ঢাকা ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংসদ ক্রমে ধনী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে: রেহমান সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ২৩ Time View

অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান ।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, জাতীয় সংসদ ক্রমে প্রভাবশালী ধনী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে। তারাই রাষ্ট্রের নীতি ঠিক করেছে। এ কারণেই ভঙ্গুর গণতন্ত্র দেখা গেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক করতে না পারলে দেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আশা করা কঠিন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মত দিয়েছেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিয়ে আমরা যখন কথা বলি, তখন কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর বলি না। এর কারণ, আমরা কখনোই কার্যকর গণতন্ত্র পাইনি, যেখানে উন্নয়ন কেমন হবে এবং কোন ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন– তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে চিন্তাশীল বিতর্ক হয়। গত ৫০ বছরে এসব আলোচনা কখনোই টেবিলে আসেনি। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না এগুলো আলোচনায় আসে, ততক্ষণ সমস্যার সমাধানও সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের মাঝে গণতন্ত্র নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে ওহি নাজিলের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন এখনও হয়নি।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিয়াল ফেলো সুলতান হাফেজ রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন এবং বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল না। একটি বড় ধরনের সংস্কার প্যাকেজ এখন দেশের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর কিছু হয়তো বর্তমান সরকার করে যেতে পারে, যদিও তাদের হাতে বাস্তবে খুব বেশি সময় নেই। শেষ পর্যন্ত এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে একটি নির্বাচিত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন কেউ নেই। তারা যেসব সংস্কার প্রস্তাব করছে, তা কতটা গ্রহণ করবে আগামীর নির্বাচিত সরকার– সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আলোচনার এ পর্যায়ে মঞ্চে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান মনসুরকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, তিনি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করছেন এক ধরনের স্বাধীনতা নিয়েই। সেখানে একজন নির্বাচিত অর্থমন্ত্রী থাকলে এবং একটি পূর্ণ নির্বাচিত সরকার থাকলে একই স্বাধীনতা পাওয়া যেত?

অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও বলেন, ধারণা দেওয়া হয়েছে, সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকারকে আলোকিত করবে। তারা ভালো শাসন ব্যবস্থার পথে এগোবে এবং আমরা একই সঙ্গে ভালো গণতন্ত্র ও ইতিবাচক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করব। ধারণাটি আজকাল এক ধরনের রোমান্টিক চিন্তার অংশ হয়ে গেছে, যা একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ছবি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তারা আসলে কী করবে? তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য কী? রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই হবে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল সংসদের অকার্যকারিতা। আসলে কখনোই এমন সংসদ পাইনি, যেখানে শক্তিশালী বিরোধী দল পাঁচ বছর ধরে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় রাখবে এবং নীতিনির্ধারণী সব প্রশ্নে বিতর্ক হবে। এগুলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আমাদের অভিজ্ঞতা মূলত ‘নির্বাচনী গণতন্ত্র’। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে সরকার পরিবর্তন করেছি। সেখানেও নানা সমস্যা ছিল। ব্যতিক্রম হলো– ২০০১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিনা বাধায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপির কাছে। ৫২ বছরের ইতিহাসে এটুকুই আমাদের সাফল্য।

বর্তমান সংস্কার এজেন্ডার ঘাটতি তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা কীভাবে গণতান্ত্রিক করা যায় এবং কীভাবে এমন অবস্থা তৈরি করা যায় যাতে বিপুল ধন-সম্পদ ছাড়া সাধারণ মানুষও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে–এসব বিষয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশন কিছুই বলেনি। মনে রাখতে হবে, ১৯৭০ সালে যারা নির্বাচন করেছেন, তাদের অনেকেই বাস ও রিকশায় চড়ে এলাকায় যেতেন। তাদের সম্পদ সীমিত ছিল। এখন নিজের ‘পাজেরো’ ছাড়া কেউ নির্বাচন করার কথা কল্পনাও করতে পারেন না।

তাঁর মতে, ‘যতক্ষণ না নির্বাচন এমন হবে যে, সমাজের সব স্তরের মানুষ সীমিত সামর্থ্য নিয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, ততক্ষণ নির্বাচিত সংসদে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিই আধিপত্য বিস্তার করবে। নীতি প্রণয়ন হবে তাদের স্বার্থকে কেন্দ্র করে। অতএব, বাস্তবতা হলো সংস্কার টেবিলে আসবে, কিছু পাস হবে এবং কিছু বাস্তবায়ন করবে একটি নির্বাচিত সংসদ, যার সদস্যদের পছন্দ-অপছন্দই নির্ধারণ করবে সংস্কারের পরিণতি। আমরা আশা করতে পারি, কিছু সংস্কার অন্তত কার্যকর হবে। কিন্তু দিনের শেষে সংসদের চরিত্র না বদলালে এবং সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে, আমরা আবার একটি এলিট-নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মুখোমুখি হবো। যে গণতন্ত্র আমাদের বহু সমস্যার জন্ম দিয়েছে।

