বিধিমালা জারি
শব্দদূষণের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের জেল
- Update Time : ০৭:২০:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
- / ৩৪ Time View
দিনে ও রাতে এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।
২০০৬ সালের বিধিমালা বাদ দিয়ে এবার নতুন করে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জারি করল সরকার। এ বিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের সঙ্গে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় ‘দিবাকালীন’ সময় হিসেবে চিহ্নিত হবে। রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিবেচিত হবে ‘রাত্রিকালীন সময়’ হিসেবে।
কোন সময়ে কত মাত্রার শব্দকে মান ধরা হবে, বিধিমালায় তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
>> নীরব এলাকা: দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবল
>> আবাসিক এলাকা: দিনে ৫৫, রাতে ৪৫ ডেসিবল
>> মিশ্র এলাকা: দিনে ৬০, রাতে ৫০ ডেসিবল
>> বাণিজ্যিক এলাকা: দিনে ৭০, রাতে ৬০ ডেসিবল
>> শিল্প এলাকা: দিনে ৭৫, রাতে ৭০ ডেসিবল
যানবাহনের হর্ন সংক্রান্ত বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রমকারী
হর্ন, হাইড্রোলিক হর্ন, মাল্টি টিউন হর্ন ও সহায়ক যন্ত্রাংশ প্রস্তুত, আমদানি, মজুদ, বিক্রয়, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, বিতরণ, বাজারজাতকরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার করা যাবে না।
কোনো ব্যক্তি মোটরযান বা নৌযানে অননুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন স্থাপন ও ব্যবহার করতে পারবে না।
নীরব এলাকায় যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। আবাসিক এলাকায় রাত ৯টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত হর্ন বাজানো যাবে না।
নীরব এলাকায় দিনে ও রাতে এবং অন্যান্য এলাকায় রাতে পটকা, আতশবাজি ও অনুরূপ শব্দ সৃষ্টিকারী কোনো কিছুর বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে না। তবে রাষ্ট্রীয়, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসবে অনুমতি নিয়ে সীমিত আকারে পটকা, আতশবাজি ব্যবহার করা যাবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সব ধরনের শিল্প কারখানাকে শব্দের মানমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
আবাসিক, বাণিজ্যিক, মিশ্র, শিল্প ও নীরব এলাকার সকল জেনারেটর ব্যবহারকারীকে জেনারেটর থেকে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলে বনভোজন নিষিদ্ধ। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে উচ্চ শব্দ উৎপন্ন হয় এমন শব্দের উৎস ব্যবহার করা যাবে না।
বনভোজন ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত যানবাহনে উচ্চ শব্দ উৎপন্নকারী মাইক, লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার, সুরযন্ত্র (মিউজিক সিস্টেম) বা অন্য কোনো উচ্চ শব্দ উৎপন্নকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে ন।
শাস্তি কী
বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন, হাইড্রোলিক হর্ন, মাল্টি টিউন হর্ন ও সহায়ক যন্ত্রাংশ প্রস্তুত, আমদানি ও বাজারজাত করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেওয়া যাবে।
মোটরযান বা নৌযানে অননুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন ব্যবহার করলে এবং নীরব এলাকায় যানবাহনের হর্ন বাজালে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হেতে পারে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে ১ পয়েন্ট কাটা যাবে।
এছাড়া অন্যান্য বিধি ভঙ্গের জন্য সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
তবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে; ঈদের জামাত, জানাজা, নাম-সংকীর্তন এবং শবযাত্রাসহ অন্যান্য আবশ্যিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে; সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারকালে; প্রতিরক্ষা, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনকালে; স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, মহররম বা সরকার ঘোষিত অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে; আকাশযান ও রেলগাড়ি চলাচলের ক্ষেত্র এই বিধিমালা প্রযোজ্য হবে না।
ভোটের প্রচারেও মানতে হবে শব্দের বিধি
ভোটের প্রচারে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, সব নির্বাচনে নীরব এলাকায় নির্বাচনি প্রচারে মাইক, লাউড স্পিকার, পাবলিক অ্যাড্রেসিং সিস্টেম বা অন্য কোনো উচ্চ শব্দ উৎপন্নকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
নীরব এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধিমালা মেনে চলতে হবে। তবে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করা যাবে না।
এদিকে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহারের বিষয়ে বলা হয়েছে- কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো ব্যক্তি কোনো নির্বাচনি এলাকায় একইসঙ্গে ৩টির বেশি মাইক্রোফোন বা লাউড স্পিকার ব্যবহার করতে পারবেন না।
>> দল, প্রার্থী বা তার পক্ষে প্রচারের সময় কোনো নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্য যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন।
>> নির্বাচনি প্রচারকাজে ব্যবহৃত মাইক বা শব্দ বর্ধনকারী যন্ত্রের শব্দের মানমাত্রা ৬০ ডেসিবেলের বেশি হতে পারবে না।
>> কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনি প্রচার শুরু করতে পারবেন না এবং ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘণ্টা আগে নির্বাচনি প্রচার শেষ করতে হবে।
এ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সর্বোচ্চ প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে ইসির।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়




































































































































































































