ঢাকা ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার ৮ সাংবাদিক

দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৩৭ Time View

কুমিল্লার দেবীদ্বারে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া ৮ সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৮ সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের মোবাইল, ক্যামেরা এবং নগদ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় এলাহাবাদ পূর্বপাড়া (উটখাড়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক দিনকালের প্রতিনিধি পারভেজ সরকার, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি নেছার উদ্দিন, দৈনিক আজকের কুমিল্লার প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন, দৈনিক ডাক প্রতিদিনের প্রতিনিধি মো. আনোয়ার হোসেন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক, দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম মারুফ, দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার মো. শাহজালাল ও এটিএন (এমসিএল) নিউজের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সজিব।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের উটখাড়া মাজারের দায়িত্বে নিয়োজিত খাদেম মৃত আব্দুল খালেক ফকিরের স্ত্রী কমলা খাতুনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী সাহেব বাড়ির শাহজাহানের পরিবারের দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন কমলা খাতুনের পরিবারের উপর একাধিকবার হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশও হয়। সালিশে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই ঘটনার জেরে ৩টি মামলা দায়ের হয়। মামলাগুলো তদন্তাধীন।

এরই মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর কমলা খাতুনের বসতবাড়ির চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি পাকা দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে দেয় শাহজাহান। এ ঘটনায় উটখাড়া মাজারের খাদেম কমলা খাতুনের নাতি সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবরে আবেদন করেন। এ ঘটনায় দেবীদ্বার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন তদন্ত করে শেষে স্থানীয় এলাহাবাদ ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার লিটন মিয়াকে দায়িত্ব দেন।

লিটন মেম্বার বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় এলাহাবাদ পূর্বপাড়া (উটখাড়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সালিশ ডাকেন। সালিশে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বিদ্যমান ছিল।

ওই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া ৮ সাংবাদিক সালিশের অদূরে হাকিম মিয়ার চা দোকানে বসে খোঁজখবর নিচ্ছিল। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতির সংবাদে সাহেব বাড়ির শাহজাহান (৪৫), জসীম উদ্দিন (৩০), সাগর (২৫), মজলু (৩০), বিল্লালের (২৭) নেতৃত্বে প্রায় ২৫/৩০ জন দৌড়ে গিয়ে অতর্কিতভাবে সশরীরে হামলা চালায়। সাংবাদিকরা তাদের ওপর হামলার কারণ জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়েই তাদের বেধড়ক মারধরই করে এবং তাদের মোবাইল, ক্যামেরা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে হামলাকারীরা সালিশে উপস্থিত হওয়া সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের বাবা মো. জাকির হোসেনের (৫০) মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ছাড়া সোহরাবের মা নার্গিস বেগম (৪২), স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারকে (২০) পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে এবং তার ছোট বোন রুমি আক্তারের (১৮) হাত ভেঙে দেয়।

জানা গেছে, হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক পারভেজ সরকার, নেছার উদ্দিন, সোহরাব হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন ও সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের বাবা মো. জাকির হোসেন, মা নার্গিস বেগম ও তার ছোট বোন রুমি আক্তারকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, আমাদের এক সহকর্মী সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের পরিবারকে তাদের বাড়ির রাস্তা প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ করে জিম্মি করে রাখে। ওই ঘটনায় আজ গ্রাম্য সালিশ বসার কথা। আমরা ৮ সাংবাদিক রাস্তা বন্ধের বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাই। সালিশ বসার ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে হাকিমের চা দোকানে বসে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ ২৫-৩০ জন এসে কোনো কথা না বলেই আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের মোবাইল, ক্যামেরা, টাকা ছিনিয়ে নেয়। মারাত্মক আহতদের দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাই।

হামলাকারীদের পক্ষের শাহজাহানসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে স্থানীয় ইউপি মেম্বার লিটন মিয়া বলেন, ‘মাজারের মোয়াল্লী কমলা খাতুনের বাড়ির রাস্তা প্রতিপক্ষের লোকজন পাকা দেয়াল তৈরি করে বন্ধ করে রাখে। ওই ঘটনার মীমাংসায় আজ সালিশ ডাকি। সালিশের আগেই অদূরে একটি চা দোকানে মারামারি শুরু হয়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের রক্ষার চেষ্টা কারি।’

এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, আমাদের পুলিশ ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালে চিকিৎসারত সাংবাদিকদের খোঁজখবর নিয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

Please Share This Post in Your Social Media

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার ৮ সাংবাদিক

দেবীদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
Update Time : ১২:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

