ঢাকা ১২:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ফেসবুকের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন মামুনুল হক সিলেটে সাদাপাথর লুটপাট নিয়ে তদন্ত কমিটির গণশুনানি আ’লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ: গ্রেফতার শিমুল ৪ দিনের রিমান্ডে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন আদালত চন্দ্রনাথ পাহাড় ঘিরে উসকানিমূলক কার্যক্রমের চিহ্ন দেখামাত্র ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ শাহজালালে ১৩০ কোটি টাকার কোকেন উদ্ধার, বিদেশি নাগরিক আটক লায়লাকে হত্যাচেষ্টা, প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য শুরু তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কার্যকর সমাধান চায় আপিল বিভাগ: প্রধান বিচারপতি পুরনো ভিডিও নিয়ে কটাক্ষ, কড়া জবাব দিলেন প্রভা শুভাঢ্যা খালকে ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গার সঙ্গে প্রবাহমান করা হবে: পানি সম্পদ উপদেষ্টা

লায়লাকে হত্যাচেষ্টা, প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য শুরু

আইন-আদালত ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৩৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৫৬ Time View

সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত টিকটকার লায়লা আখতার ফরহাদকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলায় আরেক টিকটকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত মামলার বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। তবে এদিন তার জেরা শেষ না হওয়ায় আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আদালত।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আসামির অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। শুনানিকালে মামুন ও লায়লা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রিন্স মামুনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় লায়লার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই পরিবারের সম্মতিতে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে লায়লার বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। তখন থেকে প্রিন্স মামুন লায়লার বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় বসবাস করতে থাকেন। এরপর থেকে প্রিন্স মামুন বিভিন্ন অজুহাতে লায়লার কাছ থেকে টাকা নিতেন। প্রায় সময় মাদকসেবন করে গভীর রাতে বাসায় আসতেন। অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেন। এমনকি মাঝে মধ্যে লায়লাকে মারপিট করতেন। বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি আদায়ের পাঁয়তারা করতেন মামুন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর উত্তরায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বাসায় ফেরেন তারা। এ সময় মামুনসহ আরও দুজন মদপানের জন্য মিরপুরে যাওয়ার পরামর্শ করেন। লায়লা তাকে নিষেধ করেন এবং বাধা দেন। এতে মামুন উত্তেজিত হয়ে লায়লাকে গালি দেন। গালি দিতে নিষেধ করলে মামুন লায়লাকে মারধর করেন ও হত্যার চেষ্টা করেন।

মামলাটি তদন্ত শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। পরে ওই বছরের ৩ জুন চার্জশিট আমলে গ্রহণ করেন আদালত। এছাড়াও একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন লায়লা।মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এ বিচারাধীন।

প্রিন্স মামুন ও লায়লা সামাজিক মাধ্যম টিকটকের আলোচিত নাম। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমে বিনোদনভিত্তিক কন্টেন্ট বানিয়ে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন তারা। দুজনের অসম প্রেম নিয়েও আলোচনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু হঠাৎই ঘটে ছন্দপতন। মদ্যপানে যেতে বাধা দেওয়ায় লায়লাকে মারধরের অভিযোগ উঠে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে।

২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি প্রিন্স মামুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে লায়লার বাসায় গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। বিয়ে না হলেও ওইদিন থেকে মামুন ও লায়লা থাকতেন একই রুমে। জানা যায়, লায়লাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে একাধিকবার তার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক গড়েন মামুন। লায়লা বিয়ের বিষয়ে বললে মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বাসা থেকে চলে যান।

এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে রোববার (৯ জুন) প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন লায়লা। আদালত মামলার এজহার গ্রহণ করে ৩ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারেই উঠে আসে ঘটনার বিস্তারিত।

অভিযোগে লায়লা উল্লেখ করেন, মামলার বিবাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে আমার গত তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে মামুন আমাকে বিয়ে করবে মর্মে প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। সে আমাকে জানায়, তার ঢাকায় থাকার মত নিজস্ব কোনো বাসা নেই। যেহেতু প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং মামুন আমাকে বিয়ে করবে বলে জানায়, তাই তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে তাকে আমার বাসায় থাকার অনুমতি দিই।

