সবজি গ্রামের দুই শতাধিক চাষীর বছরে বিক্রি ৭ কোটি টাকা

- Update Time : ০২:২৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১২৪ Time View
লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়ার দুই শতাধিক চাষীর। প্রায় এক যুগ পূর্বেও লবণাক্ততার কারণে ধান চাষ করতে না পেরে ফেলে রাখা জমিতে বছরজুড়ে এখন বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলাচ্ছেন তারা। এতে প্রতি বছর শুধু তালতলীর ওই একটি গ্রাম থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এমন সবজি চাষে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমানে ওই গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘সবজি গ্রাম’ নামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের সওদাগর পাড়া গ্রামের চাষীরা শুধু ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে জমিতে অধিক পরিমাণ লবণ থাকায় ধানের উৎপাদন ভালো না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হতো এ এলাকার অধিকাংশ চাষীদের। ফলে জীবিকার তাগিদ ও আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে বিকল্প উপায় খুঁজতে শুরু করেন তারা। পরবর্তী সময়ে প্রায় এক যুগ আগে শাহাদাত মাতুব্বর নামে এক স্থানীয় চাষী তার জমিতে বিশেষ পরিচর্যায় বিভিন্ন সবজির চাষ শুরু করেন। পরে বিকল্প হিসেবে সবজি চাষে শাহাদাতের সফলতা দেখে ধীরে ধীরে গ্রামের অধিকাংশ চাষীরাই সবজি চাষ করতে শুরু করেন। বর্তমানে গ্রামটির সাড়ে ৬০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন স্থানীয় চাষীরা। এতে একদিকে চাষীদের অর্থনৈতিক জীবন মানের উন্নয়ন ঘটেছে। অপরদিকে এলাকার বেকার থাকা অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে তালতলীর সওদাগার পাড়ার সবজি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে শীত মৌসুমে চাষীদের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে শিম গাছ। বেড কেটে মাটি উঁচু করে মাচা পদ্ধতিতে বিশেষ পরিচর্যায় লাগানো প্রতিটি গাছেই ঝুলছে প্রচুর পরিমাণ ফুল ও শিম। চাষীদের পাশাপাশি এলাকার অনেক বেকার নারী-পুরুষ দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে ক্ষেত থেকে শিম তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন শিম তোলার পর বস্তায় ভরে স্থানীয় পাইকারদের মাধ্যমে তা বিক্রির উদ্দেশ্যে পৌঁছে যায় বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
পরিবারের ভরণপোষণের ব্যয় মেটাতে এক সময় হিমসিম খেতেন মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নামে স্থানীয় এক চাষী। তিনি দৈনিক নওরোজকে বলেন, আমি আগে নদীতে মাছ ধরতাম। এলাকায় বিভিন্ন চাষীদের সফলতা দেখে প্রথমে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে একটি জমি বায়না করি। পরে আরও ২ লাখ টাকা খরচ করে মাটি কেটে সবজি চাষ শুরু করি। বর্তমানে সবজি চাষে আমি লাভের টাকায় কয়েকটি গরু কিনেছি, জায়গা জমি কিনেছি, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছি।
একই গ্রামের আরেক সবজি চাষী মো. আব্দুল মান্নান ফকির দৈনিক নওরোজকে বলেন, আমাদের এলাকায় প্রথমে তিনজন চাষী সবজি চাষ শুরু করেন। তাদের সফলতা দেখে পার্শ্ববর্তী আমরা অনেকেই চিন্তা করলাম সবজি চাষে লাভ আছে কিন্তু ধান চাষে আমাদের তেমন কোনো লাভ নেই। পরে আমি আমার জমিতে ধানের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করি। এ বছর আমার একটি সবজি ক্ষেত থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকার বিভিন্ন সবজি বিক্রি হবে। বর্তমানে সওদাগর পাড়ার প্রায় সব চাষীরাই ধান চাষ বাদ দিয়ে সবজি চাষ শুরু করেছেন।
সওদাগর পাড়া গ্রামের চাষীদের ভাগ্য পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক কৃষি উদ্দ্যোক্তা শাহাদাত মাতুব্বর দৈনিক নওরোজকে বলেন, আমাদের গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২২০ জন কমার্শিয়াল সবজি চাষী রয়েছেন। এছাড়া তাদের অধীনে প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন লোক বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে কাজ করেন। আমাদের এলাকায় এখন প্রায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে শিম গাছ রয়েছে। আর এ শিম তোলার কাজে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের মা-বোনসহ অনেক বেকার তরুণরা কাজ করছেন। দৈনিক ৩০০ টাকা বেতনসহ তাদের খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বছরে দুইটি মৌসুমে আমাদের এই একটি গ্রাম থেকে বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করা হয়।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ সি.এম রেজাউল করিম দৈনিক নওরোজকে বলেন, তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া নামক গ্রামটি এখন সবজি গ্রামে পরিণত হয়েছে। ওই গ্রামের জমি লবণাক্ত থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে মাটি কেটে উঁচু করে সবজি চাষ শুরু করেন চাষীরা। বর্তমানে তালতলীর ওই একটি গ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বছরে কয়েক কোটি টাকার সবজি সরবরাহ করা হয়। তাদের সফলতা দেখে পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ বরগুনার বিভিন্ন এলাকার চাষীরা এখন সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা কৃষি বিভাগ এ ধরনের কাজকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে সব সময় তাদের সঙ্গে আছি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়