নেপথ্যে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সুবক্তগীন
রেলওয়ে প্রকল্পে গাফিলতি ও আর্থিক অনিয়ম, সরকারের কোটি টাকার ক্ষতি
- Update Time : ১২:৫০:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
- / ২১ Time View
বাংলাদেশ রেলওয়ের টেম্পিং ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বড় ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) দপ্তর। শুধু চট্টগ্রাম সিআরবি অঞ্চলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে সম্পন্ন হওয়া টেম্পিং কাজের ক্ষেত্রে চুক্তি বাস্তবায়ন, ভাড়া নির্ধারণ ও আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়ায় অসংগতি এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যার প্রত্যক্ষ দায়ভার পড়ে তৎকালীন রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) মোহাম্মদ সুবক্তগীনের ওপর।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেম্পিং মেশিন ভাড়া প্রাক্কলনের নিয়ম থাকা সত্ত্বেও “Employer Risk Portion” দেখিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিনা খরচে মেশিন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অথচ একই সময়ে অন্যান্য প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার টেম্পিং ভাড়া ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী রেলওয়ের নিজস্ব সিডিউল SR–2013 অনুসারে ৩০ হাজার টাকা হারে ভাড়া ধরে হিসাব নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল।
কিন্তু সুবক্তগীনের অনুমোদনে টেম্পিং ভাড়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যার ফলে সরকার প্রায় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিরীক্ষা কর্মকর্তারা একে “সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রাপ্ত নথিতে দেখা গেছে, Advance Rail Track Solution Bangladesh Ltd. এবং Alahee International নামের একই ব্যবসায়িক গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান বারবার টেম্পিং কাজের চুক্তি পেয়েছে। এতে দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, একটি চুক্তিতে ২২ লাখ টাকার বেশি ব্যয় দেখানো হলেও প্রকৃত কাজ হয়েছে মাত্র ১৯.৬৫০ কিলোমিটার। অন্য এক চুক্তিতে ৯৮.৮৮ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করা হলেও মাঠ পর্যায়ে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ কাজের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, যাত্রী এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, রেললাইনে ঘনঘন সমস্যা, লাইন বিকল এবং ট্রেন বিলম্ব নগণ্য মাত্রায়ও কমেনি। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে— “যদি এত টাকা খরচ হয়, তাহলে উন্নতি কোথায়?”
প্রতিটি চুক্তিতে ৩০ হাজার টাকা হারে অগ্রিম বিল প্রদান করা হলেও কাজের মূল্যায়ন করা হয়নি। নিরীক্ষা কর্মকর্তারা মনে করেন, “কাগজে-কলমে রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা বিল উঠানো হয়েছে, বাস্তবে ওই কাজের অস্তিত্ব নেই।”
রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোডের ধারা ১০৩ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যয়ের পূর্ণ দায় সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রকৌশলীর ওপর বর্তায়। সেই হিসেবে সুবক্তগীন আর্থিক দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য নিরীক্ষা বিভাগের।
অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি ইতোমধ্যে রেলওয়ে বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ে গিয়েছে। প্রধান প্রকৌশলী সুবক্তগীনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশও করা হয়েছে।
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এ ব্যাপারে সুবক্তগীনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইলে কল করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়









































































































































































































