ঢাকা ১২:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
রায় ছিড়ে ফেলার ঘটনায় নিজেকে বাঁচাতে উল্টো ম্যাজিস্ট্রেটকে পুলিশে সোপর্দের হুমকি জজের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেবে: তারেক রহমান ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি মৌসুমের সেরা ফুটবলারের তালিকায় মেসি চীনের সঙ্গে কাজে কী ঝুঁকি- বাংলাদেশকে বোঝাবে যুক্তরাষ্ট্র নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান কক্সবাজার বিমানবন্দর হারাল ‘আন্তর্জাতিক’ স্বীকৃতি খতিব নিখোঁজের ঘটনায় টঙ্গীতে ইসকন বিরোধী বিক্ষোভ মাত্র ১৮ লাখ টাকায় ভাঙারির কাছে বিক্রি ‘মিনিস্টার বাড়ি’
শরিয়তপুরের জেলা জজ সোলায়মানের অবাক কান্ড-২

রায় ছিড়ে ফেলার ঘটনায় নিজেকে বাঁচাতে উল্টো ম্যাজিস্ট্রেটকে পুলিশে সোপর্দের হুমকি জজের

নওরোজ রিপোর্ট
  • Update Time : ১০:০০:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৬৩ Time View

শরীয়তপুরের জেলা জজ মো. সোলায়মান

ঢাকা থেকে সিএমএম কোর্টের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরিফুল ইসলামকে এসিআর দিবে বলে ডেকে নিয়ে শরিয়তপুরের জেলা জজ সোলায়মান তার খাস কামরায় অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন, হুমকি ধামকি হুংকার দিয়ে বলেন, “রায় ছিড়ার ব্যাপার নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমার পরিণাম খারাপ হবে। আমার নাম সোলায়মান, তুমি আমারে চিনো না, দাড়ি টুপি রাখছি, নামাজ পড়ি বলে আমাকে ভোদাই ভাইবো না, তুমি আমার পরিচয় জানো না, আমার বাপ ইপিসিএস অফিসার ছিল, আমার মতো ফ্যামিলির বিচারক বিচার বিভাগে খুজে একটাও পাবে না।”
তার চিৎকার ও হুংকারের আওয়াজ শুনে কোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সেরেস্তাদার, পেশকার, উমেদার, জারিকারক ও আইনজীবিগন খাস কামরার সামনে জড়ো হন, ঐ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অতি উৎসাহী কর্মচারী পুরো কথোপকথনটি মোবাইলে রেকর্ড করেন। দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত টানা প্রায় আড়াই ঘন্টা কোর্টের সমস্ত কার্যক্রম মুলতবি রেখে ম্যাজিস্ট্রেটেকে ঠায় দাড় করিয়ে তার উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ চালিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখালেন জজ মোঃ সোলায়মান।
খাস কামড়ায় এই নজিরবিহীন চিৎকারের ঘটনাটি সবাইকে হতবাক করে ফেলে, অনেকেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে জেলা জজের আচরণকে ধিক্কার দিতে শুরু করেন।
এব‍্যাপারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন এমন জেলা জজ তার জীবনে দেখেন নাই, তার জীবনে এই প্রথম একজন জেলা জজকে তার সাবেক অধিনস্থ বিচারককে তুই তুকারি করে গালিগালাজ করা  বিচার বিভাগে এটাই প্রথম ঘটনা।
এমন আচরণ দেখে একজন প্রবীন আইনজীবি বলেন, এ ধরনের আচরণ কেউ পিওন এর সাথেও করে না এটা শিষ্টাচার বর্হিভূত এবং ওপেশাদার আচরণ।
দৈনিক নওরোজে আলোচ্য জেলা জজের খবর প্রকাশের পর বিচার বিভাগে নিয়ে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেক সিনিয়র জজও নওরোজ প্রতিবেদককে বলেন, এমন লোক জেলা জজ হয় কি ভাবে?