উন্নয়নের সংকট প্রসঙ্গে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, এর প্রধান কারণগুলোর একটি হলো দুর্বল শাসন ব্যবস্থা। দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ও অপশাসন নিয়ে কোনো দিন সংসদে কার্যকর আলোচনা হয়নি। বাজেট পর্যন্ত সংসদে ঠিকভাবে আলোচিত হয়নি। সরকারি অর্থনীতি, উন্নয়ন নীতি এবং দুর্নীতি কোনোটিই সংসদে আলোচিত হয়নি। জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকে বাংলাদেশে যে খেলাপি ঋণের সংকট শুরু হয়েছে এবং এত বছর ধরে চলে আসছে, তা নিয়ে সংসদে কখনও যথাযথ আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে কোনো অর্থবহ বা জোরালো বিতর্কও অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে সমন্বয় করা কত বড় সমস্যা।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘৩৫ বছর আগে যখন শাহাবুদ্দিন সরকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব ছিলাম। তখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির আমন্ত্রণে একই বিষয়ে অর্থাৎ গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। গত ৩৫ বছরে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় কী মূল্য সংযোজন হলো, তা বুঝতে মূলত এই অধিবেশনে এসেছেন তিনি। যদিও গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বিতর্ক বহু পুরোনো। বহু বছর ধরে গণন্ত্র ও উন্নয়নের বিতর্ক চলে আসছে। ভালো উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র প্রয়োজন। গত ১০ থেকে ১৫ বছর বাংলাদেশের উন্নয়নে নিজস্ব একটি বয়ান তৈরি করা হয়েছে। যেখানে উন্নয়নের নামে ভালো অবকাঠামো, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক সূচকের উন্নয়ন প্রাপ্তি হিসেবে বলা হয়েছে। কিন্তু সুশাসন পাওয়া যায়নি। মন্দ সরকার দিয়ে কীভাবে ভালো উন্নয়ন হতে পারে?

Please Share This Post in Your Social Media

সংসদ ক্রমে ধনী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে: রেহমান সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১০:০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, জাতীয় সংসদ ক্রমে প্রভাবশালী ধনী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে। তারাই রাষ্ট্রের নীতি ঠিক করেছে। এ কারণেই ভঙ্গুর গণতন্ত্র দেখা গেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক করতে না পারলে দেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আশা করা কঠিন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মত দিয়েছেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিয়ে আমরা যখন কথা বলি, তখন কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর বলি না। এর কারণ, আমরা কখনোই কার্যকর গণতন্ত্র পাইনি, যেখানে উন্নয়ন কেমন হবে এবং কোন ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন– তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে চিন্তাশীল বিতর্ক হয়। গত ৫০ বছরে এসব আলোচনা কখনোই টেবিলে আসেনি। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না এগুলো আলোচনায় আসে, ততক্ষণ সমস্যার সমাধানও সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের মাঝে গণতন্ত্র নেই। কেন্দ্রীয়ভাবে ওহি নাজিলের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন এখনও হয়নি।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিয়াল ফেলো সুলতান হাফেজ রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন এবং বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল না। একটি বড় ধরনের সংস্কার প্যাকেজ এখন দেশের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর কিছু হয়তো বর্তমান সরকার করে যেতে পারে, যদিও তাদের হাতে বাস্তবে খুব বেশি সময় নেই। শেষ পর্যন্ত এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে একটি নির্বাচিত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তেমন কেউ নেই। তারা যেসব সংস্কার প্রস্তাব করছে, তা কতটা গ্রহণ করবে আগামীর নির্বাচিত সরকার– সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আলোচনার এ পর্যায়ে মঞ্চে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান মনসুরকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, তিনি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করছেন এক ধরনের স্বাধীনতা নিয়েই। সেখানে একজন নির্বাচিত অর্থমন্ত্রী থাকলে এবং একটি পূর্ণ নির্বাচিত সরকার থাকলে একই স্বাধীনতা পাওয়া যেত?

অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও বলেন, ধারণা দেওয়া হয়েছে, সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকারকে আলোকিত করবে। তারা ভালো শাসন ব্যবস্থার পথে এগোবে এবং আমরা একই সঙ্গে ভালো গণতন্ত্র ও ইতিবাচক উন্নয়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করব। ধারণাটি আজকাল এক ধরনের রোমান্টিক চিন্তার অংশ হয়ে গেছে, যা একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ছবি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তারা আসলে কী করবে? তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য কী? রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই হবে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেকটি বড় সমস্যা ছিল সংসদের অকার্যকারিতা। আসলে কখনোই এমন সংসদ পাইনি, যেখানে শক্তিশালী বিরোধী দল পাঁচ বছর ধরে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় রাখবে এবং নীতিনির্ধারণী সব প্রশ্নে বিতর্ক হবে। এগুলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। আমাদের অভিজ্ঞতা মূলত ‘নির্বাচনী গণতন্ত্র’। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে সরকার পরিবর্তন করেছি। সেখানেও নানা সমস্যা ছিল। ব্যতিক্রম হলো– ২০০১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিনা বাধায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপির কাছে। ৫২ বছরের ইতিহাসে এটুকুই আমাদের সাফল্য।

বর্তমান সংস্কার এজেন্ডার ঘাটতি তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা কীভাবে গণতান্ত্রিক করা যায় এবং কীভাবে এমন অবস্থা তৈরি করা যায় যাতে বিপুল ধন-সম্পদ ছাড়া সাধারণ মানুষও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে–এসব বিষয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশন কিছুই বলেনি। মনে রাখতে হবে, ১৯৭০ সালে যারা নির্বাচন করেছেন, তাদের অনেকেই বাস ও রিকশায় চড়ে এলাকায় যেতেন। তাদের সম্পদ সীমিত ছিল। এখন নিজের ‘পাজেরো’ ছাড়া কেউ নির্বাচন করার কথা কল্পনাও করতে পারেন না।

তাঁর মতে, ‘যতক্ষণ না নির্বাচন এমন হবে যে, সমাজের সব স্তরের মানুষ সীমিত সামর্থ্য নিয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, ততক্ষণ নির্বাচিত সংসদে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিই আধিপত্য বিস্তার করবে। নীতি প্রণয়ন হবে তাদের স্বার্থকে কেন্দ্র করে। অতএব, বাস্তবতা হলো সংস্কার টেবিলে আসবে, কিছু পাস হবে এবং কিছু বাস্তবায়ন করবে একটি নির্বাচিত সংসদ, যার সদস্যদের পছন্দ-অপছন্দই নির্ধারণ করবে সংস্কারের পরিণতি। আমরা আশা করতে পারি, কিছু সংস্কার অন্তত কার্যকর হবে। কিন্তু দিনের শেষে সংসদের চরিত্র না বদলালে এবং সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে, আমরা আবার একটি এলিট-নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মুখোমুখি হবো। যে গণতন্ত্র আমাদের বহু সমস্যার জন্ম দিয়েছে।

উন্নয়নের সংকট প্রসঙ্গে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, এর প্রধান কারণগুলোর একটি হলো দুর্বল শাসন ব্যবস্থা। দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ও অপশাসন নিয়ে কোনো দিন সংসদে কার্যকর আলোচনা হয়নি। বাজেট পর্যন্ত সংসদে ঠিকভাবে আলোচিত হয়নি। সরকারি অর্থনীতি, উন্নয়ন নীতি এবং দুর্নীতি কোনোটিই সংসদে আলোচিত হয়নি। জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকে বাংলাদেশে যে খেলাপি ঋণের সংকট শুরু হয়েছে এবং এত বছর ধরে চলে আসছে, তা নিয়ে সংসদে কখনও যথাযথ আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে কোনো অর্থবহ বা জোরালো বিতর্কও অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে সমন্বয় করা কত বড় সমস্যা।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘৩৫ বছর আগে যখন শাহাবুদ্দিন সরকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব ছিলাম। তখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির আমন্ত্রণে একই বিষয়ে অর্থাৎ গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। গত ৩৫ বছরে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় কী মূল্য সংযোজন হলো, তা বুঝতে মূলত এই অধিবেশনে এসেছেন তিনি। যদিও গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বিতর্ক বহু পুরোনো। বহু বছর ধরে গণন্ত্র ও উন্নয়নের বিতর্ক চলে আসছে। ভালো উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র প্রয়োজন। গত ১০ থেকে ১৫ বছর বাংলাদেশের উন্নয়নে নিজস্ব একটি বয়ান তৈরি করা হয়েছে। যেখানে উন্নয়নের নামে ভালো অবকাঠামো, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক সূচকের উন্নয়ন প্রাপ্তি হিসেবে বলা হয়েছে। কিন্তু সুশাসন পাওয়া যায়নি। মন্দ সরকার দিয়ে কীভাবে ভালো উন্নয়ন হতে পারে?