ঢাকা ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় বাংলাদেশ কংগ্রেস জুলাই-২০২৪ হত্যাযজ্ঞের বিচারের দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু। টঙ্গীতে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে গার্মেন্টস কর্মী আটক সাবেক সেনা সদস্য-দম্পতির বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ; রাতেই ‘অদৃশ্য শক্তি’তে মুক্তি গাজীপুরে বিএনপির চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার টঙ্গীতে চাঁদাবাজি মামলায় সাবেক বিএনপি নেতা জিয়াউল হাসান স্বপন গ্রেপ্তার বিএনপির ১১ টি সংগঠনের বাইরে কোন সংগঠন নেই বর্তমান সময়ে সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না – জামায়াত আমির ৭ বছরে ও সুবর্ণা হত্যার বিচার হয়নি, হুমকির মুখে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু; রংপুরে দুই ক্লিনিককে জরিমানা,ওটি সিলগালা

শখের বাগান বাড়ির উঠানে মাল্টা-মালবেরিসহ রয়েছে ৭০টি আমগাছ

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ০৮:৪৫:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
  • / ১৮ Time View

দেশি-বিদেশি নানা দুর্লভ প্রজাতির ফল-ফুলসহ রয়েছে ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী গাছও। বাড়ির উঠা‌নে শখের বাগান, মাল্টা-মালবেরিসহ রয়েছে ৭০টি আমগাছ বাড়ি তো নয়, যেন বাগানবাড়ি। 

আঙ্গিনাসহ গ্রামীণ এই বাড়িকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে সাজানো একটি বাগান। রংপুর নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাহাদুর সিংহ এলাকায় শখের এই বাগান গড়ে তুলেছেন সৌখিন মানুষ সাংবাদিক স্বপন চৌধুরী। দৈনিক সমকালের ব্যুরো প্রধান ও সিটি প্রেসক্লাব, রংপুরের সভাপতি তিনি।

স্বপন চৌধুরী জানান, আজকাল রাজধানীসহ সারাদেশে ছাদবাগান করার প্রবণতা বাড়ছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু শখ থাকলেও যাদের বাড়ির ছাদ নেই তারা কী করবে! তাছাড়া বাগান তৈরির জন্য ছাদওয়ালা বাড়ি করার সামর্থও নেই সবার। কিন্তু ছোট কিংবা বড় গ্রামের প্রতিটা বাড়িতেই উঠান বা আঙ্গিনা রয়েছে। সেখানেই গড়ে তোলা সম্ভব শখের বাগান। গ্রাম কিংবা শহর, তখন প্রতিটি বাড়ি হবে একেকটি বাগান। তেমন একটি মডেল তৈরির চেষ্টা করেছেন তিনি।

এতে একদিকে যেমন বাড়িটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বছরজুড়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফলের চাহিদা মিটবে আর মনে আসবে প্রশান্তি। পাশাপাশি ফলগাছে মৌমাছিসহ পাখির আনোগোনা বাড়বে, কিচিরমিচির শব্দে বাড়িতে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি ঢোকার আগেই অভ্যার্থনা জানাবে গাছভর্তি ফুলসহ দুটি বকুল গাছ। এর পর সারিবদ্ধ গাছের সড়ক ঢুকে গেছে বাড়ি অব্দি।

উঠানে ঢুকতেই আরেকবার স্বাগত জানাবে মাটির পাত্রে ফুটন্ত শাপলা। তার পর উঠানজুড়ে চোখে পড়বে ছোট ছোট গাছে ঝুলছে থাই কাটিমন, বিএন-৭, কিং অব চাকাপাত, আর টু-ই টু, আলফানসো, মিয়াজাকিসহ বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম। রয়েছে চেরি, সাদা জাম, কালো জাম, বারোমাসি লংগান, বারোমাসি কাঁঠাল, বারোমাসি লেবু, বারোমাসি আমড়া, মিরাকেলবেরি, মালবেরি, ব্লাকবেরি, বেদানা, কোকো (চকলেট), মিষ্টি জলপাই, মিষ্টি তেঁতুল, মিষ্টি কামরাঙ্গা, করমচা, থাই পেঁয়ারা, স্ট্রোবেরি পেয়ারা, লটকন, ড্রাগন, কমলা, মাল্টা, বরইসহ নানা জাতের ফল।

