আবু সাঈদের বাবা
বাংলার মাটিতে হাসিনার ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করতে হবে
- Update Time : ০৭:২৬:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
- / ৫৩ Time View
শহীদ আবু সাঈদের পরিবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা পলাতক শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানান।

রায়ের বিষয়টি তুলে ধরে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়ায় নিজ বাড়িতে আবু সাঈদের বাবা বলেন, ‘অন্তরটা ঠান্ডা হইল। আমি খুশি হইছি। ভারত থাকি আনি অতি দ্রুতগতিতে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে বাংলার মাটিতে। তাহলে আমি আরও খুশি হব।’ আর আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বললেন, ‘আমার ছেলে নাই। আমাক খারাপ লাগছে। ফাঁসির রায় যেন কার্যকর হয়।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের খবর শুনে শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারটির পক্ষ থেকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ফ্যাসিবাদী সিস্টেম কায়েম করে গুম, খুন করেছেন মানুষকে। আয়নাঘরে বন্দী করেছেন। জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে নিরস্ত্র আবু সাঈদকে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ গণহত্যা শুরু হয়। সর্বশেষ শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তাই তাঁকে দেশে এনে রায় কার্যকরের দাবি করেন তিনি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমি রায়ে খুশি কিন্তু বিচার দেখতে চাই। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ আমার ছেলেকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে। আমি হুকুমদাতাসহ পুলিশের বিচার চাই। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। হত্যা করার অনুমতি দিয়েছিল বলেই আমার ছেলের মতো হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে হাত পা হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। কারো কারো চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে এখনো অনেকে কাতরাচ্ছে। ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে নিয়ে এসে রায় কার্যকর করতে হবে।
আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা সবার বিচার চাই। যারা হুকুম দিয়েছে, যারা গুলি করেছে সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে। আমি মা আজ বুঝতেছি ছেলে হারানোর কষ্ট। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আমার মতো অনেক মা, বোন, ভাই সন্তান হারিয়েছে, স্বামীকে হারিয়েছে। অনেক জীবন সংসার শেষ হয়ে গেছে। এসবের বিচার হতে হবে।
আবু সাঈদের বড়ভাই আবু হোসেন বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করলে হবে না বিচার কার্যকর করতে হবে। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী সিস্টেমে গুম খুন করেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র জনতাকে নির্মমভাবে গণহত্যা করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। আজ প্রথম রায় হয়েছে। শুধু রায় নয়, এটি কার্যকর করতে হলে শেখ হাসিনাকে এই দেশের মাটিতে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদী ও আরেক বড়ভাই রমজান আলী বলেন, আবু সাঈদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো বিশ্ব দেখেছে। প্রকাশ্যে পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং শহীদ করে দেয়া হয়েছে। সেই ভিডিও ফুটেজ সবাই দেখেছে। এটা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাদের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ সাহস করে গুলি করে আবু সাঈদকে শহীদ করে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা বুঝতেছেন ভাই হারানো, বোন হারানো, মা হারানো, স্বামী হারানো কত যন্ত্রণার। আমরা এমন বিচার দেখতে চাই, খুনিরা যে দেশেই পালিয়ে থাকুক তাদের ধরে এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বাংলার মানুষকে দেখাতে হবে এমন স্বৈরাচারের বিচার কী হতে পারে।
এদিকে রায়ের পর আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন শহীদ আবু সাঈদের বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সদস্যসচিব রহমত আলী বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে আবু সাঈদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর ফাঁসির রায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর সহযোদ্ধারা খুশি।
রায় ঘোষণার পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকাত আলীও।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আবু সাঈদের গ্রামের স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনাসহ এসব হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আমরা রায়ে খুশি কিন্তু তা যদি কার্যকর না হয় তাহলে সবকিছুই বৃথা যাবে। যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার জন্য প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। শুধু তাই নয়, রায়ের পর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে শহীদ ও আহতসহ জুলাই যোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনো ভাবেই ছাড় দেয়া কিংবা পুনর্বাসন করা যাবে না।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি এই মামলার অন্য আসামি হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই পাঁচ অভিযোগ হলো- উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে। আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































