‘সংকটে পেরিয়েছে বিশ, একুশে সম্ভাবনা কতটুকু

- Update Time : ০৭:২৪:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
- / ৭০ Time View
প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পেরিয়ে ২১ বছরে পদার্পণ করলো সময়ের সেরা অবহলিত সম্ভবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়টি । ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ সংসদে উত্থাপিত হয়।ওই বছরেরই ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।তবে এবার কালীপূজার জন্য তা ২২ তারিখে উৎযাপিত হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যাত্রা বহু পুরোনো। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রার ২০ বছর পার হলেও সংকটে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৮টি বিভাগ ও দুইটি ইন্সটিটিউটে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি, শিক্ষক রয়েছে ৭ শতাধিক। তবে মাত্রে সাড়ে সাত একর জায়গায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সংকট হলো আবাসন ।শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে তবুও প্রাপ্তির খাতায় তেমন কিছু যুক্ত হয়নি।নেই পর্যাপ্ত পরিবহন, ক্যান্টিন, ল্যাব, লাইব্রেরি ও মেডিক্যাল সুবিধাও।
জানা যায়, কলেজ থাকাকালীন সময়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়িতে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা যেসব ছাত্রাবাস তৈরি করেছিলেন, ১৯৮৫ সালের পর থেকে সেগুলো একে একে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা আন্দোলনের মুখে হল উদ্ধারে সরকার একাধিক কমিটি গঠন করলেও বেদখল হওয়া ১১টি হলের মধ্যে দুটি ছাড়া বাকিগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
লাগাতার আন্দোলনের পর ২০১৪ সালে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এটিই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র হল ছিল।লিয়াকত এভিনিউয়ের সেই হলে ২০২২ সালের মার্চে ৬২৪টি আসনের বিপরীতে ১২০০ জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা হয়। তবে বর্তমানে আসসুন্নাহর সাথে যৌথভাবে ৭শ শিক্ষার্থীদের অস্থায়ীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়াও প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া।অবকাশ ভবনে অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়াটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন নেই কোন ভর্তুকি ব্যবস্থাও নতুন করে একটি ফুডকোর্ট নির্মাণ হলেও শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় তা যথেষ্ট নয়। এদিকে ক্যাফেটেরিয়ায় নিম্নমানের খাবার উচ্চ মূল্যে কিনতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আসন সংখ্যা মাত্র ৩৫০ টি। যার ফলে অনেক মেধাবী সেখানে পড়াশুনার সুযোগ পায় না আর পেলেও একপ্রকার গাদাগাদি করেই কেদ্রীয় লাইব্রেরিতে বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। আসন সংকট ছাড়াও নেই পর্যাপ্ত রেফারেন্স বই, রেফারেন্স রুমে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়েই লিখিত অধিকাংশ বই এছাড়াও নেই সুপেয় নিরাপদ পানির পর্যাপ্ত সর্বরাহ ওয়াশরুমে নেই সাবান এমন নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। পড়াশোনার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার তাও পর্যাপ্ত নেই লাইব্রেরিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে নেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা, বসার জায়গা এতোটাই কাছাকাছি যে প্রতি আসনে বসে পড়াশোনা করা কষ্টসাধ্য ।আবাসন, বাস, ২১ টি বাস রয়েছে এর মধ্যে ১১ টি বিআরটিসির বাকিগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব, বাসগুলো ১৭ টি রুটে প্রতিনিয়ত চলাচল করে। লাইব্রেরিতে নেই পর্যাপ্ত ও যুগোপযোগী কোন বই রয়েছে মান্ধাতা আমলের কিছু বই, লাইব্রেরিতে অধিকাংশ বই মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিব সম্পর্কিত। