ঢাকা ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ : বিবিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৭ Time View

দেশের সরকারি সেবা খাতগুলোর মধ্যে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’ -এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ অনুযায়ী, বিআরটিএ-তে সেবা নিতে গিয়ে অন্তত ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিবিএস ডিজি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ৬-২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সময়ে দেশব্যাপী ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)’ পরিচালনা করে। ৬৪ জেলার এক হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন উত্তরদাতার (পুরুষ: ৩৯ হাজার ৮৯৪, নারী: ৪৪ হাজার ৯১৩) সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, দুর্নীতির তালিকায় বিআরটিএ-এর পরেই রয়েছে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা (৫৭.৯৬%) এবং পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫%)। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক গত ১২ মাসে কোনো না কোনো সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সরাসরি ঘুষ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

সার্ভে বলছে, ঘুষ দেওয়ার মধ্যে পুরুষদের দেওয়ার হার (৩৮.৬২%), নারীদের ২২.৭১ শতাংশ। প্রায় ৯৮.৪৮ শতাংশ জনগণ ঘুষ হিসেবে “টাকা” দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য বিষয়ক এসডিজি ১৬ এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। জাতীয়ভাবে, নমুনাভুক্ত খানার মধ্যে গড়ে সদস্য সংখ্যা ৪.০০ জন, যার মধ্যে ৮১.৯৭ শতাংশ পুরুষপ্রধান পরিবার এবং ১৮.০৩ শতাংশ নারীপ্রধান পরিবার।

জরিপে দেখা যায় যে, দেশের ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ বাসার আশপাশের এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদবোধ করেন। এ নিরাপত্তাবোধ পুরুষদের (৮৯.৫৩%) তুলনায় নারীদের (৮০.৬৭%) বেশ কম। সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নিরাপত্তাবোধের হার তুলনামূলকভাবে বেশি (৯২.৫৪%)।

সুশাসনের বিষয়ে, মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে তারা সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারেন। রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে এই হার আরও কমে ২১.৯৯%-এ নেমে আসে। জাতীয়ভাবে, প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪.৬২%) জনগণ মনে করেন যে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সাড়াপ্রবণ। এ বিষয়ে পল্লী (২৪.৪৭%) ও শহরের (২৪.৯১%) জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় কোনো পার্থক্য নেই।

গত ১২ মাসে সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে জাতীয়ভাবে ৪৭.১২ শতাংশ জনগণ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ৪০.৯৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন যে তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি বিদ্যালয়ে (প্রাথমিক/ মাধ্যমিক) পড়াশোনা করেছে। তদুপরি, ৭৩.৭৭ শতাংশ জনগণ অন্যান্য সরকারি সেবা (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) গ্রহণের অন্তত একটি প্রচেষ্টা করেছেন। এ সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে পাঁচটি মাত্রার ভিত্তিতে দেখা যায় যে, স্বাস্থ্যসেবায় সামগ্রিক সন্তুষ্টির হার ৭২.৬৯ শতাংশ, প্রাথমিক শিক্ষায় ৮১.৫৬ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ৭৮.১৮ শতাংশ, এবং অন্যান্য সরকারি সেবায় (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ৬৬.৯১ শতাংশ সন্তুষ্টি হার রিপোর্ট করা হয়েছে।

জাতীয়ভাবে, প্রায় ১৬,১৬ শতাংশ জনগণ গত দু’বছরে কোনো বিবাদ বা বিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ (৮৩.৬০%) জনগণ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক (যেমন- আদালত) অথবা অনানুষ্ঠানিক (যেমন- কমিউনিটি নেতা) কোনো না কোনো ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১.৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ৬৮.৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন।