নওরোজ কার্যালয়ে সংরক্ষিত আড়াই ঘন্টার অডিও রেকর্ডিং এর “চুম্বক অংশ” তুলে ধরা হলো।
জেলা জজ সোলায়মান : “এখানে তো কেউ কারো শত্রু না, আমিও আপনার শত্রু না আপনিও আমার শত্রু না। আপনার সাথে আমার চাকরীই বা কতদিন! মাত্র ৭ কর্মদিবস”।
ম্যাজিস্ট্রেট : স্যার আপনার সাথে যদি কোন ভুল বোঝাবুঝি হয় আমাকে মাফ করে দেন। আপনি আমার অভিভাবক।
জেলা জজ : আপনি আমার সাথে অবিচার করছেন। কাজটা ঠিক করেন নাই।
ম্যাজিস্ট্রেট: আমার সাথেও তো অবিচার হইছে স্যার। আপনি আমার রায় ছিড়ে ফেলে দিয়ে আমার উপর জুলুম করছেন। স্যার নথি নিয়ে আমার সাথে যা হইছে আমি কি অপরাধ করেছি স্যার?
জেলা জজ : “নথী নেওয়ার ক্ষমতা ২৪ ধারায় জেলা জজকে দেয়া আছে কিনা?  বিনা কারনে জেলা জজ চাইলে নথি নিয়ে যেতে পারবে”।
ম্যাজিস্ট্রেট:  পেশকার হাবিব বলেছে আপনি রায় ছিড়ে ফেলেছেন, আমি রায় দিয়ে রিসিভ করাইছি।
জেলা জজ : অসম্ভব,অসম্ভব। আমি রায় পাই নাই এটা ডাহা মিথ্যা কথা, আমি তো রায় পাই নাই (তিন বার বলেন), নথিতে কোন রায় দেখি নাই।
ম্যাজিস্ট্রেট:  আমি জমা দিছি, আমি প্রকাশ্য আদালতে রায় দিয়েছি এবং তা ডায়রী কজ লিস্টে লেখা আছে।
জেলা জজ : আমি রায় পাই নাই। আপনি কি  করেছেন, রায় কি দিছেন না দিছেন আমি জানি না, আপনি যা বলেছেন পেশকার সাহেব যদি বলে থাকে সে ভুল করছে, আর আপনি বলে তা বলে ভুল করতেছেন।
জেলা জজ : মিথ্যার একটা সীমা আছে এবং ঐ দিনও ডায়রী কজ লিস্টে আপনার তারিখ ধার্য নাই। ডায়রী কজ লিস্টে লেখা নাই। আমি আপনার কোন রায় পাই নাই।
ম্যাজিস্ট্রেট: আমি আগেও বলেছি তা ডায়েরী ও কজ লিস্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে এবং আমি প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষনা করেছি, বাদী বিবাদীর উপস্থিতিতে, সমস্ত স্টাফ ও উকিলদের সামনে রায়ের আদেশ পড়ে শোনানো হয়েছে।
জেলা জজ : আপনার রায়, এই (প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে) ইয়া করেন তো, নথিটা টুয়েন্টি ফোর করে, কি বলে ই্যায়া, কি বলে, আমাদের সাদ্দামের কোর্ট নড়িয়া কোর্টে যে নথিটি পাঠাইছি, আর আমি যে টুয়েন্টি ফোর মঞ্জুর করেছি সেই নথিটা আনেন তো। সেই দরখাস্তটা টুয়েন্টি ফোরের আবেদনটা আনেন। (জোড় কন্ঠে ও রাগান্বিত কন্ঠে)।
জেলা জজ : এই যে সে আবেদন করছে ২২-৯-২৪ইং তারিখে, এও সাহেব প্রভাবিত হয়ে আমার সামনে উপস্থাপন করেছে ২৬-০৯-২৪ইং তারিখে, চার দিন পর প্রভাবিত হয়ে সে আমার কাছে নথি উপস্থাপন করেছে ২৬-০৯-২৪ ইং তারিখে, যে তারিখে আমার সামনে উপস্থাপন করেছে আমি সেই তারিখেই অর্ডার দিয়ে দিছি  ২২ তারিখে নথি উপস্থাপন করলে এই সমস্যা হতো না। (উল্লেখ্যে এখানে তিনি উদোর পিন্ডি বুদোর ঘারে চাপার অবস্থা অর্থাৎ নিজের দোষ এও এর উপর চাপিয়ে দেন)।
ম্যাজিস্ট্রেট: স্যার আপনি পেশকারকে ডাকেন, সে নিজে বলছে তার সামনে আপনি রায় ছিড়েছেন।
জেলা জজ : আপনি তাকে ডাকেন, আমি তাকে ডাকবো কেন?