উঠানে কোনোটি গাছ লাগানো হয়েছে মাটিতে, আবার কোনোটি রয়েছে মাটির টব কিংবা জিও ব্যাগে। টবেই হয়েছে মিষ্টি আখ ও আনারস। সবার নজর কাড়ে ননী ফল। ক্যান্সার প্রতিরোধীসহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে পরিচিত এই ফল ও গাছের পাতা নিতে প্রতিদিনই ভিড় করেন লোকজন। উঠানেই ফুটে আছে গোলাপ, কাঠগোলাপ, বেলি ফুল, করি ফুল, উপর, গন্ধরাজ, কামিনিসহ নানা জাত ও রঙের জবা ফুল।

গাছগাছালিতে ভরা বাড়ির উঠানে মৌ মৌ গন্ধের পাশাপাশি পাখির কিচিরমিচির আর মৌমাছির আনাগোনায় অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ পরিবেশের এই বাড়িতে রয়েছে হাঁস-মুরগি, কবুতরসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের বিড়ালও। বিশেষ করে উঠানের মধ্যখানে ছোট্ট এবং খোলা দো-চালা টিনের ঘরে বসে গাছপালা পর্যবেক্ষণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাড়ির উঠান ছাড়াও প্রায় দুই একরের পৈত্রিক বসতভিটাকে ঘিরে সাংবাদিক স্বপন চৌধুরী বাগান গড়ে তুলেছেন। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বাগানের পরিচর্যা করেন তিনি নিজেই।

বসতভিটার চারদিকসহ তার শখের বাগানে ছোট-বড় মিলে রয়েছে অন্তত ৭০টি আমগাছ। দেশি-বিদেশি এসব আমের মধ্যে রয়েছে ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই, জর্দালু, ক্ষিরসা, থাই কাটিমন, সূর্যপূরি, গৌড়মতি, মল্লিকা, ফোরকেজি, ব্রুনাই কিং, নাম ডকমাই, চিয়াংমাই, ব্লাকস্টোন, বারি-৪, বারি-৮, বারি-১১, হাঁড়িভাঙা, আম্রপালিসহ নানা জাতের আম। এর মধ্যে বারোমাসি জাতগুলোর গাছে সারাবছরই আম থাকে। এছাড়াও রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় ফলসা, পানিয়াল (লুকলুকি), গাব ও ডেউয়াসহ আতা, শরিফা, সুইট লেমন, ত্বীন ফল, জাবাটিকাবা, অ্যাভোকেডো, জাম্বুরা, আমলকি, পীচ ফল, ফিলিপাইনের জামান ফল (এগফুট), বেল, জামরুল, সফেদা, রাম্বুটানসহ নানা জাতের ফল। লাগানো হয়েছে তালগাছ ও ভিয়েতনামসহ নানা প্রজাতির নারিকেল। বাড়ির সঙ্গেই রয়েছে সুপারি বাগান। আর ফলবাগানের মধ্যখানে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন টিনশেড বাংলোবাড়ি, যা সহসাই সবার নজর কাড়ছে।

একটা বাড়িকে বাগানে পরিণত করার কারিগর স্বপন চৌধুরী জানান, এটা কোনো বাণিজ্যিক পরিকল্পনা নয়। সে কারণে জমি কিংবা একসঙ্গে বেশি টাকারও প্রয়োজন পড়ে না। সবার বাড়ির আঙ্গিনায় দু’চারটি ফলের গাছ লাগানোর জায়গা থাকে। সেখানে গাছ রোপন করলেই পরিবারের অন্তত ফলের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, শখের বসে দু’একটি করে ফলের গাছ লাগাতে গিয়ে আঙ্গিনাসহ গোটা বাড়ি এখন বাগানে পরিণত হয়েছে। নিজ হাতে গাছগুলোর পরিচর্যা করতেও মানসিক প্রশান্তি মেলে। আমি চাই, প্রত্যেকটা বাড়ির আঙ্গিনাই হোক একেকটা বাগান।

