শেওড়াপাড়ায় জোড়া খুন
সাইকেল কিনতে এসে টাকা চুরি, দেখে ফেলায় দুই খালাকে খুন

- Update Time : ০৭:১৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
- / ৩৬ Time View
সাইকেল কেনার টাকার জন্য খালার বাসায় এসেছিল ১৪ বছরের কিশোর ভাগনে মো. গোলাম রব্বানী খান ওরফে তাজ। খালার অগোচরে মানিব্যাগ থেকে তিন হাজার টাকা বের করার সময় ধরা পড়ে যায় তাজ। মাকে বলে দিতে চাওয়ায় টেবিলে রাখা ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালাকে, পরে সেজো খালাকেও ছুরিকাঘাত করে তাজ। এরপর শিল দিয়ে আঘাত করে দুই খালাকেই হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় ১৪ বছরের এই কিশোর।
রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় জোড়া খুন করে পোশাক বদলে বাসা থেকে বের হয় গোলাম রব্বানী খান ওরফে তাজ। পরে খালাদের জানাজায়ও অংশ নেয় সে। পুলিশের তদন্ত ও সরেজমিন কাজেও সহযোগিতা ও নানাভাবে আড়িপাতার চেষ্টা করে এই কিশোর।
পরে ডিবি পুলিশ ওই বাসার সিসি ক্যামেয়ার ফুটেজ ও পারিপার্শ্বিক তদন্তের ভিত্তিতে তাজকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সাইকেল কিনতে খালার বাসায় এসে তিন হাজার চুরি করে ধরা পড়ায় দুই খালাকে খুন করেছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে।
সোমবার (১২ মে) বিকেলে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় বাসার সিসিটিভিতে দেখা যাওয়া অপরিচিত এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ। তার মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ ছিল। তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
তিনি বলেন, গত ৯ মে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের পর রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ভাড়া বাসায় খুন হন মরিয়ম বেগম ও তার বোন সুফিয়া বেগম। এ ঘটনায় মরিয়ম বেগমের মেয়ে বাদী হয়ে মিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। আপন ভাগনে মো. গোলাম রব্বানী খান ওরফে তাজকে বড় খালা (মরিয়ম বেগম) আপ্যায়ন করার কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং সেজো খালা (সুফিয়া বেগম) প্লেট, বাটি ধুয়ে মুছে বারান্দার দিকে যান। এই সুযোগে গ্রেফতার তাজ বড় খালার রুমে টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে পুরোনো সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা চুরি করে।
যুগ্ম পুলিশ কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, চুরির ঘটনা ধরা পড়লে বড় খালা মরিয়ম তাকে বকাবকি করেন। তার মাকে জানানোর কথা বলেন এবং তার মাকে ফোন করার জন্য মোবাইল ফোন খুঁজতে থাকেন। সেই মুহূর্তে তাজ ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে। আঘাতপ্রাপ্ত হলে মরিয়ম বেগম রক্তাক্ত অবস্থায় ভাগনে তাজকে মারতে গেলে তাকে আবারও আঘাত করে। মরিয়ম বেগমের চিৎকার শুনে বোন সুফিয়া বেগম পাশের রুম থেকে এসে তাজকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকেও একই চাকু দিয়ে পেটে একবার আঘাত করে তাজ। এতে সুফিয়া মেঝেতে পড়ে যান।
এরপর গ্রেফতার তাজ রান্নাঘর থেকে পাটার শিল এনে তার বড় খালা ও সেজো খালার মাথায় কয়েকবার আঘাত করে। তারপর সে টয়লেটে গিয়ে হাতে ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে। এরপর পাশের রুমে গিয়ে তাজ রক্তমাখা টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পাল্টে খালাতো বোনের একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে নেয়। এরপর সে বাইরে থেকে দরজা লক করে চাবি নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে শনির আখড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মামলা রুজুর পর গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ, নিবিড় তদন্ত ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মো. গোলাম রব্বানী খান ওরফে তাজের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর ঝালকাঠির সদর এলাকায় নানা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাজকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রক্তমাখা কাপড়, জুতা এবং অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে রক্তমাখা নীল রঙের টি-শার্ট, রক্তমাখা দুটি জিন্স প্যান্ট (এর মধ্যে একটি তার ও একটি তার খালাতো বোনের) উদ্ধার করা হয়।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত শুক্রবার বিকালে বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় (সিসিটিভি) দেখতে পাওয়া ব্যক্তিটিই গোলাম রব্বানী। তিনি হত্যার শিকার মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগমের ছোট বোনের ছেলে। তিনি তার দুই খালাকে হত্যা করেছেন।
গত শুক্রবার ৬৪৯ পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাড়িটির দোতলায় একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬০) ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগমকে (৫২) ছুরিকাঘাত, শিলনোড়ার আঘাতে হত্যা করা হয়। সেদিন রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।
ওই পুলিশ আরও জানান, রব্বানী মা-বাবার সঙ্গে রাজধানীর শনির আখড়ায় থাকেন। টাকার জন্য তিনি পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় তার বড় খালা মরিয়ম বেগমের বাসায় যান। সেখানে মরিয়মের আরেক বোন সুফিয়া বেগম থাকতেন। তারা রব্বানীকে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি ছুরিকাঘাত ও শিল-নোড়ার আঘাতে দুই খালাকে হত্যা করেন। পরে তিনি তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। গোলাম রব্বানী মোবাইল ফোনে আসক্ত। উগ্র আচরণে কারণে এর আগে তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ঘটনার পরদিন মরিয়মের স্বামী বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন বাদী হয়ে রাজধানীর মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
গ্রেফতার তাজ মাদকাসক্ত কিংবা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল কি না জানতে চাইলে যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে দেখা হবে সে মাদকাসক্ত অথবা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল কি না।