ঢাকা ১১:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

রামপুরের বানরঃ খাদ্যাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশের গ্রাম জনপদে

Reporter Name
  • Update Time : ০৯:০১:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩
  • / ২০৭ Time View

আতাউর রহমান ফারুক,মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি: সংখ্যায় শ’ দুই তিন ওরা।চৌর্যবৃত্তিতে সেরা।দস্যুবৃত্তিতেও জুড়ি নেই।ডাকাতি রাহাজানিতেও পাকা। কি করবে ওরা পেট পূর্তি বলে কথা! আম কলা মূলা কাঁঠালের দুস্প্রাপ্যতা। তাই মানুষকে মান্যতা নেই আগের মতো। গ্রামীন ঝাড় জঙ্গল কমছে দিনদিন।প্রাকৃতিক খাবারে টান। তাই যে যেভাবে পারছে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে ওরা। আর তাই রামপুরের প্রাচীন আবাস ছেড়ে আশেপাশের গ্রাম জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে ওরা। রামপুরের মতোই ওরা এখন সর্বনাশ ঘটাচ্ছে সেসব জনপদের।

নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার উত্তরে শেষ জনপদের নাম রামপুর।সেই প্রাচীন কাল থেকে এখানে বেশ ক’টি বানর দলের আধিপত্য চলে আসছে। মনুষ্য বসতিতে বানর অনুপ্রবেশকারী এখানে,নাকি বানরের রাজত্বে মানুষ দখলদার সেটি নির্ধারন কঠিন।তবে মানুষের পাশাপাশি রামপুরের গ্রামীন ঝাড় জঙ্গল মাতিয়ে মন্দ ছিলো না ওরা। হিন্দু প্রধান এলাকা রামপুর।ফলে দেবতা হনুমানের নিকটাত্মীয়ের মর্যাদায় আদরে কদরে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলো ওরা বংশ পরম্পরায়।কিন্তু হালে গ্রামীন জঙ্গলের আকৃতি কমেছে।ফলে খাবারে টান পড়েছে তাদের।

এ জনপদে বানর এখন রীতিমতো উটকো ঝামেলা একটি। তাদের জীবন ধারন রীতি এখন রীতিমতো উৎপাত এ জনপদে। ফলে মানুষের দেব দ্বিজে ভক্তি শ্রদ্ধায় ভাটার টান এখন। সেটিই স্বাভাবিক।জঙ্গলের খাবারে টান পড়তে রীতিমতো চুরি,ছিনতাই,ডাকাতিতে হাত পাকিয়েছে এখন এ বানরকূল। এলাকাবাসীর অভিযোগ,সুযোগ পেলেই ছোঁ মেরে খাবার কেড়ে নিচ্ছে,দলবেঁধে জনপদের বাড়ীঘরে হামলে পড়ছে। উনুনে বসানো ভাতের হাঁড়ি উল্টে দিচ্ছে।গেরস্থের ডিমে তা দেয়া মুরগী তাড়িয়ে ডিম বগলদাবা করে পগার পার হচ্ছে। বেড়ে রাখা ভাত তরকারীর প্লেট নিয়ে লাগাচ্ছে ছুট।এলাকায় পুলিশের তদন্ত কেন্দ্র আছে একটি। তাতে থোড়াই কেয়ার তাদের।মানুষ ভয় করে পুলিশের নামে,কিন্তু ওরা দেখায় বৃদ্ধাঙ্গুল।গাছের ফল,ক্ষেতের ফসল,পানের বরজ তছনছ করছে।যতো না খায় তারচে বেশী নষ্ট করছে। কৃষকের সর্বনাশ ঘটাচ্ছে ওরা।এ জন্য এলাকাসীর মতে,কৃষি প্রধান এলাকাটির

