শীত আরও বাড়তে পারে
- Update Time : ০১:৩০:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ২৯ Time View
ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রোববার সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সদরঘাট থেকে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেয়। একই নির্দেশনা দেশের অন্য নদীবন্দরেও দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘোষণায় রাজধানীর সদরঘাটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
এদিকে কুয়াশার প্রভাব পড়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় গত শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে নামতে পারেনি। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১টা থেকে রোববার ভোর ৬টার মধ্যে অন্তত ছয়টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ঢাকায় নামার কথা ছিল। তবে রানওয়ে স্পষ্ট না থাকায় ফ্লাইটগুলো ঢাকার আকাশে চক্কর দিতে থাকে এবং পরে দেরিতে অবতরণ করে। কিছু ফ্লাইট কুয়াশার পূর্বাভাস পেয়ে নির্ধারিত সময়ের পর ঢাকা অভিমুখে রওনা হয়।
ঘন কুয়াশার কারণে আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে প্রায় ১১ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ফেরি চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক (আরিচা) আবু আব্দুল্লাহ জানান, পদ্মা নদীতে তীব্র কুয়াশা থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে শনিবার রাত ৯টা থেকে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মুহম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর এতটাই কুয়াশা পড়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীতেই সামান্য দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না। বড় নদীগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। এ পরিস্থিতিতে লঞ্চ চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কুয়াশা না কাটা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ওই দুর্ঘটনার পর ঘন কুয়াশায় নৌচলাচল নিয়ে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নিকলীতে
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী এলাকায়, ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, নীলফামারীর ডিমলা, শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, যশোরসহ মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির ঘরে ঘোরাফেরা করছে। রাজধানী ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক বলেন, কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ধারাবাহিক কমছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। সামনে আরও তাপমাত্রা কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমান শীতপ্রবাহের প্রভাব আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া জানুয়ারিতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
জনজীবনে ধাক্কা
ঢাকাসহ সারাদেশে শীতের প্রকোপ আরও বেড়েছে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তাপমাত্রা অনেকখানি নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাস। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, বাড়ছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু, বয়স্ক ও খেটে খাওয়া মানুষ।
বগুড়ার নাজাগড় শ্রমিক বাজারে দুপুর পর্যন্ত বসেও কাজ পাননি অনেক দিনমজুর। কাহালুর বীরকেদার এলাকার মহসিন আলী বলেন, প্রতিদিন যাতায়াতে ৬০ টাকা খরচ হয়। শীতের কারণে টানা তিন দিন কাজ নেই। আশায় বসে থাকি; কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয়।
রিকশাচালক মিনহাজুল ইসলাম জানান, আগে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো। এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি হয় না। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
একই চিত্র নাটোর, সিরাজগঞ্জের চলনবিলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। শীতের কারণে বোরো বীজতলা তৈরি ও জমিতে ধান রোপণের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক জায়গায় মানুষ আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হকার্স মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানে গরম কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। লেপ-তোশক তৈরির কারখানায়ও বেড়েছে ব্যস্ততা।



























































































































































