ম্যাজিস্ট্রেট : পেশকার আপনার কর্মচারী আপনি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন।
জেলা জজ : জেলা জজ বার বার বলেন আমি তাকে ডাকবো না, আপনি ডাকেন।
ম্যাজিস্ট্রেট : স্যার আপনি কোন আইন বলে ঘোষিত রায়ের নথি বদলী করলেন? আমার কি অপরাধ?
জেলা জজ : “টুয়েন্টি ফোর করতে রায়ের নথি লাগে না। কোথাও বলা নাই নথি লাগে। টুয়েন্টি ফোর করতে কারোও কাছে ব্যাখ্যা নিতে হয় না। আপনি যদি রায় দিয়ে থাকেন, রায় হওয়া অবস্থায় টুয়েন্টি ফোর হবে যদিও রায় দিয়ে থাকেন, ঐ নথিটা সরাইয়া দিছি ওখান থেকে” (অন্য আদালতে)।
তোমার গায়ে এতো শক্তি হয়ে গেছে, তুমি জেলা জজকে মিথ্যা ব্লেম দাও। তুমি বিএনপির নেতা, দেখবোনে বিএনপির নেতা। আমি তারেক রহমানকে বলবো, আমি খালেদা জিয়াকে বলবো, ড. মঈন খানকে বলবো প্রত্যেকটা বিএনপির লিডারকে বলবো, এ সেই তোমাদের নাম ভাঙ্গাইয়া চলতেছে, এই হলো সে যা হয় আমি দেখবো। তুমি সোলায়মানকে চিনো নাই, সোলাইমানকে এখানে বসে ইমপ্লাইড থ্রেট দিতাছ। মনে করছো চুপচাপ মানুষ, দাড়ি গোফ রাখে, নামাজ পড়ে, সে একটা ভোদাই। সে কোন হেড?
জেলা জজ : ফাজলামীর একটা সীমা আছে। আমাকে বলে আমি নাকি তার রায় ছিড়ে ফেলেছি ,  ফাজিল কতো, শয়তান বেটা। কি বলবো আমি, কত বড় সাহস তোর। সোলেমান কাউকে ভয় পায় না, বিগত ২৮ বছর ধরে সোলেমানের ক্যারিয়ার দেখ, ভদ্র মানুষ দেইখ্যা এখনো পুলিশে দেই নাই তোকে, তোর মতোন হলে আমি তোকে পুলিশে দিতাম। তোর চেয়ে আমি ভাল। সোজা বলতাম তুই আমাকে থ্রেট দিছিস, তোর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করে দিতাম। দেখতাম তুই কি করিস।
ভয় পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট মাফ চাইতে গেলে, জেলা জজ অত্যাধিক মারমুখী হয়ে বলেন, “এই বিং…(অকথ্য ভাষা) তুই যদি ফার্দার আমাকে ডিস্ট্রাব করিস, আমি তোকে পুলিশে এরেস্ট করে সোজা জেলে পাঠিয়ে দিবো, পুলিশকে বলবো, তুমি আমার এখানে এসে আমাকে ইম্লাইড থ্রেট দিচ্ছো। কোন ক্ষমা নাই তোমার, ফার্দার আরেকটা কথা বললে আমি পুলিশ দিয়ে তোমাকে জেলে পাঠিয়ে দিবো। জেলে পাঠিয়ে দিয়ে তোমার বিরুদ্ধে ফৌজদারী প্রসিডিং শুরু করিয়ে দিবো। তুমি সোলায়মানকে চিনো না।”
আমি ২৪ মঞ্জুর করছি, তোমার নথিও আমি দেখি নাই, রায়ও আমি দেখি নাই। ফাজিল কতো।
উল্লেখ্য এর আগে জেলা জজ নিজেই স্বীকার করে বলেন, আমি নথি নিয়ে দেখেছি, নথিতে রায় পাই নাই। নিজের দোষ ধামাচাপা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সব কিছুর জন্য দায়ী এও সে যদি ২২ তারিখে নথি উপস্থাপন করতো এই ভেজাল লাগতো না, সে চার দিন পর নথি আমার সামনে উপস্থাপন করেছে বলেই ভেজাল লাগছে।
আমি তোকে দেখে নিবো, আইন সচিব, প্রধান বিচারপতি, রেজিস্ট্রারসহ সকল বিচারকের কাছে বলবো তুই খুব খারাপ তোর ক্যারিয়ার শেষ করে দিবো।
ম্যাজিস্ট্রেট এসিআর দিতে অনুরোধ করায় এক পর্যায়ে জেলা জজ বলেন,“তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো, যা আমাকে ইতিপূর্বেকার জেলা জজ অনুপ কুমারও বার বার বলেছেন, আমাকেও এসিআর খারাপ দিতে অনুরোধ করেছেন।”
জেলা জজ এরপর নরম সুরে  অবৈধ প্রক্রিয়ায় রায় ছিড়ার দায় হতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে নতি স্বীকার করে আপোষের প্রস্তাব দেন… যা জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বে।

