শহীদ আবু সাঈদরা আমাদের প্রতিদিনের প্রেরণা : পরিবেশ উপদেষ্টা

- Update Time : ০৯:৩১:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
- / ১৯ Time View
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শহীদ আবু সাঈদ ও তার সহযোদ্ধারা যে আদর্শে জীবন দিয়েছেন, তা কেবল স্মরণীয় নয়—তা হোক আমাদের প্রতিদিনের প্রেরণা। তরুণ প্রজন্ম যেন মানবিকতা, সাহস ও ন্যায়ের পথে দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে— এই হোক আমাদের প্রত্যাশা। আবু সাঈদ ভয়ের মুখে দাঁড়িয়ে সাহস দেখিয়েছিল। তাঁর মৃত্যু ছিল এক বিপ্লবের সূচনা, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— পরিবর্তনের জন্য শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ।
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদত বার্ষিকী ও ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় তার বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের বাহিনীগুলো সরকারের নির্দেশে মানুষের বুকে গুলি মারে। ভূমিদস্যুর মুখে গুলি মারে না। পাথর ব্যবসায়ীর বুকে গুলি মারে না। দুষ্টের, ঘুষখোরের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয় না। সেইখানে তাদের সখ্যতা রয়েছে। যখন হেলমেট পরে এসে নিরীহ ছাত্রদের আক্রমণ করে, তাদের জন্য তাদের গুলির বরাদ্দ নাই। গুলির বরাদ্দ হচ্ছে নিরীহ ব্যক্তিদের জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমি বলছি না গুলি করতে হবে, আমি বলছি যাদের আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি করতে হবে, যারা আসলে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি, যারা আসলে শান্তি সৃষ্টির জন্য হুমকি, যারা নানা অজুহাতে আমি আর তুমি মনস্তাত্ত্বিক ঢুকিয়ে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমাদের সমাজে কখনোই প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে উঠে নাই। যারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তারা যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যায়, তারা তাদের প্রটেকশন না দিয়ে ওই দুষ্টুদেরকেই প্রটেকশন দেয়।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিস্তা নদী নিয়ে টাকা কারা দিবে, এ নিয়ে অনেক কথা হতে পারে। তিস্তার মতো একটা ভাঙনপ্রবণ, খরস্রোতা, ভাগ করে নেওয়া নদী, যেখানে আমরা ভাটিতে আছি, তার ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকে উৎকর্ষতার দাবি রাখে। এ জন্য চীন সরকারের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে যখন চুক্তি হয়, তাদের পরিকল্পনা সেলফে তুলে রাখা হয়। আমরা ওটা বের করলাম। ওটার ওপর কাজ করেছি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা প্রকল্প এই এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। এটার কাজ আমরা এগিয়ে নিচ্ছি। এখানে সরকার টাকা দিবে, চীন সরকারও টাকা দিবে। এটা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা। তার মধ্যে পাঁচ বছরে সেচ, ভাঙনরোধ ও স্থায়ী বাঁধ—এই তিনটা জিনিসকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিকল্পনা আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। গতকাল (মঙ্গলবার) পরিকল্পনা কমিশন তাদের পক্ষ থেকে অনাপত্তি দিয়ে এই তিস্তা প্রকল্পের খসড়া পাঠিয়ে দিয়েছে ইআরডি বিভাগে। এখন ইআরডি বিভাগ থেকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে চায়নার কাছে। আমরা এখানে একমত। এখন বিশেষজ্ঞেরা এটা ডিজাইন করবেন। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে এই চুক্তিটা শেষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব। আগামী বছর থেকে কাজ শুরু হবে। আমাদের প্রকল্পের দলিলে লেখা আছে, কাজ শুরু হবে জানুয়ারি ২০২৬-এ।
রংপুরে চীনের হাসপাতাল নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি তুলে তিনি বলেন,
কেউ কেউ বলছিল, যারা চিকিৎসা নিতে যাবে, এত উন্নতমানের চিকিৎসা কী দেবে? তারা কি ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে আসবে চিকিৎসা নিতে? তখন উনি বললেন, ঢাকা থেকে যদি ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবে যায়, ব্যাংককে যায়, রংপুরেও আসবে। আপনারা যদি ভাবেন, আপনাদের মনে রাখি না, এটা ঠিক নয়। আমরা কাগজে কী রেখেছি, তা দিয়ে সব সময় জাজ করা যায় না। আমরা হৃদয়ে কী রেখেছি, এটার একটা বড় উদাহরণ আপনাদের দিলাম।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকত আলী।
এসময় সম্মানিত অতিথি হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. তানজীমউদ্দীন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় পীরগঞ্জের জাফরপাড়ায় আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও ফুলেল শ্রদ্ধা জানান রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কালো ব্যাজ ধারণ করে একটি শোক র্যালি বের করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় উদ্বোধন করা হয় আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর এবং তার নিহত হওয়ার স্থানে ‘আবু সাঈদ চত্ত্বর’ ঘোষণার মাধ্যমে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়।
এদিকে জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে ভোর থেকেই শহীদ আবু সাঈদের কবরের চারপাশে নীরবতা ভাঙে কান্না, শোক আর শ্রদ্ধার স্রোতে। শহীদ আবু সাঈদের কবরে ফুল হাতে দাঁড়িয়েছিলেন তার মা-বাবা, শিক্ষক, সহপাঠী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী এবং ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা জুলাই আন্দোলনের এ মহানায়কের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া মোনাজাত করেন।