ল্যুভর থেকে চুরি যাওয়া অলংকারের বাজারমূল্য কত

- Update Time : ০৪:১৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৩৩ Time View
দিনের আলোয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় খোয়া যাওয়া অলংকারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। এটি প্রায় ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার সমান (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা হিসাবে)।
জাদুঘরের কিউরেটরের বরাত দিয়ে ফ্রান্সের একজন সরকারি কৌঁসুলি এ তথ্য জানিয়েছেন।
সরকারি কৌঁসুলি লোর বেকো আরটিএল রেডিওকে বলেন, অলংকারগুলোর দামের অঙ্ক ‘অনেক বড়’। তবে অর্থমূল্যের চেয়ে এ ঘটনায় ফ্রান্সের ইতিহাস–ঐতিহ্যের ক্ষতি অনেক বেশি।
চুরি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে আছে রাজকীয় অলংকার ও মূল্যবান উপহার। দুই নেপোলিয়ন সম্রাট তাঁদের স্ত্রীদের অলংকারগুলো উপহার দিয়েছিলেন। সারা বিশ্বে জাদুঘরের মধ্যে ল্যুভরেই সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীর ভিড় হয়। স্থানীয় সময় গত রোববার সকালে জাদুঘর খোলার কিছুক্ষণের মধ্যে চোরেরা বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে আট মিনিটের কম সময়ে জানালা কেটে জাদুঘরে ঢুকে কাচের বাক্সে রাখা অলংকার হাতিয়ে মোটরবাইকে করে পালিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চুরি যাওয়া অলংকার হয়তো এরই মধ্যে অনেক দূরে চলে গেছে।
তবে কৌঁসুলি লোর বেকো আশা প্রকাশ করে বলেছেন, চুরি যাওয়া অলংকারের মূল্য ঘোষণার পর হয়তো চোরেরা দ্বিতীয়বার ভাববে এবং অলংকারগুলো হয়তো নষ্ট করবে না। তিনি আরও বলেন, চোরেরা যদি ওই অলংকারগুলো গলিয়ে ফেলার কথা ভাবে, তবে সেটা খুবই খারাপ পরিকল্পনা হবে। কারণ, অলংকারগুলো গলিয়ে ফেললে তারা তেমন দাম পাবে না, লাভও হবে না। চোরেরা যে অলংকারগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে, তার মধ্যে আছে হীরা ও পান্না দিয়ে তৈরি একটি কণ্ঠহার। সম্রাট নেপোলিয়ন তাঁর স্ত্রীকে এটি উপহার দিয়েছিলেন। আছে তৃতীয় নেপোলিয়নের স্ত্রী সাম্রাজ্ঞী উজিনির একটি টিয়ারা। চুরি যাওয়া আরও কয়েকটি অলংকারের মধ্যে আছে রানি মেরি-অ্যামেলির মালিকানায় থাকা একাধিক অলংকার।
চোরেরা যে পথে পালিয়ে গেছে, সেখানে তদন্ত কর্মকর্তারা একটি মুকুট পড়ে থাকা অবস্থায় পেয়েছেন। খুব সম্ভবত চোরেরা তাড়াহুড়া করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেটি পড়ে যায়। মুকুটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মুখোশ পরা চারজন চোর জাদুঘরের অ্যাপোলো গ্যালারির সিন নদীর দিকে মুখ করা একটি বারান্দা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। এ জন্য তারা ট্রাকের ওপর থাকা মেকানিক্যাল লিফট (ভাঁজ করা যায়, এমন একধরনের মই) ব্যবহার করে। চার চোরের মধ্যে দুজন ভবনের প্রথম তলার একটি কাচের জানালা ব্যাটারিচালিত ডিস্ক কাটার দিয়ে কেটে জাদুঘরে প্রবেশ করে। এরপর তারা ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। চোরেরা বাইরে তাদের গাড়িতে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জাদুঘরের একজন কর্মীর হস্তক্ষেপে তারা সেটি করতে পারেনি। পরে অলংকার নিয়ে স্কুটারে করে পালিয়ে যায়।
প্রশাসনের ধারণা, এই চোরেরা পেশাদার। কারণ, তারা অত্যন্ত দ্রুত ও সুসংগঠিতভাবে পুরো কাজ করেছে।
ল্যুভরে দুর্ধর্ষ এ চুরির পর বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে বলেছিলেন, সামগ্রীগুলো উদ্ধারের জন্য তদন্তকারীরা মাত্র এক থেকে দুই দিন সময় হাতে পাবেন। এরপর এগুলো চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে
বিশেষজ্ঞদের মতে, চোরের দলের যে কাজ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেটা হলো, তারা অলংকারগুলো গলিয়ে মূল্যবান ধাতু ও রত্নপাথর আলাদা করে ফেলতে পারে। এরপর হয়তো দেশের বাইরে পাচার করার চেষ্টা করবে।
এতে অলংকারগুলো প্রকৃত আর্থিক মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে হয়তো বিক্রি হবে। ঐতিহাসিক বিচারে চুরি যাওয়া অলংকারগুলো অমূল্য সম্পদ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এ ঘটনাকে দেশটির ইতিহাস–ঐতিহ্যের ওপর হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়