Please Share This Post in Your Social Media

শরিয়তপুরের জেলা জজ সোলায়মানের অবাক কান্ড-২

রায় ছিড়ে ফেলার ঘটনায় নিজেকে বাঁচাতে উল্টো ম্যাজিস্ট্রেটকে পুলিশে সোপর্দের হুমকি জজের

নওরোজ রিপোর্ট
Update Time : ১০:০০:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা থেকে সিএমএম কোর্টের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরিফুল ইসলামকে এসিআর দিবে বলে ডেকে নিয়ে শরিয়তপুরের জেলা জজ সোলায়মান তার খাস কামরায় অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন, হুমকি ধামকি হুংকার দিয়ে বলেন, “রায় ছিড়ার ব্যাপার নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমার পরিণাম খারাপ হবে। আমার নাম সোলায়মান, তুমি আমারে চিনো না, দাড়ি টুপি রাখছি, নামাজ পড়ি বলে আমাকে ভোদাই ভাইবো না, তুমি আমার পরিচয় জানো না, আমার বাপ ইপিসিএস অফিসার ছিল, আমার মতো ফ্যামিলির বিচারক বিচার বিভাগে খুজে একটাও পাবে না।”
তার চিৎকার ও হুংকারের আওয়াজ শুনে কোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সেরেস্তাদার, পেশকার, উমেদার, জারিকারক ও আইনজীবিগন খাস কামরার সামনে জড়ো হন, ঐ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অতি উৎসাহী কর্মচারী পুরো কথোপকথনটি মোবাইলে রেকর্ড করেন। দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত টানা প্রায় আড়াই ঘন্টা কোর্টের সমস্ত কার্যক্রম মুলতবি রেখে ম্যাজিস্ট্রেটেকে ঠায় দাড় করিয়ে তার উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ চালিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখালেন জজ মোঃ সোলায়মান।
খাস কামড়ায় এই নজিরবিহীন চিৎকারের ঘটনাটি সবাইকে হতবাক করে ফেলে, অনেকেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে জেলা জজের আচরণকে ধিক্কার দিতে শুরু করেন।
এব‍্যাপারে প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন এমন জেলা জজ তার জীবনে দেখেন নাই, তার জীবনে এই প্রথম একজন জেলা জজকে তার সাবেক অধিনস্থ বিচারককে তুই তুকারি করে গালিগালাজ করা  বিচার বিভাগে এটাই প্রথম ঘটনা।
এমন আচরণ দেখে একজন প্রবীন আইনজীবি বলেন, এ ধরনের আচরণ কেউ পিওন এর সাথেও করে না এটা শিষ্টাচার বর্হিভূত এবং ওপেশাদার আচরণ।
দৈনিক নওরোজে আলোচ্য জেলা জজের খবর প্রকাশের পর বিচার বিভাগে নিয়ে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেক সিনিয়র জজও নওরোজ প্রতিবেদককে বলেন, এমন লোক জেলা জজ হয় কি ভাবে?
নওরোজ কার্যালয়ে সংরক্ষিত আড়াই ঘন্টার অডিও রেকর্ডিং এর “চুম্বক অংশ” তুলে ধরা হলো।
জেলা জজ সোলায়মান : “এখানে তো কেউ কারো শত্রু না, আমিও আপনার শত্রু না আপনিও আমার শত্রু না। আপনার সাথে আমার চাকরীই বা কতদিন! মাত্র ৭ কর্মদিবস”।
ম্যাজিস্ট্রেট : স্যার আপনার সাথে যদি কোন ভুল বোঝাবুঝি হয় আমাকে মাফ করে দেন। আপনি আমার অভিভাবক।
জেলা জজ : আপনি আমার সাথে অবিচার করছেন। কাজটা ঠিক করেন নাই।
ম্যাজিস্ট্রেট: আমার সাথেও তো অবিচার হইছে স্যার। আপনি আমার রায় ছিড়ে ফেলে দিয়ে আমার উপর জুলুম করছেন। স্যার নথি নিয়ে আমার সাথে যা হইছে আমি কি অপরাধ করেছি স্যার?
