ঢাকা ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক তুরাব হত্যার আসামীকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে সিলেটে অবস্থান কর্মসূচী

সিলেট প্রতিনিধি
  • Update Time : ১০:২৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১২ Time View

পুলিশের গুলীতে নিহত সিলেটের সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সাবেক ওসি মঈন উদ্দিনকে বিজিবির আটকের কয়েক ঘন্টার মাথায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে সিলেটের সাংবাদিক মহলে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

তাই শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ও সাবেক ওসি মঈনকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে সিলেটের সংবাদকর্মীরা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কার্যালয়ের সামনে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

সাংবাদিক তুরাব হত্যার ৬ নং আসামি এসএমপির কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন সিপনকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ায় সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) ও মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে অপসারণ করুন এবং কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মঈনসহ তুরাব হত্যা আসামীদের গ্রেফতার করুন। বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশের গুলিতে সিলেটে সাংবাদিক নিহতের ঘটনা এই প্রথম। এই ঘটনায় আমরা হতভম্ব, বিস্মিত ও গভীর শোকাহত এবং সেই সাথে ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় সাংবাদিক তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯ আগস্ট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি নেই। উপরন্তু এ মামলার ৬ নং আসামি, ঘটনার সময়ের সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন সিপনকে তার বাড়িতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে রোববার দিবাগত রাতে বিজিবি আটক করেছিলো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও পরদিন দুপুরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এতে আমরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছি। পাশাপশি তুরাব হত্যাকান্ডে জড়িত এসএমপি’র সাবেক কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ ও গোলাম কাওসার দস্তগীরসহ সকল আসামিকে অবিলম্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে সিলেটের সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিতে বাধ্য হবেন।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান, স্বরাষ্ট্র ও উপদেষ্টা আইন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদব ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে এসএমপি পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিমের পক্ষে উপ-পুলিশ কমিশনার সদর ও প্রশাসন তোফায়েল আহমদ সাংবাদিকদের আশ্বাস প্রদান করেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটিএম তুরাবের হত্যাকারীদের আটক করার। তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুরে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করতে গিয়ে এসএমপির কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) আটক করেছিলো বিজিবি’র টাস্কফোর্স। তবে তার কাছে অবৈধ অস্ত্র রক্ষিত আছে এমন কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ ডিএসবি পুলিশ সুপার বলেন, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা মঈনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে সোমবার ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোপীনাথপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। মঈন উদ্দিন গোপীনাথপুর (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের ইমাম উদ্দিনের পুত্র। তিনি ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কোতোয়ালি থানার ওসি ছিলেন। এর আগে ছিলেন সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি।

হবিগঞ্জ ডিএসবি পুলিশ সুপার জানান, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন (হবিগঞ্জ) এর সহকারি পরিচালক মো. ইয়ার হোসেন জানতে পারেন, জেলার মাধবপুর থানার গোপিনাথপুর মাস্টার বাড়ি মনতলা গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ সংবাদের প্রেক্ষিতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেন। এসময় টাস্কফোর্স কর্তৃক অবৈধ অস্ত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয়তা থাকায় মনতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের রাত্রীকালীন টহল দলের সহযোগিতা নেন তিনি। মো. ইয়ার হোসেন ১৪ জন বিজিবি সদস্যের টিম নিয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মনতলা গ্রামের মঈন উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অভিযানকালে সে বাড়িতে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি।

পরে মঈন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সুনামগঞ্জ জেলা হতে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (নং-০৫/২০২২- জগন্নাথপুর) গ্রহণ করলেও এ লাইসেন্সের বিপরীতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেননি। তার নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি বৈধ কি না এবং উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে কি না তা যাচাই করতে তাকে নিয়ে বিজিবি দল মাধবপুর থানায় যান। পরবর্তীতে মাধবপুর থানায় রক্ষিত বেসরকারি আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার যাচাই করে মঈন উদ্দিনের নামে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার হেফাজতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। তাই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

ওই সময় জানা যায়, তিনি একজন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। এ অবস্থায় পুলিশ পরিদর্শক মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিজিবি কর্মকর্তা মো. ইয়ার হোসেনের কোনো অভিযোগ না থাকায় সোমবার সকাল ১১টার দিকে তাকে বাড়ি চলে যেতে দেয়া হয়।

এব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের সিলেট রেঞ্জে অতিরিক্ত ডিআইজি লিটন কুমার সাহা জানান, ওসি মঈন উদ্দিনের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। বিষয়টি হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ বলতে পারবে। আমি যতটুকু জানি তিনি এখন সিলেট রেঞ্জে কর্মরত নয়।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে ১৯ আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে।

এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। মামলার ২নং আসামি হলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩নং আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪নং আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও ৬নং আসামি সে সময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।