কুমিল্লার দেবীদ্বারে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া ৮ সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৮ সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের মোবাইল, ক্যামেরা এবং নগদ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় এলাহাবাদ পূর্বপাড়া (উটখাড়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক দিনকালের প্রতিনিধি পারভেজ সরকার, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি নেছার উদ্দিন, দৈনিক আজকের কুমিল্লার প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন, দৈনিক ডাক প্রতিদিনের প্রতিনিধি মো. আনোয়ার হোসেন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক, দৈনিক কালবেলার প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম মারুফ, দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার মো. শাহজালাল ও এটিএন (এমসিএল) নিউজের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সজিব।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের উটখাড়া মাজারের দায়িত্বে নিয়োজিত খাদেম মৃত আব্দুল খালেক ফকিরের স্ত্রী কমলা খাতুনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী সাহেব বাড়ির শাহজাহানের পরিবারের দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন কমলা খাতুনের পরিবারের উপর একাধিকবার হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশও হয়। সালিশে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ওই ঘটনার জেরে ৩টি মামলা দায়ের হয়। মামলাগুলো তদন্তাধীন।

এরই মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর কমলা খাতুনের বসতবাড়ির চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি পাকা দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে দেয় শাহজাহান। এ ঘটনায় উটখাড়া মাজারের খাদেম কমলা খাতুনের নাতি সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবরে আবেদন করেন। এ ঘটনায় দেবীদ্বার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন তদন্ত করে শেষে স্থানীয় এলাহাবাদ ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার লিটন মিয়াকে দায়িত্ব দেন।

লিটন মেম্বার বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় এলাহাবাদ পূর্বপাড়া (উটখাড়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সালিশ ডাকেন। সালিশে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা বিদ্যমান ছিল।

ওই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া ৮ সাংবাদিক সালিশের অদূরে হাকিম মিয়ার চা দোকানে বসে খোঁজখবর নিচ্ছিল। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতির সংবাদে সাহেব বাড়ির শাহজাহান (৪৫), জসীম উদ্দিন (৩০), সাগর (২৫), মজলু (৩০), বিল্লালের (২৭) নেতৃত্বে প্রায় ২৫/৩০ জন দৌড়ে গিয়ে অতর্কিতভাবে সশরীরে হামলা চালায়। সাংবাদিকরা তাদের ওপর হামলার কারণ জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়েই তাদের বেধড়ক মারধরই করে এবং তাদের মোবাইল, ক্যামেরা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে হামলাকারীরা সালিশে উপস্থিত হওয়া সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের বাবা মো. জাকির হোসেনের (৫০) মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ছাড়া সোহরাবের মা নার্গিস বেগম (৪২), স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারকে (২০) পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে এবং তার ছোট বোন রুমি আক্তারের (১৮) হাত ভেঙে দেয়।

জানা গেছে, হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক পারভেজ সরকার, নেছার উদ্দিন, সোহরাব হোসেন, মো. আনোয়ার হোসেন ও সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের বাবা মো. জাকির হোসেন, মা নার্গিস বেগম ও তার ছোট বোন রুমি আক্তারকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, আমাদের এক সহকর্মী সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের পরিবারকে তাদের বাড়ির রাস্তা প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ করে জিম্মি করে রাখে। ওই ঘটনায় আজ গ্রাম্য সালিশ বসার কথা। আমরা ৮ সাংবাদিক রাস্তা বন্ধের বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে যাই। সালিশ বসার ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে হাকিমের চা দোকানে বসে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ ২৫-৩০ জন এসে কোনো কথা না বলেই আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের মোবাইল, ক্যামেরা, টাকা ছিনিয়ে নেয়। মারাত্মক আহতদের দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাই।

হামলাকারীদের পক্ষের শাহজাহানসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে স্থানীয় ইউপি মেম্বার লিটন মিয়া বলেন, ‘মাজারের মোয়াল্লী কমলা খাতুনের বাড়ির রাস্তা প্রতিপক্ষের লোকজন পাকা দেয়াল তৈরি করে বন্ধ করে রাখে। ওই ঘটনার মীমাংসায় আজ সালিশ ডাকি। সালিশের আগেই অদূরে একটি চা দোকানে মারামারি শুরু হয়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের রক্ষার চেষ্টা কারি।’

এ বিষয়ে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, আমাদের পুলিশ ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালে চিকিৎসারত সাংবাদিকদের খোঁজখবর নিয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।