জেলা জজ : “নথী নেওয়ার ক্ষমতা ২৪ ধারায় জেলা জজকে দেয়া আছে কিনা?  বিনা কারনে জেলা জজ চাইলে নথি নিয়ে যেতে পারবে”।
ম্যাজিস্ট্রেট:  পেশকার হাবিব বলেছে আপনি রায় ছিড়ে ফেলেছেন, আমি রায় দিয়ে রিসিভ করাইছি।
জেলা জজ : অসম্ভব,অসম্ভব। আমি রায় পাই নাই এটা ডাহা মিথ্যা কথা, আমি তো রায় পাই নাই (তিন বার বলেন), নথিতে কোন রায় দেখি নাই।
ম্যাজিস্ট্রেট:  আমি জমা দিছি, আমি প্রকাশ্য আদালতে রায় দিয়েছি এবং তা ডায়রী কজ লিস্টে লেখা আছে।
জেলা জজ : আমি রায় পাই নাই। আপনি কি  করেছেন, রায় কি দিছেন না দিছেন আমি জানি না, আপনি যা বলেছেন পেশকার সাহেব যদি বলে থাকে সে ভুল করছে, আর আপনি বলে তা বলে ভুল করতেছেন।
জেলা জজ : মিথ্যার একটা সীমা আছে এবং ঐ দিনও ডায়রী কজ লিস্টে আপনার তারিখ ধার্য নাই। ডায়রী কজ লিস্টে লেখা নাই। আমি আপনার কোন রায় পাই নাই।
ম্যাজিস্ট্রেট: আমি আগেও বলেছি তা ডায়েরী ও কজ লিস্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে এবং আমি প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষনা করেছি, বাদী বিবাদীর উপস্থিতিতে, সমস্ত স্টাফ ও উকিলদের সামনে রায়ের আদেশ পড়ে শোনানো হয়েছে।
জেলা জজ : আপনার রায়, এই (প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে) ইয়া করেন তো, নথিটা টুয়েন্টি ফোর করে, কি বলে ই্যায়া, কি বলে, আমাদের সাদ্দামের কোর্ট নড়িয়া কোর্টে যে নথিটি পাঠাইছি, আর আমি যে টুয়েন্টি ফোর মঞ্জুর করেছি সেই নথিটা আনেন তো। সেই দরখাস্তটা টুয়েন্টি ফোরের আবেদনটা আনেন। (জোড় কন্ঠে ও রাগান্বিত কন্ঠে)।
জেলা জজ : এই যে সে আবেদন করছে ২২-৯-২৪ইং তারিখে, এও সাহেব প্রভাবিত হয়ে আমার সামনে উপস্থাপন করেছে ২৬-০৯-২৪ইং তারিখে, চার দিন পর প্রভাবিত হয়ে সে আমার কাছে নথি উপস্থাপন করেছে ২৬-০৯-২৪ ইং তারিখে, যে তারিখে আমার সামনে উপস্থাপন করেছে আমি সেই তারিখেই অর্ডার দিয়ে দিছি  ২২ তারিখে নথি উপস্থাপন করলে এই সমস্যা হতো না। (উল্লেখ্যে এখানে তিনি উদোর পিন্ডি বুদোর ঘারে চাপার অবস্থা অর্থাৎ নিজের দোষ এও এর উপর চাপিয়ে দেন)।
ম্যাজিস্ট্রেট: স্যার আপনি পেশকারকে ডাকেন, সে নিজে বলছে তার সামনে আপনি রায় ছিড়েছেন।
জেলা জজ : আপনি তাকে ডাকেন, আমি তাকে ডাকবো কেন?
ম্যাজিস্ট্রেট : পেশকার আপনার কর্মচারী আপনি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন।
জেলা জজ : জেলা জজ বার বার বলেন আমি তাকে ডাকবো না, আপনি ডাকেন।
ম্যাজিস্ট্রেট : স্যার আপনি কোন আইন বলে ঘোষিত রায়ের নথি বদলী করলেন? আমার কি অপরাধ?
