সরকার জনমত যাচাই না করে বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করায় আন্দোলন

- Update Time : ০৭:১১:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৯৪ Time View
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সরকার জনমত যাচাই না করে প্রভাবিত হয়ে বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করায় আন্দোলনে নেমেছে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। অনেকে বলছেন, সরকারের সাথে আলোচনা চলছে তাহলে রাজপথে কেন। আমরা বলতে চাই জুলাই সনদ করবেন, গোপনে বিএনপি’র কাছে যাবেন, এটি হতে দেয়া হবে না। আমাদের নিরপেক্ষভাবে ডাকেন, আমাদের ৫ দফা দাবি মানেন, আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসবো।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির প্রবর্তনসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যা যা সংস্কার কমিশনে সকলে একমত হয়েছে, তা জুলাই সনদে অর্ন্তভূক্ত করতে সরকারকে সাংবিধানিক আদেশ জারি ও গণভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের বড় ভাই দাবি করা রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, এটির জন্য ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাওয়া হোক। আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিক সংস্কারকে সুপ্রিম কোর্টে নেয়া যাবে না। কোর্টে গেলে প্যাচ লাগবে। শেখ হাসিনা সবকিছু আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ফায়ার করেছিলো। সংসদে সংস্কারের বৈধতার জন্য পাঠানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের নামে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। অনেকে বলছেন আমরা নাকি নির্বাচন চাই না। আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে নাকি নির্বাচন পেছানের চেষ্টা করছি। অথচ জামায়াতের আমির বলেছেন ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়। আমরা ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চাই, কিন্তু তা সংষ্কার, জুলাই সনদের আইনীভিত্তি, গণহত্যার বিচার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ফ্যাসিবাদের দোসারদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধান উপদেষ্টার জুলাই ঘোষণাপত্রের মধ্যে দূর্বলতা ছিল। জুলাই ঘোষণাপত্রের ড্রাফট আমাদের না দেখিয়ে বিএনপিকে সরবরাহ করা হয়েছে। সেখানে ২৫ অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে আগামী নির্বাচিত সরকার এসে জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করবে। সেজন্য বিএনপি খুশি হয়েছে। তারা বলতে পারছে পরবর্তী সরকার এসে জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করবে। তাহলে আমরা ৬ মাস কষ্ট করে সংস্কার, ঐক্যমত কমিশনে কেন খাটলাম। এত কিছুর তো দরকার ছিল না।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশে নিবন্ধিত ৩১ দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে। তারা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ১০ বছর মানতে চায় না। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা আপত্তি জানিয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ব্যক্তি স্বার্থ না থাকায় কালো টাকার খেলা, পেশিশক্তি প্রদর্শন, কারচুপি, মনোনয়ন বাণিজ্য হবে না। ফলে ওইসব রাজনৈতিক দল মনোনয়নের নামে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করতে পারবে না। তাই তারা পিআর পদ্ধতি চায় না। তারা সংসদে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাতে পারবে না বলে পিআর ঠেকাতে চায়। আমরা বলছি, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শাসন চিরতরে বন্ধ, সংসদে সকল দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণে আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কোন বিকল্প নাই। বাংলাদেশের জনগণ আর স্বৈরাচারী শক্তির ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চান না।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন,গণহত্যা, লুটপাট সহ সব ধরনের দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। সেইসাথে স্বৈরাচারি শক্তির দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দাবিগুলো এখন দেশের জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
তাই, কালবিলম্ব না করে অতিদ্রুত জনগণের দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।
রংপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে রংপুর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, মহানগর সেক্রেটারি কেএম আনোয়ারুল হক কাজল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হক, মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, সহকারী সেক্রেটারি আল-আমিন হাসান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাাক আহমেদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রংপুর মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সুমন সরকার, জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে জামায়াতে ইসলামীসহ সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।