ঢাকা ১১:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:২৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / ৮ Time View

লিবিয়ার রাজধানীতে গণজমায়েত। ছবি : সংগৃহীত

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় আবদেল ঘানি আল-কিকলি নামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর এক নেতা নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ ঘোষণা ও বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে জরুরি উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী স্টেবিলিটি সাপোর্ট অথরিটির (এসএসএ) নেতা আবদেল ঘানি আল-কিকলি এ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। তিনি ‘ঘেনিওয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাকে হত্যার পর শহরের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র গোলাগুলি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতে জরুরি লকডাউন জারি করেছে।

মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘের এই আহ্বান জানানো হয়। সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ১টা) থেকে ত্রিপোলির একাধিক এলাকায় ভারী গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

লিবিয়ার মিসরাতা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মালিক ট্রাইনা বলেন, নিরাপত্তা সূত্র আল-কিকলির হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এরপর ত্রিপোলির বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। আল-কিকলি ছিলেন রাজধানীর অন্যতম প্রভাবশালী সশস্ত্র নেতা এবং সম্প্রতি মিসরাতার সঙ্গে যুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। তার এসএসএ মিলিশিয়া ২০২১ সালে জাতিসংঘ-স্বীকৃত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের অধীনে কাজ করে।

ট্রাইনা জানান, এই সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন, তবে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নাকি সাধারণ নাগরিক, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘের লিবিয়া সাপোর্ট মিশন (ইউএনএসএমআইএল) সংঘর্ষ শুরুর পরপরই এক বিবৃতিতে বলেছে, ত্রিপোলির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভারী অস্ত্র নিয়ে তীব্র লড়াই চলছে। ইউএনএসএমআইএল সব পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে এবং সবাইকে নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়েছে।

বিদ্যালয় বন্ধ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

জাতীয় ঐক্যের সরকারের (জিএনইউ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাসিন্দাদের ঘরে থাকার এবং চলাচল এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতির আরও অবনতির বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিরাপত্তার অবনতির কারণে মঙ্গলবার ত্রিপোলির সব বিদ্যালয়ে ক্লাস স্থগিত করেছে।

জিএনইউ’র মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আবু সালিম এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

একজন বাসিন্দা রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমি ভারী গোলাগুলির শব্দ শুনেছি এবং আকাশে লাল আলো দেখেছি। আরও দুজন বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, আবু সালিম এবং সালাহ এদ্দিন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিও এবং ছবিতে গোলাগুলির শব্দের মধ্যে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী, রাস্তায় সশস্ত্র ব্যক্তি এবং শহরে প্রবেশকারী কনভয় দেখা গেছে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি দ্বারা যাচাইকৃত ফুটেজে মাঝারি ক্যালিবারের গোলাগুলির শব্দ ধরা পড়েছে, যা এসএসএ মিলিশিয়ার পরিচিত এলাকাগুলো সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় শোনা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ-জাওয়িয়া, জিনতান এবং মিসরাতা থেকে কনভয় এসেছে, যা অনেকে রাজধানীতে সম্ভাব্য সংঘর্ষের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে।

২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর দেশটি বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়। তেল সমৃদ্ধ এই দেশটি গত দশকের বেশিরভাগ সময় পূর্ব ও পশ্চিম লিবিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দ্বারা শাসিত হয়েছে, যাদের প্রত্যেকের পিছনে বিভিন্ন যোদ্ধা গোষ্ঠী এবং বিদেশি সরকারের সমর্থন রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০৭:২৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় আবদেল ঘানি আল-কিকলি নামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর এক নেতা নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ ঘোষণা ও বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে জরুরি উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী স্টেবিলিটি সাপোর্ট অথরিটির (এসএসএ) নেতা আবদেল ঘানি আল-কিকলি এ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। তিনি ‘ঘেনিওয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাকে হত্যার পর শহরের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র গোলাগুলি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতিতে জরুরি লকডাউন জারি করেছে।

মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘের এই আহ্বান জানানো হয়। সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ১টা) থেকে ত্রিপোলির একাধিক এলাকায় ভারী গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

লিবিয়ার মিসরাতা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মালিক ট্রাইনা বলেন, নিরাপত্তা সূত্র আল-কিকলির হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এরপর ত্রিপোলির বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। আল-কিকলি ছিলেন রাজধানীর অন্যতম প্রভাবশালী সশস্ত্র নেতা এবং সম্প্রতি মিসরাতার সঙ্গে যুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। তার এসএসএ মিলিশিয়া ২০২১ সালে জাতিসংঘ-স্বীকৃত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের অধীনে কাজ করে।

ট্রাইনা জানান, এই সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন, তবে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নাকি সাধারণ নাগরিক, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘের লিবিয়া সাপোর্ট মিশন (ইউএনএসএমআইএল) সংঘর্ষ শুরুর পরপরই এক বিবৃতিতে বলেছে, ত্রিপোলির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভারী অস্ত্র নিয়ে তীব্র লড়াই চলছে। ইউএনএসএমআইএল সব পক্ষকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে এবং সবাইকে নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়েছে।

বিদ্যালয় বন্ধ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

জাতীয় ঐক্যের সরকারের (জিএনইউ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাসিন্দাদের ঘরে থাকার এবং চলাচল এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতির আরও অবনতির বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিরাপত্তার অবনতির কারণে মঙ্গলবার ত্রিপোলির সব বিদ্যালয়ে ক্লাস স্থগিত করেছে।

জিএনইউ’র মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আবু সালিম এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

একজন বাসিন্দা রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমি ভারী গোলাগুলির শব্দ শুনেছি এবং আকাশে লাল আলো দেখেছি। আরও দুজন বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, আবু সালিম এবং সালাহ এদ্দিন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।

অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিও এবং ছবিতে গোলাগুলির শব্দের মধ্যে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী, রাস্তায় সশস্ত্র ব্যক্তি এবং শহরে প্রবেশকারী কনভয় দেখা গেছে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি দ্বারা যাচাইকৃত ফুটেজে মাঝারি ক্যালিবারের গোলাগুলির শব্দ ধরা পড়েছে, যা এসএসএ মিলিশিয়ার পরিচিত এলাকাগুলো সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় শোনা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ-জাওয়িয়া, জিনতান এবং মিসরাতা থেকে কনভয় এসেছে, যা অনেকে রাজধানীতে সম্ভাব্য সংঘর্ষের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে।

২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর দেশটি বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়। তেল সমৃদ্ধ এই দেশটি গত দশকের বেশিরভাগ সময় পূর্ব ও পশ্চিম লিবিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দ্বারা শাসিত হয়েছে, যাদের প্রত্যেকের পিছনে বিভিন্ন যোদ্ধা গোষ্ঠী এবং বিদেশি সরকারের সমর্থন রয়েছে।