জেলা জজ : “টুয়েন্টি ফোর করতে রায়ের নথি লাগে না। কোথাও বলা নাই নথি লাগে। টুয়েন্টি ফোর করতে কারোও কাছে ব্যাখ্যা নিতে হয় না। আপনি যদি রায় দিয়ে থাকেন, রায় হওয়া অবস্থায় টুয়েন্টি ফোর হবে যদিও রায় দিয়ে থাকেন, ঐ নথিটা সরাইয়া দিছি ওখান থেকে” (অন্য আদালতে)।
তোমার গায়ে এতো শক্তি হয়ে গেছে, তুমি জেলা জজকে মিথ্যা ব্লেম দাও। তুমি বিএনপির নেতা, দেখবোনে বিএনপির নেতা। আমি তারেক রহমানকে বলবো, আমি খালেদা জিয়াকে বলবো, ড. মঈন খানকে বলবো প্রত্যেকটা বিএনপির লিডারকে বলবো, এ সেই তোমাদের নাম ভাঙ্গাইয়া চলতেছে, এই হলো সে যা হয় আমি দেখবো। তুমি সোলায়মানকে চিনো নাই, সোলাইমানকে এখানে বসে ইমপ্লাইড থ্রেট দিতাছ। মনে করছো চুপচাপ মানুষ, দাড়ি গোফ রাখে, নামাজ পড়ে, সে একটা ভোদাই। সে কোন হেড?
জেলা জজ : ফাজলামীর একটা সীমা আছে। আমাকে বলে আমি নাকি তার রায় ছিড়ে ফেলেছি ,  ফাজিল কতো, শয়তান বেটা। কি বলবো আমি, কত বড় সাহস তোর। সোলেমান কাউকে ভয় পায় না, বিগত ২৮ বছর ধরে সোলেমানের ক্যারিয়ার দেখ, ভদ্র মানুষ দেইখ্যা এখনো পুলিশে দেই নাই তোকে, তোর মতোন হলে আমি তোকে পুলিশে দিতাম। তোর চেয়ে আমি ভাল। সোজা বলতাম তুই আমাকে থ্রেট দিছিস, তোর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করে দিতাম। দেখতাম তুই কি করিস।
ভয় পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট মাফ চাইতে গেলে, জেলা জজ অত্যাধিক মারমুখী হয়ে বলেন, “এই বিং…(অকথ্য ভাষা) তুই যদি ফার্দার আমাকে ডিস্ট্রাব করিস, আমি তোকে পুলিশে এরেস্ট করে সোজা জেলে পাঠিয়ে দিবো, পুলিশকে বলবো, তুমি আমার এখানে এসে আমাকে ইম্লাইড থ্রেট দিচ্ছো। কোন ক্ষমা নাই তোমার, ফার্দার আরেকটা কথা বললে আমি পুলিশ দিয়ে তোমাকে জেলে পাঠিয়ে দিবো। জেলে পাঠিয়ে দিয়ে তোমার বিরুদ্ধে ফৌজদারী প্রসিডিং শুরু করিয়ে দিবো। তুমি সোলায়মানকে চিনো না।”
আমি ২৪ মঞ্জুর করছি, তোমার নথিও আমি দেখি নাই, রায়ও আমি দেখি নাই। ফাজিল কতো।
উল্লেখ্য এর আগে জেলা জজ নিজেই স্বীকার করে বলেন, আমি নথি নিয়ে দেখেছি, নথিতে রায় পাই নাই। নিজের দোষ ধামাচাপা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, সব কিছুর জন্য দায়ী এও সে যদি ২২ তারিখে নথি উপস্থাপন করতো এই ভেজাল লাগতো না, সে চার দিন পর নথি আমার সামনে উপস্থাপন করেছে বলেই ভেজাল লাগছে।
আমি তোকে দেখে নিবো, আইন সচিব, প্রধান বিচারপতি, রেজিস্ট্রারসহ সকল বিচারকের কাছে বলবো তুই খুব খারাপ তোর ক্যারিয়ার শেষ করে দিবো।
ম্যাজিস্ট্রেট এসিআর দিতে অনুরোধ করায় এক পর্যায়ে জেলা জজ বলেন,“তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো, যা আমাকে ইতিপূর্বেকার জেলা জজ অনুপ কুমারও বার বার বলেছেন, আমাকেও এসিআর খারাপ দিতে অনুরোধ করেছেন।”
জেলা জজ এরপর নরম সুরে  অবৈধ প্রক্রিয়ায় রায় ছিড়ার দায় হতে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে নতি স্বীকার করে আপোষের প্রস্তাব দেন… যা জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বে।