ঢাকা ০২:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ার সেনাপ্রধান তুরস্কে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১০:০১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ২৭ Time View

জেনারেল মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কাছে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন লিবিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ। তাঁর সঙ্গেই প্রাণ হারিয়েছেন আরও চারজন সামরিক কর্মকতা ও তিনজন ক্রু।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আঙ্কারা থেকে বিমানটি ওড়ার পরই সেটি বিধ্বস্ত হয়। সেনাপ্রধান ছাড়া নিহত অন্য কর্মকর্তারা হলেন—স্থলবাহিনীর প্রধান আল-ফিতুরি ঘারিবিল, সামরিক বাহিনীর উৎপাদন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মাহমুদ আল-কাতাওয়ী, আল-হাদ্দাদের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাওই দিয়াব ও সামরিক চিত্রগ্রাহক মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।

দুর্ঘটনায় তিনজন ক্রু সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কমিউনিকেশনস ডিরেক্টরেটের প্রধান বুরহানেত্তিন দূরান। তুরস্কের আইনমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানান, আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটর অফিস এই দুর্ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।

                       বিমানটির ধ্বংসাবশেষ আঙ্কারা থেকে ৭৪ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামের কাছে পাওয়া গেছে ।

প্রাথমিক তদন্তের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরস্কের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জড়িত নেই। প্রযুক্তিগত ত্রুটি দুর্ঘটনার কারণ । খবর-বিবিসি ও আলজাজিরা

জেনারেল মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ এবং তার দল দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার এবং আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনার জন্য তুরস্কে ছিলেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রাইভেট জেটে ফিরছিলেন তিনি। জেনারেল আল-হাদাদ ছিলেন পশ্চিম লিবিয়ার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় লিবিয়ার সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

লিবিয়ার আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ দবেইবা এক বিবৃতিতে বিমান দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছেন। বিবৃতিতে আব্দুল হামিদ দবেইবা জানিয়েছেন, সরকারি সফর শেষ করে আঙ্কারা থেকে ফিরছিলেন সেনাপ্রধান ও লিবিয়ার প্রতিনিধি দল। ফেরার পথে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এই মৃত্যু লিবিয়ার জন্য ‘বড় ক্ষতি’।

লিবিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আকাশে ওড়ার প্রায় আধ ঘণ্টা পর কারিগরি ত্রুটির কারণে বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলও।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিমানটি (ফ্যালকন ৫০ জেট) আকাশে উড়েছিল। এর ৪০ মিনিট পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে বিমানটি আঙ্কারার দক্ষিণে অবস্থিত হাইমানার কাছে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেছিল। তিনি জানান, যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেছিল। তুরস্কের আধা-সামরিক বাহিনী ‘গেন্ডারমারি’ জেটটির ধ্বংসাবশেষ হায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণ থেকে উদ্ধার করেছে। আঙ্কারা থেকে এর দূরত্ব ৭৪ কিলোমিটার।

লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মর গাদ্দাফির ২০১১ সালে পতনের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে একইসঙ্গে দুটি সরকার আছে। আব্দুল হামিদ দবেইবা সরকারকে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। ২০১৯ সাল থেকে তুরস্ক এ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আঙ্কারা এ সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।

Please Share This Post in Your Social Media

লিবিয়ার সেনাপ্রধান তুরস্কে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ১০:০১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কাছে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন লিবিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ। তাঁর সঙ্গেই প্রাণ হারিয়েছেন আরও চারজন সামরিক কর্মকতা ও তিনজন ক্রু।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আঙ্কারা থেকে বিমানটি ওড়ার পরই সেটি বিধ্বস্ত হয়। সেনাপ্রধান ছাড়া নিহত অন্য কর্মকর্তারা হলেন—স্থলবাহিনীর প্রধান আল-ফিতুরি ঘারিবিল, সামরিক বাহিনীর উৎপাদন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মাহমুদ আল-কাতাওয়ী, আল-হাদ্দাদের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাওই দিয়াব ও সামরিক চিত্রগ্রাহক মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।

দুর্ঘটনায় তিনজন ক্রু সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কমিউনিকেশনস ডিরেক্টরেটের প্রধান বুরহানেত্তিন দূরান। তুরস্কের আইনমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানান, আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটর অফিস এই দুর্ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।

                       বিমানটির ধ্বংসাবশেষ আঙ্কারা থেকে ৭৪ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামের কাছে পাওয়া গেছে ।

প্রাথমিক তদন্তের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরস্কের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড জড়িত নেই। প্রযুক্তিগত ত্রুটি দুর্ঘটনার কারণ । খবর-বিবিসি ও আলজাজিরা

জেনারেল মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ এবং তার দল দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার এবং আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনার জন্য তুরস্কে ছিলেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রাইভেট জেটে ফিরছিলেন তিনি। জেনারেল আল-হাদাদ ছিলেন পশ্চিম লিবিয়ার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় লিবিয়ার সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

লিবিয়ার আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ দবেইবা এক বিবৃতিতে বিমান দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছেন। বিবৃতিতে আব্দুল হামিদ দবেইবা জানিয়েছেন, সরকারি সফর শেষ করে আঙ্কারা থেকে ফিরছিলেন সেনাপ্রধান ও লিবিয়ার প্রতিনিধি দল। ফেরার পথে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এই মৃত্যু লিবিয়ার জন্য ‘বড় ক্ষতি’।

লিবিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আকাশে ওড়ার প্রায় আধ ঘণ্টা পর কারিগরি ত্রুটির কারণে বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলও।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিমানটি (ফ্যালকন ৫০ জেট) আকাশে উড়েছিল। এর ৪০ মিনিট পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে বিমানটি আঙ্কারার দক্ষিণে অবস্থিত হাইমানার কাছে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেছিল। তিনি জানান, যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেছিল। তুরস্কের আধা-সামরিক বাহিনী ‘গেন্ডারমারি’ জেটটির ধ্বংসাবশেষ হায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণ থেকে উদ্ধার করেছে। আঙ্কারা থেকে এর দূরত্ব ৭৪ কিলোমিটার।

লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মর গাদ্দাফির ২০১১ সালে পতনের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে একইসঙ্গে দুটি সরকার আছে। আব্দুল হামিদ দবেইবা সরকারকে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। ২০১৯ সাল থেকে তুরস্ক এ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আঙ্কারা এ সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।