দারিদ্রতার প্রধান কারন এ বানরকূল। প্রচুর পতিত জমি এখানে।বানরকূলের যন্ত্রনায় সেসবে চাষাবাদ নাকি কঠিন। উক্ত গ্রামের লিয়াকত আলী রতন জানান,আগে হিন্দু বাড়ীতে ফলজ গাছপালার প্রাচুর্য ছিলো।বানরদের খাবারে কমতি ছিলো না।এখন সে অবস্থা নেই। রামপুর গ্রামের বাসিন্দা খিদিরপুর হাই স্কুলের সাবেক শিক্ষক শুধাংসুু বনিক (৮০) কে দেখা গেলো লাঠি হাতে এক ধানী জমি পাহাড়ায়। লাগাবার পর থেকে রোজ সকাল-সন্ধ্যা গাছের ছায়ায় লাঠি হাতে মাচায় বসে এভাবে বানরের কবল থেকে ফসল রক্ষের সচেষ্ট তিনি- জানালেন এ প্রবীন শিক্ষক।

গ্রামবাসীর এতো বিরুপ মনোভাব ও আচরনের কারনে বানররা এখন দলে দলে চারপাশের বিভিন্ন গ্রাম জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি আঁতকে উঠার মতো,এক রামপুরবাসীর বারোটা বাজিয়েছে ওরা এতোদিন। এবার আরো বিস্তির্ন জনপদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে বারোটা বাজাবার আয়োজন হলো তবে।রামপুরের পার্শ্ববর্তী চর সাগরদী গ্রামে বানর দলের তান্ডব এখন চলমান রয়েছে।সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তারেক মাহমুদ অপু জানায়,তাদের এলাকায় বানরের উৎপাতে এক মরিচ ছাড়া আর কোন শাক-সবজী বা ফসলের চাষ কঠিন হয়ে পড়েছে এখন।

চর আহাম্মদপুর গ্রামের যুবক সানী জানালো,কয়েক বছর ধরে বানর দল ঘাঁটি গেড়েছে তাদের গ্রামে।ওরা অত্যাচারের চূড়ান্ত করছে সেখানে।রামপুর গ্রামের মৃত রমানাথ বনিকের স্ত্রী সন্ধ্যা বনিক (৬৫) বানরদের অত্যাচারের এক দীর্ঘ ফিরিস্তি দিলেন। শেষে নিজস্ব একটি সমাধান বাতলালেন এর।তার মতে,রামপুর ভূমি অফিসের পেছনে সরকারী খালি জায়গা আছে কতক।জায়গাটিকে দেয়াল দিয়ে ঘিরে নেট দিয়ে আবদ্ধ করে চিড়িয়াখানার মতো করা যেতে পারে এখানে।এতে সন্ধ্যা বনিকরা যেমন বানরের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবেন,বানরদেরও হিল্লে হয় একটা। দর্শনার্থীরা তাদের খাবার দেবে টাকাও আয় হবে তাতে। মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করীম জানান,বানরের বিষয়টি নিয়ে তারাও ভাবছেন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কোন আবেদন পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে সহায়ক হবে বলেও জানান তিনি।

 

Please Share This Post in Your Social Media

রামপুরের বানরঃ খাদ্যাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশের গ্রাম জনপদে

Update Time : ০৯:০১:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৩

আতাউর রহমান ফারুক,মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি: সংখ্যায় শ’ দুই তিন ওরা।চৌর্যবৃত্তিতে সেরা।দস্যুবৃত্তিতেও জুড়ি নেই।ডাকাতি রাহাজানিতেও পাকা। কি করবে ওরা পেট পূর্তি বলে কথা! আম কলা মূলা কাঁঠালের দুস্প্রাপ্যতা। তাই মানুষকে মান্যতা নেই আগের মতো। গ্রামীন ঝাড় জঙ্গল কমছে দিনদিন।প্রাকৃতিক খাবারে টান। তাই যে যেভাবে পারছে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে ওরা। আর তাই রামপুরের প্রাচীন আবাস ছেড়ে আশেপাশের গ্রাম জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে ওরা। রামপুরের মতোই ওরা এখন সর্বনাশ ঘটাচ্ছে সেসব জনপদের।

নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার উত্তরে শেষ জনপদের নাম রামপুর।সেই প্রাচীন কাল থেকে এখানে বেশ ক’টি বানর দলের আধিপত্য চলে আসছে। মনুষ্য বসতিতে বানর অনুপ্রবেশকারী এখানে,নাকি বানরের রাজত্বে মানুষ দখলদার সেটি নির্ধারন কঠিন।তবে মানুষের পাশাপাশি রামপুরের গ্রামীন ঝাড় জঙ্গল মাতিয়ে মন্দ ছিলো না ওরা। হিন্দু প্রধান এলাকা রামপুর।ফলে দেবতা হনুমানের নিকটাত্মীয়ের মর্যাদায় আদরে কদরে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলো ওরা বংশ পরম্পরায়।কিন্তু হালে গ্রামীন জঙ্গলের আকৃতি কমেছে।ফলে খাবারে টান পড়েছে তাদের।

