নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন
লিজ নেওয়া চা বাগানের জমি জাল দলিলে শত কোটিতে বিক্রি
- Update Time : ০৬:১৬:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
- / ৯৫ Time View
সিলেটে বিভিন্ন স্থানে ভূমির মালিক সরকার। কিন্তু সরকারকে ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দখল করে অসাধু চক্র তা ভোগ করছে। যার প্রমান খাদিম চা বাগানের ভূমি দখল করে অসাধুরা ভোগ দখল করছে। এখন চোখ পড়ছে প্রশাসনের। তাই জড়িতদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমের জরিমানাসহ গ্রেফতার ও কারদন্ড প্রদান করা হয় এবং এসব ঘটনায় প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধিও পেয়েছে।
দীর্ঘ মেয়াদী লিজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চা বাগান। আর বাগানের সরকারি ভূমি রীতিমতো দলিল করে হচ্ছে বিক্রি। জাল কাগজপত্র দিয়ে বিক্রয় করা ভূমিতে গড়ে ওঠেছে বাসা-বাড়ি। ভূমিখেকো জালিয়াত চক্র এতোই প্রভাবশালী যে ভয়ে বাগান কর্তৃপক্ষও ছিল অসহায়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩৫ একর ভূমি। যার মূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা- জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট শহর তলীর খাদিমপাড়া ইউনিয়নে খাদিমনগর চা বাগানের অবস্থান। সরকারি ভূমি লিজ নিয়ে গড়ে ওঠেছে বিশাল চা বাগান। দীর্ঘদিন ধরে চা বাগানের সমতল জায়গা দখল করে আসছিল স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। বাগানের কর্মকর্তা, জাল দলিলের কারিগর ও স্থানীয় ভূমিখেকোরা মিলে এই চক্র তৈরি করে শুরু করে সরকারি জায়গা দখল। জাল দলিল সৃজন করে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে প্লট আকারে জায়গা বিক্রি করে। মাঝে মধ্যে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জালিয়াতির বিরুদ্ধে কথা বললেও প্রভাবশালীদের হয়রানির মুখে তাদেরকে থেমে যেতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে জায়গা পেয়ে অনেকে জেনেশুনেও জাল দলিলমূলে চা বাগানের সরকারি জায়গা ক্রয় করেন। জায়গা ক্রয়ের পর তারা সেখানে গড়ে তুলে বাসাবাড়ি। কেউ নিজে বসবাস করেন, আবার কেউ দিয়ে দেন ভাড়া। আবার কেউ জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে জায়গা ক্রয় করে প্লট আকারে পুনঃবিক্রিও করেন। গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন র্যাবের একসময়ের আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আলোচিত সাদাপাথর লুট বন্ধ ও উদ্ধার কাজে প্রশংসিত ভূমিকা রাখেন। এরপর তিনি সরকারি ভূমি উদ্ধার ও দখলদার উচ্ছেদের ঘোষণা দেন।
ইতোমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রেলওয়ের মূল্যবান ভূমি দখলমুক্ত করেছেন তিনি। গত শুক্রবার তিনি খাদিমনগর চা বাগান পরিদর্শনে গিয়ে অবৈধ দখলে থাকা সরকারি ভূমি উদ্ধারের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সময় বাকবিতণ্ডায় জড়ায় জালিয়াতন চক্রের সদস্য জনৈক মোজাম্মেল হোসেন লিটন। পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাকে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, সিলেট জেলার সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি খাস জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে আনুমানিক ৩৫ একর সরকারি জমি উদ্ধার এবং ৩০ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম নির্দেশে পরিচালিত অভিযানের নেতৃত্ব দেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ। অভিযান কালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলীম উল্লাহ খান, সরকার মামুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলাদেশ আনসার বাহিনী সহযোগিতা করে।সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিডিয়া সেলের সহকারী কমিশনার তানভীর হোসাইন সজীব জানান, অভিযান চলাকালে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি, রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ দলিল তৈরি এবং জমি দখল সংক্রান্ত অপরাধে ২ জনকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন মোসাদ্দেক হোসেন কোরেশী ও শাহজাহান ওমর। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এবং ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ অনুযায়ী ১ (এক) বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনুর রুবাইয়াৎ জানান, ভূমি খেকোরা খুবই প্রভাবশালী। উচ্ছেদ অভিযানের সময় তারা প্রশাসনকে বাধা দিতে চেয়েছে। পরে ভূমি আইনে উচ্ছেদ ও জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারি ভূমি উদ্ধারে এরকম অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়







































































































































































































