ঢাকা ১১:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

মো:নাজমুল মিয়া,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৫:০৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৪০ Time View

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ।

নতুন বছরের প্রথম দিনেই পর্দা উঠতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক আয়োজন—৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৬। মেলাকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার (বিবিসিএফইসি)।

পূর্বাচলের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে হাতুড়ি-পেরেকের শব্দ। লোহার ফ্রেমে ঝালাইয়ের আগুনের ঝলকানি আর শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রমে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণের কাজ। কোথাও বিশাল কাঠামো দাঁড় করানো হচ্ছে, আবার কোথাও চলছে রঙের শেষ প্রলেপ। নির্মাণকাজ শেষ হলেই শুরু হবে আলোকসজ্জা ও নান্দনিক সাজসজ্জা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৩০০টিরও বেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে। ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা নিয়ে অংশ নিচ্ছে। ফলে এবারের মেলা শুধু কেনাবেচার জায়গা নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে।

‘বাংলাদেশ স্কয়ার’—ইতিহাস থেকে উন্নয়নের গল্প

মেলার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘বাংলাদেশ স্কয়ার’। এখানে এক ছাদের নিচে তুলে ধরা হবে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিক। স্বাধীনতার গল্প থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার চিত্র উপস্থাপন করা হবে এই স্কয়ারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে মেলার আয়োজন করছে, যা দেশের রপ্তানি ও শিল্পখাতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

উদ্বোধন ও প্রত্যাশা

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ জানান, আগামী ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ৩০তম আসর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
তিনি আরও বলেন, “এ বছর প্যাভিলিয়ন, স্টল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৩৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। দেশীয় রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি বিদেশি অংশগ্রহণ থাকায় এবারের মেলা পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে।”

নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা

নির্বাচনকালীন সময়কে সামনে রেখে মেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মেলাজুড়ে থাকবে সিসিটিভি নজরদারি, নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা টিম।
এছাড়া নকল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রি রোধে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানহীন পণ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইপিবি।

যাতায়াত ও বিনোদন

দর্শনার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে বিশেষ বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু থাকবে। পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং সেবাও ব্যবহার করা যাবে। মেলায় প্রবেশের জন্য আধুনিক ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু থাকছে। টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা।
শিশুদের জন্য থাকছে দুটি শিশু পার্কসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন, যা মেলাকে পরিবারবান্ধব করে তুলবে।

সব প্রস্তুতি যখন শেষ প্রান্তে, তখন পূর্বাচলের প্রতিটি হাতুড়ির আঘাত যেন জানান দিচ্ছে—নতুন বছরের শুরুতে আবারও ফিরছে বাণিজ্য, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার মহোৎসব। মাসব্যাপী এই আয়োজন বাংলাদেশের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী হয়ে উঠবে—এমন প্রত্যাশাই এখন সবার।

Please Share This Post in Your Social Media

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

মো:নাজমুল মিয়া,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
Update Time : ০৫:০৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নতুন বছরের প্রথম দিনেই পর্দা উঠতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক আয়োজন—৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২৬। মেলাকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার (বিবিসিএফইসি)।

পূর্বাচলের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে হাতুড়ি-পেরেকের শব্দ। লোহার ফ্রেমে ঝালাইয়ের আগুনের ঝলকানি আর শ্রমিকদের নিরলস পরিশ্রমে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণের কাজ। কোথাও বিশাল কাঠামো দাঁড় করানো হচ্ছে, আবার কোথাও চলছে রঙের শেষ প্রলেপ। নির্মাণকাজ শেষ হলেই শুরু হবে আলোকসজ্জা ও নান্দনিক সাজসজ্জা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৩০০টিরও বেশি স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে। ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা নিয়ে অংশ নিচ্ছে। ফলে এবারের মেলা শুধু কেনাবেচার জায়গা নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে।

‘বাংলাদেশ স্কয়ার’—ইতিহাস থেকে উন্নয়নের গল্প

মেলার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ‘বাংলাদেশ স্কয়ার’। এখানে এক ছাদের নিচে তুলে ধরা হবে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিক। স্বাধীনতার গল্প থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার চিত্র উপস্থাপন করা হবে এই স্কয়ারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে মেলার আয়োজন করছে, যা দেশের রপ্তানি ও শিল্পখাতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

উদ্বোধন ও প্রত্যাশা

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ জানান, আগামী ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ৩০তম আসর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
তিনি আরও বলেন, “এ বছর প্যাভিলিয়ন, স্টল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৩৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। দেশীয় রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি বিদেশি অংশগ্রহণ থাকায় এবারের মেলা পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে।”

নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা

নির্বাচনকালীন সময়কে সামনে রেখে মেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মেলাজুড়ে থাকবে সিসিটিভি নজরদারি, নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা টিম।
এছাড়া নকল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রি রোধে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানহীন পণ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইপিবি।

যাতায়াত ও বিনোদন

দর্শনার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে বিশেষ বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু থাকবে। পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং সেবাও ব্যবহার করা যাবে। মেলায় প্রবেশের জন্য আধুনিক ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু থাকছে। টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা।
শিশুদের জন্য থাকছে দুটি শিশু পার্কসহ নানা বিনোদনমূলক আয়োজন, যা মেলাকে পরিবারবান্ধব করে তুলবে।

সব প্রস্তুতি যখন শেষ প্রান্তে, তখন পূর্বাচলের প্রতিটি হাতুড়ির আঘাত যেন জানান দিচ্ছে—নতুন বছরের শুরুতে আবারও ফিরছে বাণিজ্য, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার মহোৎসব। মাসব্যাপী এই আয়োজন বাংলাদেশের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী হয়ে উঠবে—এমন প্রত্যাশাই এখন সবার।