Please Share This Post in Your Social Media

শখের বাগান বাড়ির উঠানে মাল্টা-মালবেরিসহ রয়েছে ৭০টি আমগাছ

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
Update Time : ০৮:৪৫:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

দেশি-বিদেশি নানা দুর্লভ প্রজাতির ফল-ফুলসহ রয়েছে ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী গাছও। বাড়ির উঠা‌নে শখের বাগান, মাল্টা-মালবেরিসহ রয়েছে ৭০টি আমগাছ বাড়ি তো নয়, যেন বাগানবাড়ি। 

আঙ্গিনাসহ গ্রামীণ এই বাড়িকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে সাজানো একটি বাগান। রংপুর নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাহাদুর সিংহ এলাকায় শখের এই বাগান গড়ে তুলেছেন সৌখিন মানুষ সাংবাদিক স্বপন চৌধুরী। দৈনিক সমকালের ব্যুরো প্রধান ও সিটি প্রেসক্লাব, রংপুরের সভাপতি তিনি।

স্বপন চৌধুরী জানান, আজকাল রাজধানীসহ সারাদেশে ছাদবাগান করার প্রবণতা বাড়ছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু শখ থাকলেও যাদের বাড়ির ছাদ নেই তারা কী করবে! তাছাড়া বাগান তৈরির জন্য ছাদওয়ালা বাড়ি করার সামর্থও নেই সবার। কিন্তু ছোট কিংবা বড় গ্রামের প্রতিটা বাড়িতেই উঠান বা আঙ্গিনা রয়েছে। সেখানেই গড়ে তোলা সম্ভব শখের বাগান। গ্রাম কিংবা শহর, তখন প্রতিটি বাড়ি হবে একেকটি বাগান। তেমন একটি মডেল তৈরির চেষ্টা করেছেন তিনি।

এতে একদিকে যেমন বাড়িটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বছরজুড়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফলের চাহিদা মিটবে আর মনে আসবে প্রশান্তি। পাশাপাশি ফলগাছে মৌমাছিসহ পাখির আনোগোনা বাড়বে, কিচিরমিচির শব্দে বাড়িতে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি ঢোকার আগেই অভ্যার্থনা জানাবে গাছভর্তি ফুলসহ দুটি বকুল গাছ। এর পর সারিবদ্ধ গাছের সড়ক ঢুকে গেছে বাড়ি অব্দি।

উঠানে ঢুকতেই আরেকবার স্বাগত জানাবে মাটির পাত্রে ফুটন্ত শাপলা। তার পর উঠানজুড়ে চোখে পড়বে ছোট ছোট গাছে ঝুলছে থাই কাটিমন, বিএন-৭, কিং অব চাকাপাত, আর টু-ই টু, আলফানসো, মিয়াজাকিসহ বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম। রয়েছে চেরি, সাদা জাম, কালো জাম, বারোমাসি লংগান, বারোমাসি কাঁঠাল, বারোমাসি লেবু, বারোমাসি আমড়া, মিরাকেলবেরি, মালবেরি, ব্লাকবেরি, বেদানা, কোকো (চকলেট), মিষ্টি জলপাই, মিষ্টি তেঁতুল, মিষ্টি কামরাঙ্গা, করমচা, থাই পেঁয়ারা, স্ট্রোবেরি পেয়ারা, লটকন, ড্রাগন, কমলা, মাল্টা, বরইসহ নানা জাতের ফল।