বিয়ের আগেই এক রুমে থাকতেন লায়লা-মামুন
২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি মামুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় এসে বসবাস করতে থাকে। ওইদিন থেকে সে আমার বাসায় আমার সঙ্গে একই রুমে থাকতে শুরু করে। আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে একাধিকবার আমার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপন করে। মামুন আমার বাসায় থাকাকালে তার বাবা-মা মাঝেমধ্যেই সেখানে এসে অবস্থান করতো। আমি মামুনকে একাধিকবার বিয়ের বিষয় বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মার্চ মামুন আমার শয়ন কক্ষে আগের মতো আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীসময়ে আমি তাকে বিয়ের বিষয়ে বললে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমাকে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।

গত ১৫ মার্চ মামুন আমাকে বিয়ে করবে না মর্মে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আমার বাসা থেকে চলে যায়। এরপর আমি লোকমুখে জানতে পারি মামুন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। তখন আমি একাধিকবার তার বাসায় গেলে সে আমাকে বিয়ে করবে না মর্মে চরমভাবে অপমান করে এবং তার বাসার দরজা থেকে আমাকে বের করে দেয়। আমি উপায় না পেয়ে মামুনের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার বিষয়ে বললে তারাও আমার কথায় কর্ণপাত না করে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করে।

আমাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।- প্রিন্স মামুন

মামলার ঘটনার প্রায় তিন বছর আগে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে লায়লার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই মামুন বাদীর বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় একসঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। মামুন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে লায়লার কাছ থেকে টাকা নিতেন এবং প্রায়ই মদ্যপান করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর বাদী ও আসামি উত্তরায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরেন। পর দিন মামুনসহ তার বন্ধুরা মদ্যপান করতে মিরপুর যাওয়ার পরিকল্পনা করলে লায়লা সেটি টের পেয়ে যান। পরে মামুনকে মদ্যপানের জন্য বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করলে আসামি মামুন উত্তেজিত হয়ে লায়লাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।

লায়লা এর প্রতিবাদ করলে মামুন তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে জখম করে। এতে লায়লার মুখমণ্ডলসহ দুই চোখের নিচে-উপরে ও মাথায় জখম হয়। পরে মামুন বাদীকে টেনেহিঁচড়ে বাসা থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে যান।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, লায়লা রাস্তায় পড়ে গেলে প্রিন্স মামুন তাকে হত্যার উদ্দেশে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। শোরগোল শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে লায়লা প্রাণে বেঁচে যান এবং মামুনসহ তার বন্ধুরা লায়লাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।

৪ জুন জামিন পেয়ে প্রিন্স মামুন আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা। আসলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

লায়লাকে হত্যাচেষ্টা, প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য শুরু

আইন-আদালত ডেস্ক
Update Time : ০৫:৩৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত টিকটকার লায়লা আখতার ফরহাদকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলায় আরেক টিকটকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত মামলার বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। তবে এদিন তার জেরা শেষ না হওয়ায় আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আদালত।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আসামির অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। শুনানিকালে মামুন ও লায়লা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রিন্স মামুনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় লায়লার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই পরিবারের সম্মতিতে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে লায়লার বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। তখন থেকে প্রিন্স মামুন লায়লার বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় বসবাস করতে থাকেন। এরপর থেকে প্রিন্স মামুন বিভিন্ন অজুহাতে লায়লার কাছ থেকে টাকা নিতেন। প্রায় সময় মাদকসেবন করে গভীর রাতে বাসায় আসতেন। অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেন। এমনকি মাঝে মধ্যে লায়লাকে মারপিট করতেন। বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি আদায়ের পাঁয়তারা করতেন মামুন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর উত্তরায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বাসায় ফেরেন তারা। এ সময় মামুনসহ আরও দুজন মদপানের জন্য মিরপুরে যাওয়ার পরামর্শ করেন। লায়লা তাকে নিষেধ করেন এবং বাধা দেন। এতে মামুন উত্তেজিত হয়ে লায়লাকে গালি দেন। গালি দিতে নিষেধ করলে মামুন লায়লাকে মারধর করেন ও হত্যার চেষ্টা করেন।

মামলাটি তদন্ত শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। পরে ওই বছরের ৩ জুন চার্জশিট আমলে গ্রহণ করেন আদালত। এছাড়াও একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন লায়লা।মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯ এ বিচারাধীন।