Please Share This Post in Your Social Media

সাংবাদিক তুরাব হত্যার আসামীকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে সিলেটে অবস্থান কর্মসূচী

সিলেট প্রতিনিধি
Update Time : ১০:২৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুলিশের গুলীতে নিহত সিলেটের সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সাবেক ওসি মঈন উদ্দিনকে বিজিবির আটকের কয়েক ঘন্টার মাথায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে সিলেটের সাংবাদিক মহলে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

তাই শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ও সাবেক ওসি মঈনকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে সিলেটের সংবাদকর্মীরা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কার্যালয়ের সামনে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

সাংবাদিক তুরাব হত্যার ৬ নং আসামি এসএমপির কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন সিপনকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ায় সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) ও মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে অপসারণ করুন এবং কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মঈনসহ তুরাব হত্যা আসামীদের গ্রেফতার করুন। বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশের গুলিতে সিলেটে সাংবাদিক নিহতের ঘটনা এই প্রথম। এই ঘটনায় আমরা হতভম্ব, বিস্মিত ও গভীর শোকাহত এবং সেই সাথে ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় সাংবাদিক তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯ আগস্ট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি নেই। উপরন্তু এ মামলার ৬ নং আসামি, ঘটনার সময়ের সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন সিপনকে তার বাড়িতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে রোববার দিবাগত রাতে বিজিবি আটক করেছিলো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও পরদিন দুপুরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এতে আমরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছি। পাশাপশি তুরাব হত্যাকান্ডে জড়িত এসএমপি’র সাবেক কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ ও গোলাম কাওসার দস্তগীরসহ সকল আসামিকে অবিলম্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে সিলেটের সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিতে বাধ্য হবেন।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান, স্বরাষ্ট্র ও উপদেষ্টা আইন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদব ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে এসএমপি পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিমের পক্ষে উপ-পুলিশ কমিশনার সদর ও প্রশাসন তোফায়েল আহমদ সাংবাদিকদের আশ্বাস প্রদান করেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটিএম তুরাবের হত্যাকারীদের আটক করার। তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুরে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করতে গিয়ে এসএমপির কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) আটক করেছিলো বিজিবি’র টাস্কফোর্স। তবে তার কাছে অবৈধ অস্ত্র রক্ষিত আছে এমন কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ ডিএসবি পুলিশ সুপার বলেন, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা মঈনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে সোমবার ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোপীনাথপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। মঈন উদ্দিন গোপীনাথপুর (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের ইমাম উদ্দিনের পুত্র। তিনি ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কোতোয়ালি থানার ওসি ছিলেন। এর আগে ছিলেন সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি।

হবিগঞ্জ ডিএসবি পুলিশ সুপার জানান, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন (হবিগঞ্জ) এর সহকারি পরিচালক মো. ইয়ার হোসেন জানতে পারেন, জেলার মাধবপুর থানার গোপিনাথপুর মাস্টার বাড়ি মনতলা গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ সংবাদের প্রেক্ষিতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেন। এসময় টাস্কফোর্স কর্তৃক অবৈধ অস্ত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয়তা থাকায় মনতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের রাত্রীকালীন টহল দলের সহযোগিতা নেন তিনি। মো. ইয়ার হোসেন ১৪ জন বিজিবি সদস্যের টিম নিয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মনতলা গ্রামের মঈন উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অভিযানকালে সে বাড়িতে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি।

পরে মঈন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সুনামগঞ্জ জেলা হতে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (নং-০৫/২০২২- জগন্নাথপুর) গ্রহণ করলেও এ লাইসেন্সের বিপরীতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেননি। তার নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি বৈধ কি না এবং উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে কি না তা যাচাই করতে তাকে নিয়ে বিজিবি দল মাধবপুর থানায় যান। পরবর্তীতে মাধবপুর থানায় রক্ষিত বেসরকারি আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার যাচাই করে মঈন উদ্দিনের নামে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার হেফাজতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। তাই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

ওই সময় জানা যায়, তিনি একজন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। এ অবস্থায় পুলিশ পরিদর্শক মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিজিবি কর্মকর্তা মো. ইয়ার হোসেনের কোনো অভিযোগ না থাকায় সোমবার সকাল ১১টার দিকে তাকে বাড়ি চলে যেতে দেয়া হয়।

এব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের সিলেট রেঞ্জে অতিরিক্ত ডিআইজি লিটন কুমার সাহা জানান, ওসি মঈন উদ্দিনের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। বিষয়টি হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ বলতে পারবে। আমি যতটুকু জানি তিনি এখন সিলেট রেঞ্জে কর্মরত নয়।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে ১৯ আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে।

এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। মামলার ২নং আসামি হলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩নং আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪নং আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও ৬নং আসামি সে সময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।