ফলাফল অনুযায়ী দেশের ১৯.৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বৈষম্যের প্রধান ভিত্তি ছিল আর্থ-সামাজিক অবস্থা (৬.৮২%) এবং লিঙ্গ (৪.৪৭%)। বৈষম্যের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে নিজের পরিবারের মধ্যে (৪৯.৭২%), গণপরিবহন/উন্মুক্ত স্থানে (৩৪.৮২%) এবং কর্মস্থলে (২৪.৮৫%)। মাত্র ৫.৩৭ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ : বিবিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১২:১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের সরকারি সেবা খাতগুলোর মধ্যে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’ -এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ অনুযায়ী, বিআরটিএ-তে সেবা নিতে গিয়ে অন্তত ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিবিএস ডিজি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ৬-২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সময়ে দেশব্যাপী ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)’ পরিচালনা করে। ৬৪ জেলার এক হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন উত্তরদাতার (পুরুষ: ৩৯ হাজার ৮৯৪, নারী: ৪৪ হাজার ৯১৩) সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, দুর্নীতির তালিকায় বিআরটিএ-এর পরেই রয়েছে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা (৫৭.৯৬%) এবং পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫%)। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩১.৬৭ শতাংশ নাগরিক গত ১২ মাসে কোনো না কোনো সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সরাসরি ঘুষ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।

সার্ভে বলছে, ঘুষ দেওয়ার মধ্যে পুরুষদের দেওয়ার হার (৩৮.৬২%), নারীদের ২২.৭১ শতাংশ। প্রায় ৯৮.৪৮ শতাংশ জনগণ ঘুষ হিসেবে “টাকা” দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্য বিষয়ক এসডিজি ১৬ এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। জাতীয়ভাবে, নমুনাভুক্ত খানার মধ্যে গড়ে সদস্য সংখ্যা ৪.০০ জন, যার মধ্যে ৮১.৯৭ শতাংশ পুরুষপ্রধান পরিবার এবং ১৮.০৩ শতাংশ নারীপ্রধান পরিবার।

জরিপে দেখা যায় যে, দেশের ৮৪.৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ বাসার আশপাশের এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদবোধ করেন। এ নিরাপত্তাবোধ পুরুষদের (৮৯.৫৩%) তুলনায় নারীদের (৮০.৬৭%) বেশ কম। সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নিরাপত্তাবোধের হার তুলনামূলকভাবে বেশি (৯২.৫৪%)।

সুশাসনের বিষয়ে, মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে তারা সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারেন। রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে এই হার আরও কমে ২১.৯৯%-এ নেমে আসে। জাতীয়ভাবে, প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪.৬২%) জনগণ মনে করেন যে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সাড়াপ্রবণ। এ বিষয়ে পল্লী (২৪.৪৭%) ও শহরের (২৪.৯১%) জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় কোনো পার্থক্য নেই।

গত ১২ মাসে সরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে জাতীয়ভাবে ৪৭.১২ শতাংশ জনগণ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ৪০.৯৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন যে তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি বিদ্যালয়ে (প্রাথমিক/ মাধ্যমিক) পড়াশোনা করেছে। তদুপরি, ৭৩.৭৭ শতাংশ জনগণ অন্যান্য সরকারি সেবা (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) গ্রহণের অন্তত একটি প্রচেষ্টা করেছেন। এ সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে পাঁচটি মাত্রার ভিত্তিতে দেখা যায় যে, স্বাস্থ্যসেবায় সামগ্রিক সন্তুষ্টির হার ৭২.৬৯ শতাংশ, প্রাথমিক শিক্ষায় ৮১.৫৬ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ৭৮.১৮ শতাংশ, এবং অন্যান্য সরকারি সেবায় (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ৬৬.৯১ শতাংশ সন্তুষ্টি হার রিপোর্ট করা হয়েছে।

জাতীয়ভাবে, প্রায় ১৬,১৬ শতাংশ জনগণ গত দু’বছরে কোনো বিবাদ বা বিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ (৮৩.৬০%) জনগণ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক (যেমন- আদালত) অথবা অনানুষ্ঠানিক (যেমন- কমিউনিটি নেতা) কোনো না কোনো ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১.৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং ৬৮.৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন।

ফলাফল অনুযায়ী দেশের ১৯.৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বৈষম্যের প্রধান ভিত্তি ছিল আর্থ-সামাজিক অবস্থা (৬.৮২%) এবং লিঙ্গ (৪.৪৭%)। বৈষম্যের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে নিজের পরিবারের মধ্যে (৪৯.৭২%), গণপরিবহন/উন্মুক্ত স্থানে (৩৪.৮২%) এবং কর্মস্থলে (২৪.৮৫%)। মাত্র ৫.৩৭ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করেছেন।