয়া হবে না, এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
সাকিবের এক ফেসবুক পোস্টের জেরে আসিফের সঙ্গে দুই দিন ধরে তার পাল্টাপাল্টি ভার্চ্যুয়াল লড়াই চলছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। এর মধ্যেই নিজের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেওয়া, এটি আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব না। ইতোপূর্বে এটি আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনো বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবেন না।
দেশের হয়ে না খেলার ঘোষণা সাকিব না দিলেও, টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেওয়া, এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব না। ইতিপূর্বে এটা আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনো বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবেন না।
কেন এমন সিদ্ধান্ত, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন আসিফ মাহমুদ, যতবার তিনি (সাকিব) দেশে আসার জন্য চেয়েছেন, খেলার জন্য চেয়েছেন, বলেছেন আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি শুধু এমপি ইলেকশনটা করেছি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু আসল সত্যটা তো হচ্ছে, তিনি আসলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠেভাবে জড়িত, যার প্রমাণ আমরা পেলাম।
প্রমাণ বলতে আসিফ মাহমুদ আসলে সাকিবের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা বুঝিয়েছেন। যে পোস্ট থেকে এই বিতর্কের সূত্রপাত।
তবে এর আগে পেছনের ঘটনাও একটু মনে করা যাক। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়টায় সাকিব ছিলেন দেশের বাইরে। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া সাকিব। আরো অনেকের মতো সাকিবের নামেও হত্যা মামলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে, আছে দুদকের মামলাও।
তো সেই সাকিব গত রবিবার রাত ৯টার দিকে ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে গত বছর গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের একটা ছবি দিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন, আপা।’
এই পোস্টের পরই ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে লেখেন সাকিবকে ‘পুনর্বাসন’ না করার বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। এরপর থেকেই তাদের পাল্টাপাল্টি পোস্টে ভার্চুয়াল লড়াই শুরু হয়।
সেদিন রাত ১০টার দিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। এন্ড অব দ্য ডিসকাশন।
এর জবাবে গত রবিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে সাকিব নিজের ফেসবুকে লিখেন, যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না!
সেটার জবাবে সোমবার বিকাল পাঁচটার দিকে আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুকে আবার লিখেন, ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। ইউ নো হু। যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, ফেস ইট।’
দুজনের পাল্টাপাল্টি এই স্ট্যাটাসগুলো নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তোলপাড়, এর মধ্যেই একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন আসিফ মাহমুদ।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি পোস্ট করা ও তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে সাকিবের অবস্থানও জানতে চেয়েছিল চ্যানেলটি। তিনি চ্যানেলটিকে ফোনে বলেছেন, ‘সে (শেখ হাসিনা) তো সব সময় সিরিয়াসলি খেলা ফলো করেছে, খেলা দেখছে। তাই না? খেলার সঙ্গে যুক্ত এবং ওতপ্রোতভাবেই যুক্ত ছিলেন। তো সেখান থেকেই একটা সম্পর্ক হয়েছে। সেটা রাজনীতির আগে থেকেই। সেই জায়গা থেকে আমি একজনকে উইশ করতেই পারি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য, কাউকে কোনো ইঙ্গিত, এমন কোনো কিছুই না।’