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিকেল সেন্টারে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার জন্য রয়েছে একটিমাত্র মেডিকেল সেন্টার। মেডিকেল সেন্টার যাত্রা শুরু করে ২০০৫ সালে। যাত্রালগ্নে ছিলেন দু’জন চিকিৎসক, বিশ বছর পর এসেও এই সংখ্যাটা একই আছে। দৈনিক প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই সেন্টার থেকে চিকিৎসা নেন। কিন্তু লোকবল আর বরাদ্দের অভাবে শিক্ষার্থীদের যথাযথ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এখানে মাথাব্যথা, জ্বর ও পেট খারাপের ওষুধ ছাড়া কিছুই মেলে না। মানুষের মৌলিক চাহিদা চিকিৎসাসেবার কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়নে পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার জবির মেডিকেল সেন্টারকে কেউ কেউ মজা করে নাপা সেন্টারও বলে থাকেন।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ হোসেন বলেন, মেডিকেল সেন্টার শুধু নামে মাত্র মেডিকেল, এখানে প্রয়োজনীয় অনেককিছুই পাওয়া যায় না,আমাদের জন্য একটাও এম্বুলেন্স নেই যদি কেউ গুরতর অসুস্থ হয় লোকাল বাস ছাড়া তার জন্য কিছু নাই, সাথে আছে পুরান ঢাকার জ্যাম।
২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। প্রায় ২০০ একর জমিতে এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। চার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও এখনো শেষ হয়নি প্রথম ধাপের কাজ। তবে অনুমোদনের পর সাত বছর পার হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।সবশেষ কয়েকটি আন্দলনের প্রেক্ষিতে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ারনীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তবুও যেন অনিশ্চয়তা।
বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিব বলেন, আমরা আবাসনের জন্য দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছি সালে করছি সবশেষ যমুনা অভিমুখে আমারা গিয়েছিলাম সরকার আমাদের বিভিন্ন সময়েই আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু কাজের বেলায় তেমন কিছুই হয়নি। আমাদের রফিক ভবন প্রায় ভেঙে পড়ার মত অবস্থা কিন্তু প্রশাসন বলছে তাদের পর্যাপ্ত বাজেট নাই এই হল অবস্থা।মার্কেটিং বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত নাই নতুন করে যুক্ত হয়েছে শিক্ষার মান ঘাটতি ।বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ইমন মোল্লা বলেন, ২০ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট কাটেনি এখনও। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে সুযোগ সুবিধা পায় তা থেকে বঞ্চিত আমরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই অতিদ্রুত এই মৌলিক সমস্যা গুলোর সমাধান হোক।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, দীর্ঘ সতেরটি বছর এই বিশ্ববিদ্যালয় নানাদিক দিয়ে পিছিয়ে ছিল কারণ এটি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে, স্বৈরাচারী হাসিনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রণয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবদিক থেকেই বঞ্চিত করেছে। বর্তমান প্রশাসনের কাছে আহ্বান যে তাড়াতাড়ি আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করবে। আমরা বরাবরই প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
প্রাপ্তি ও সম্ভবনার বিষয়ে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো.তাজাম্মুল হক বলেন, বিশতম বছর বর্থ্যতা বলা যাবে না আমরা অনেক কাজ করেছি আশা করি আমাদের এই কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশতম বছরে যে যে সম্ভাবনা রয়েছে তা হলো, আমরা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় ফ্রেজের কাজ করব খুব তাড়াতাড়ি সম্ভবত ডিসেম্বর থেকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষার জকসু নির্বাচন হবে নভেম্বরে, আমরা অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল দিব আশা করি এবং ক্যাস্পাসের পাশে একটি আধুনিক টিএসসি দিব ইন শা আল্লাহ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.রেজাউল করিম বলেন, ২০ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কারণ বিগত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি। আমরা সকল কাজ শুরু করে দিয়েছি ,আসলে সবকিছু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আমরা ইতিমধ্যে সকল পরিকল্পনা সেরে ফেলেছি, খুব শীঘ্রই অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। তবে কিছু কিছু সমস্যা আমাদের হাতের বাইরে যার বিকল্প পথও আমরা ভেবে ফেলেছি। আশা করি একে একে সকল সমস্যার সমাধান হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়