ঢাকা ০১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের পিকনিকের কথা বলে আদালতে নিলেন প্রধান শিক্ষক

নওরোজ ডেস্ক
  • Update Time : ০৪:২৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৭ Time View

পিকনিকের কথা বলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আদালতে নিয়ে ছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের একটি মামলার সাক্ষ্য দেওয়ালেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের পাচুরিয়া মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা জানান, সোমবার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পাবনার রানা ইকো পার্কে পিকনিকের উদ্দেশে ৩টি বাসযোগে পাবনা শহরে রওনা হন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা। এ উপলক্ষে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। গন্তব্য রানা ইকো পার্ক হলেও প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান পাবনা আদালতে। সেখানে কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছামতো কথা শিখিয়ে দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিতে বলেন। মূলত প্রধান শিক্ষক তার ব্যক্তিগত শত্রুতাবশত জনৈক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা ইভটিজিং মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করান মেয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে।

দীর্ঘ সময় আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান করায় অনেক ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে আতংকিত হয়ে পরে। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে বাসায় ফোন করে তাদের অভিভাবকদের বিষয়টি জানায়। ঘটনাটি এলাকার সকল অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার পর অভিভাবক ও শিক্ষক পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে

শফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান, আমার মেয়ে এই বিদ্যালয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। কয়েকদিন আগে আমার মেয়ে সানজিদা মিম আমাকে বললো আব্বু আমাদের স্কুল থেকে স্যারেরা পিকনিকে নিয়ে যাবে, এজন্য ২০০ টাকা চাঁদাও আমার থেকে নিয়েছে। আজ দুপুরে ওরা পিকনিকে যাওয়ার পরে জানতে পারলাম হেড মাস্টার ছেলে-মেয়েদের পাবনা কোর্টে নিয়ে গেছে। আমি তো বিষয়টি জানার পরে আতংকিত হয়ে পড়েছি। পিকনিকের কথা বলে আমার মেয়েকে কোর্টে কেন নিয়ে গেল। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিচার চাই।

মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিদ্যালয়ের মেয়েদের ইভটিজিং করার ঘটনায় কয়েকমাস আগে চাটমোহর থানায় আমি একটি অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমানে অভিযোগটি পাবনা আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলায় সোমবার ১৫ জন মেয়ের আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের তারিখ ধার্য ছিল। পাবনায় মেয়েদের সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি সব ছাত্রছাত্রীরা জানার পরে তারাও তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে পাবনা আদালতে যেতে চায়। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই দুইশ টাকা করে চাঁদা তুলে এদিন তারা পাবনা রানা ইকোপার্কে পিকনিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারাই বাস ভাড়া করেছে, তারাই সব আয়োজন করেছে। আমি শুধু পিকনিক স্পটে যাওয়ার আগে কোর্টে কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়ে আদালতে সেই মামলার সাক্ষ্য প্রদান করার ব্যবস্থা করিয়েছি। বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছিলাম।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মগরেব আলি জানান, মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, পাবনা আদালতে সাক্ষ্য আছে শিক্ষার্থীদের। তবে পিকনিকের বিষয়টি তিনি আমাকে কিছু বলেননি। আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের কথা বলে সব শিক্ষার্থীকে আদালতে নিয়ে তিনি ঠিক করেননি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নওরোজ/এসএইচ

Please Share This Post in Your Social Media

শিক্ষার্থীদের পিকনিকের কথা বলে আদালতে নিলেন প্রধান শিক্ষক

নওরোজ ডেস্ক
Update Time : ০৪:২৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পিকনিকের কথা বলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আদালতে নিয়ে ছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের একটি মামলার সাক্ষ্য দেওয়ালেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের পাচুরিয়া মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা জানান, সোমবার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পাবনার রানা ইকো পার্কে পিকনিকের উদ্দেশে ৩টি বাসযোগে পাবনা শহরে রওনা হন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা। এ উপলক্ষে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। গন্তব্য রানা ইকো পার্ক হলেও প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান পাবনা আদালতে। সেখানে কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছামতো কথা শিখিয়ে দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিতে বলেন। মূলত প্রধান শিক্ষক তার ব্যক্তিগত শত্রুতাবশত জনৈক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা ইভটিজিং মামলায় সাক্ষ্য প্রদান করান মেয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে।

দীর্ঘ সময় আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান করায় অনেক ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে আতংকিত হয়ে পরে। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে বাসায় ফোন করে তাদের অভিভাবকদের বিষয়টি জানায়। ঘটনাটি এলাকার সকল অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার পর অভিভাবক ও শিক্ষক পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে

শফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান, আমার মেয়ে এই বিদ্যালয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। কয়েকদিন আগে আমার মেয়ে সানজিদা মিম আমাকে বললো আব্বু আমাদের স্কুল থেকে স্যারেরা পিকনিকে নিয়ে যাবে, এজন্য ২০০ টাকা চাঁদাও আমার থেকে নিয়েছে। আজ দুপুরে ওরা পিকনিকে যাওয়ার পরে জানতে পারলাম হেড মাস্টার ছেলে-মেয়েদের পাবনা কোর্টে নিয়ে গেছে। আমি তো বিষয়টি জানার পরে আতংকিত হয়ে পড়েছি। পিকনিকের কথা বলে আমার মেয়েকে কোর্টে কেন নিয়ে গেল। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিচার চাই।

মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিদ্যালয়ের মেয়েদের ইভটিজিং করার ঘটনায় কয়েকমাস আগে চাটমোহর থানায় আমি একটি অভিযোগ দায়ের করি। বর্তমানে অভিযোগটি পাবনা আদালতে বিচারাধীন। সেই মামলায় সোমবার ১৫ জন মেয়ের আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের তারিখ ধার্য ছিল। পাবনায় মেয়েদের সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি সব ছাত্রছাত্রীরা জানার পরে তারাও তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে পাবনা আদালতে যেতে চায়। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই দুইশ টাকা করে চাঁদা তুলে এদিন তারা পাবনা রানা ইকোপার্কে পিকনিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারাই বাস ভাড়া করেছে, তারাই সব আয়োজন করেছে। আমি শুধু পিকনিক স্পটে যাওয়ার আগে কোর্টে কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়ে আদালতে সেই মামলার সাক্ষ্য প্রদান করার ব্যবস্থা করিয়েছি। বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছিলাম।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মগরেব আলি জানান, মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন, পাবনা আদালতে সাক্ষ্য আছে শিক্ষার্থীদের। তবে পিকনিকের বিষয়টি তিনি আমাকে কিছু বলেননি। আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের কথা বলে সব শিক্ষার্থীকে আদালতে নিয়ে তিনি ঠিক করেননি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নওরোজ/এসএইচ