শহীদ মিনারে গান, ড্রোন শো ও স্মৃতিচারণায় জুলাই স্মরণ

- Update Time : ০১:২৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
- / ২৭ Time View
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নতুন মোড় নেয় গত বছরের ১৪ জুলাই। মূলত সেই রাতের ঘটনাপ্রবাহই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সূচনা।
দিনটি স্মরণে সোমবার (১৪ জুলাই) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিল নানা আয়োজন। ‘মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম’ প্রতিপাদ্যে এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ এবং জনপ্রিয় শিল্পী সায়ান সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর সায়ান এককভাবে পরিবেশন করেন গণসংগীত ও জনপ্রিয় সংগীত।
‘জুলাই নারী দিবস’ উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রযোজিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় অনুষ্ঠানে। এরপর দেখানো হয় দুটি চলচ্চিত্র—‘দীপক কুমার গোস্বামী বলছেন’ এবং ‘জুলাই বিষাদসিন্ধু’।
অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের শহীদ পরিবার এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা স্মৃতিচারণা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সমাজকল্যাণ ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস শেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মো. মফিদুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। রাত সাড়ে ১১ টায় অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে শুরু হয় মিউজিক্যাল ‘ড্রোন শো’। দ্বিতীয় অংশে ফুটিয়ে তোলা হয় ১৪ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক বিস্ফোরণ।
বাংলাদেশ সরকার এবং চীন সরকারের যৌথভাবে ওড়ানো প্রায় ২ হাজার ড্রোন উড্ডয়নের মাধ্যমে জুলাইয়ের গল্প তুলে ধরা হয় বলে আয়োজকদের ভাষ্য।
প্রথম ধাপে দেখানো হয় কীভাবে বাংলাদেশ জুলাইয়ে এসে পৌঁছালো। দেখানো হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হওয়া গুম-খুনের চিত্র। আর দ্বিতীয় ধাপে দেখানো হয় কেমন করে ১৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হল।
এর আগে অনুষ্ঠানে গান এবং স্মৃতিচারণে উঠে আসে জুলাইয়ের নানা গল্প। গান শোনান সায়ান, এলিটা করিম ও পারসা মাহজাবীন। ‘ইলা লা লা’ এবং ‘এফ মাইনর’ ব্যান্ডের শিল্পীদের পরিবেশনাও ছিল।
জুলাইয়ের ঘটনাকে উপজীব্য করে নির্মিত কয়েকটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়। এর মধ্যে একটি তথ্যচিত্রে উঠে আসে বুয়েটে নিহত হওয়া আবরার ফাহাদের কথা।
অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের স্মৃতি তুলে ধরে বক্তব্য দেন জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া উমামা ফাতেমা ও নুসরাত তাবাসসুমসহ অনেকে।
জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক উমামা ফাতেমা বলেন, “জুলাই কারো একার না। জুলাই সবার, জুলাই পুরো বাংলাদেশের।”
জুলাই আন্দোলনের আরেক সংগঠক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, “২৪ জুলাইয়ের আগেও মেয়েদের রাজনীতি করা নিয়ে কটু কথা হত। ওই মেয়েটা রাজনীতি করে, মেয়েদের রাজনীতি করা যেন অপরাধ! দুঃখজনক; সেই কথা এখনো শুনতে হয়। পরিবর্তনটা হয়নি।
“মেয়েদের জন্য আলাদা করে একটা অনুষ্ঠান করতে হবে, এরকমটা আমরা চাই নাই। আমরা চেয়েছিলাম একটা পরিবর্তন হোক। জুলাইয়ের এতগুলো মেয়ে এখন কেন নাই, কেন তাদেরকে আলাদা করে এড্রেস করা লাগে? বাকি দিনগুলোতে তারা সম্মান পায় না? এই কথাগুলো বলা দরকার।”
জুলাইয়ে নারী হিসেবে নয়, নাগরিক হিসেবে পথে নেমেছিলেন বলেও জানান নুসরাত তাবাসসুম।
তিনি বলেন, “আমরা নাগরিকের দায়িত্ব থেকে আন্দোলন করেছি। কোনো কোনো ক্যাম্পাসে এখনো জুলাইয়ের নারীদের বহিষ্কার করে রাখা হয়েছে। সেই ক্যাম্পাসে আজ জুলাইয়ের নারীদের নিয়ে আয়োজনও হচ্ছে। সেই সব মায়েদের ধন্যবাদ জানাই, যারা তাদের সন্তানদের দেশের জন্য জীবন দেওয়ার সাহস যুগিয়েছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা ফেরদৌস বলেন, “নারীর অবমাননায় আমরা বুক চিতিয়ে দাঁড়াব। জুলাইয়ের ইতিহাসকে আমরা কখনোই কারো একার হতে দেব না।
“কোনো দিন আর এই মাটিতে স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না। জুলাইয়ে যেমন একটা কথা ছিল- ‘আসছে ফাগুনে আমরা হব দ্বিগুন’, এখন বলতে চাই আমরা হব শতগুণ।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি পুনর্জাগরণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সহযোগিতায় ছিল মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শারমীন এস মুরশিদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, ফরিদা আখতার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহাগী সামিহা, জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী তাসনিম, যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো পারভীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণা রিয়া, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ইভা, চট্টগ্রামের কলি কায়েস, নারায়ণগঞ্জের তুলারাম কলেজের জুলাই আন্দোলনের সংগঠক ফারহানা মালিক, মাদারীপুরের জুলাই আন্দোলনের আনিশা ও মালিহা।
এছাড়া বক্তব্য দেন নারী ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য অর্পিতা বিশ্বাস এবং সৌরভী আকন্দ প্রীতি।
অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় আবরার ফাহাদকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দিপক কুমার গোস্বামী স্পিকিং’ ও ‘জুলাই বিষাদ সিন্ধু’ চলচ্চিত্র।