উঠানে কোনোটি গাছ লাগানো হয়েছে মাটিতে, আবার কোনোটি রয়েছে মাটির টব কিংবা জিও ব্যাগে। টবেই হয়েছে মিষ্টি আখ ও আনারস। সবার নজর কাড়ে ননী ফল। ক্যান্সার প্রতিরোধীসহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে পরিচিত এই ফল ও গাছের পাতা নিতে প্রতিদিনই ভিড় করেন লোকজন। উঠানেই ফুটে আছে গোলাপ, কাঠগোলাপ, বেলি ফুল, করি ফুল, উপর, গন্ধরাজ, কামিনিসহ নানা জাত ও রঙের জবা ফুল।

গাছগাছালিতে ভরা বাড়ির উঠানে মৌ মৌ গন্ধের পাশাপাশি পাখির কিচিরমিচির আর মৌমাছির আনাগোনায় অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ পরিবেশের এই বাড়িতে রয়েছে হাঁস-মুরগি, কবুতরসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের বিড়ালও। বিশেষ করে উঠানের মধ্যখানে ছোট্ট এবং খোলা দো-চালা টিনের ঘরে বসে গাছপালা পর্যবেক্ষণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাড়ির উঠান ছাড়াও প্রায় দুই একরের পৈত্রিক বসতভিটাকে ঘিরে সাংবাদিক স্বপন চৌধুরী বাগান গড়ে তুলেছেন। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বাগানের পরিচর্যা করেন তিনি নিজেই।

বসতভিটার চারদিকসহ তার শখের বাগানে ছোট-বড় মিলে রয়েছে অন্তত ৭০টি আমগাছ। দেশি-বিদেশি এসব আমের মধ্যে রয়েছে ব্যানানা ম্যাঙ্গো, কিউজাই, জর্দালু, ক্ষিরসা, থাই কাটিমন, সূর্যপূরি, গৌড়মতি, মল্লিকা, ফোরকেজি, ব্রুনাই কিং, নাম ডকমাই, চিয়াংমাই, ব্লাকস্টোন, বারি-৪, বারি-৮, বারি-১১, হাঁড়িভাঙা, আম্রপালিসহ নানা জাতের আম। এর মধ্যে বারোমাসি জাতগুলোর গাছে সারাবছরই আম থাকে। এছাড়াও রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় ফলসা, পানিয়াল (লুকলুকি), গাব ও ডেউয়াসহ আতা, শরিফা, সুইট লেমন, ত্বীন ফল, জাবাটিকাবা, অ্যাভোকেডো, জাম্বুরা, আমলকি, পীচ ফল, ফিলিপাইনের জামান ফল (এগফুট), বেল, জামরুল, সফেদা, রাম্বুটানসহ নানা জাতের ফল। লাগানো হয়েছে তালগাছ ও ভিয়েতনামসহ নানা প্রজাতির নারিকেল। বাড়ির সঙ্গেই রয়েছে সুপারি বাগান। আর ফলবাগানের মধ্যখানে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন টিনশেড বাংলোবাড়ি, যা সহসাই সবার নজর কাড়ছে।

একটা বাড়িকে বাগানে পরিণত করার কারিগর স্বপন চৌধুরী জানান, এটা কোনো বাণিজ্যিক পরিকল্পনা নয়। সে কারণে জমি কিংবা একসঙ্গে বেশি টাকারও প্রয়োজন পড়ে না। সবার বাড়ির আঙ্গিনায় দু’চারটি ফলের গাছ লাগানোর জায়গা থাকে। সেখানে গাছ রোপন করলেই পরিবারের অন্তত ফলের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, শখের বসে দু’একটি করে ফলের গাছ লাগাতে গিয়ে আঙ্গিনাসহ গোটা বাড়ি এখন বাগানে পরিণত হয়েছে। নিজ হাতে গাছগুলোর পরিচর্যা করতেও মানসিক প্রশান্তি মেলে। আমি চাই, প্রত্যেকটা বাড়ির আঙ্গিনাই হোক একেকটা বাগান।