প্রিন্স মামুন ও লায়লা সামাজিক মাধ্যম টিকটকের আলোচিত নাম। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমে বিনোদনভিত্তিক কন্টেন্ট বানিয়ে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন তারা। দুজনের অসম প্রেম নিয়েও আলোচনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু হঠাৎই ঘটে ছন্দপতন। মদ্যপানে যেতে বাধা দেওয়ায় লায়লাকে মারধরের অভিযোগ উঠে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে।

২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি প্রিন্স মামুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে লায়লার বাসায় গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। বিয়ে না হলেও ওইদিন থেকে মামুন ও লায়লা থাকতেন একই রুমে। জানা যায়, লায়লাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে একাধিকবার তার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক গড়েন মামুন। লায়লা বিয়ের বিষয়ে বললে মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে বাসা থেকে চলে যান।

এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে রোববার (৯ জুন) প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন লায়লা। আদালত মামলার এজহার গ্রহণ করে ৩ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারেই উঠে আসে ঘটনার বিস্তারিত।

অভিযোগে লায়লা উল্লেখ করেন, মামলার বিবাদী আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে আমার গত তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে মামুন আমাকে বিয়ে করবে মর্মে প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। সে আমাকে জানায়, তার ঢাকায় থাকার মত নিজস্ব কোনো বাসা নেই। যেহেতু প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং মামুন আমাকে বিয়ে করবে বলে জানায়, তাই তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে তাকে আমার বাসায় থাকার অনুমতি দিই।

বিয়ের আগেই এক রুমে থাকতেন লায়লা-মামুন
২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি মামুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় এসে বসবাস করতে থাকে। ওইদিন থেকে সে আমার বাসায় আমার সঙ্গে একই রুমে থাকতে শুরু করে। আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে একাধিকবার আমার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক স্থাপন করে। মামুন আমার বাসায় থাকাকালে তার বাবা-মা মাঝেমধ্যেই সেখানে এসে অবস্থান করতো। আমি মামুনকে একাধিকবার বিয়ের বিষয় বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মার্চ মামুন আমার শয়ন কক্ষে আগের মতো আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীসময়ে আমি তাকে বিয়ের বিষয়ে বললে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমাকে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।

গত ১৫ মার্চ মামুন আমাকে বিয়ে করবে না মর্মে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আমার বাসা থেকে চলে যায়। এরপর আমি লোকমুখে জানতে পারি মামুন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছে। তখন আমি একাধিকবার তার বাসায় গেলে সে আমাকে বিয়ে করবে না মর্মে চরমভাবে অপমান করে এবং তার বাসার দরজা থেকে আমাকে বের করে দেয়। আমি উপায় না পেয়ে মামুনের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার বিষয়ে বললে তারাও আমার কথায় কর্ণপাত না করে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করে।

আমাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।- প্রিন্স মামুন

মামলার ঘটনার প্রায় তিন বছর আগে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে লায়লার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই মামুন বাদীর বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় একসঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। মামুন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে লায়লার কাছ থেকে টাকা নিতেন এবং প্রায়ই মদ্যপান করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর বাদী ও আসামি উত্তরায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরেন। পর দিন মামুনসহ তার বন্ধুরা মদ্যপান করতে মিরপুর যাওয়ার পরিকল্পনা করলে লায়লা সেটি টের পেয়ে যান। পরে মামুনকে মদ্যপানের জন্য বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করলে আসামি মামুন উত্তেজিত হয়ে লায়লাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।

লায়লা এর প্রতিবাদ করলে মামুন তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে জখম করে। এতে লায়লার মুখমণ্ডলসহ দুই চোখের নিচে-উপরে ও মাথায় জখম হয়। পরে মামুন বাদীকে টেনেহিঁচড়ে বাসা থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে যান।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, লায়লা রাস্তায় পড়ে গেলে প্রিন্স মামুন তাকে হত্যার উদ্দেশে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। শোরগোল শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে লায়লা প্রাণে বেঁচে যান এবং মামুনসহ তার বন্ধুরা লায়লাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।

৪ জুন জামিন পেয়ে প্রিন্স মামুন আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা। আসলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।