এ জনপদে বানর এখন রীতিমতো উটকো ঝামেলা একটি। তাদের জীবন ধারন রীতি এখন রীতিমতো উৎপাত এ জনপদে। ফলে মানুষের দেব দ্বিজে ভক্তি শ্রদ্ধায় ভাটার টান এখন। সেটিই স্বাভাবিক।জঙ্গলের খাবারে টান পড়তে রীতিমতো চুরি,ছিনতাই,ডাকাতিতে হাত পাকিয়েছে এখন এ বানরকূল। এলাকাবাসীর অভিযোগ,সুযোগ পেলেই ছোঁ মেরে খাবার কেড়ে নিচ্ছে,দলবেঁধে জনপদের বাড়ীঘরে হামলে পড়ছে। উনুনে বসানো ভাতের হাঁড়ি উল্টে দিচ্ছে।গেরস্থের ডিমে তা দেয়া মুরগী তাড়িয়ে ডিম বগলদাবা করে পগার পার হচ্ছে। বেড়ে রাখা ভাত তরকারীর প্লেট নিয়ে লাগাচ্ছে ছুট।এলাকায় পুলিশের তদন্ত কেন্দ্র আছে একটি। তাতে থোড়াই কেয়ার তাদের।মানুষ ভয় করে পুলিশের নামে,কিন্তু ওরা দেখায় বৃদ্ধাঙ্গুল।গাছের ফল,ক্ষেতের ফসল,পানের বরজ তছনছ করছে।যতো না খায় তারচে বেশী নষ্ট করছে। কৃষকের সর্বনাশ ঘটাচ্ছে ওরা।এ জন্য এলাকাসীর মতে,কৃষি প্রধান এলাকাটির

দারিদ্রতার প্রধান কারন এ বানরকূল। প্রচুর পতিত জমি এখানে।বানরকূলের যন্ত্রনায় সেসবে চাষাবাদ নাকি কঠিন। উক্ত গ্রামের লিয়াকত আলী রতন জানান,আগে হিন্দু বাড়ীতে ফলজ গাছপালার প্রাচুর্য ছিলো।বানরদের খাবারে কমতি ছিলো না।এখন সে অবস্থা নেই। রামপুর গ্রামের বাসিন্দা খিদিরপুর হাই স্কুলের সাবেক শিক্ষক শুধাংসুু বনিক (৮০) কে দেখা গেলো লাঠি হাতে এক ধানী জমি পাহাড়ায়। লাগাবার পর থেকে রোজ সকাল-সন্ধ্যা গাছের ছায়ায় লাঠি হাতে মাচায় বসে এভাবে বানরের কবল থেকে ফসল রক্ষের সচেষ্ট তিনি- জানালেন এ প্রবীন শিক্ষক।

গ্রামবাসীর এতো বিরুপ মনোভাব ও আচরনের কারনে বানররা এখন দলে দলে চারপাশের বিভিন্ন গ্রাম জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে। বিষয়টি আঁতকে উঠার মতো,এক রামপুরবাসীর বারোটা বাজিয়েছে ওরা এতোদিন। এবার আরো বিস্তির্ন জনপদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে বারোটা বাজাবার আয়োজন হলো তবে।রামপুরের পার্শ্ববর্তী চর সাগরদী গ্রামে বানর দলের তান্ডব এখন চলমান রয়েছে।সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তারেক মাহমুদ অপু জানায়,তাদের এলাকায় বানরের উৎপাতে এক মরিচ ছাড়া আর কোন শাক-সবজী বা ফসলের চাষ কঠিন হয়ে পড়েছে এখন।

চর আহাম্মদপুর গ্রামের যুবক সানী জানালো,কয়েক বছর ধরে বানর দল ঘাঁটি গেড়েছে তাদের গ্রামে।ওরা অত্যাচারের চূড়ান্ত করছে সেখানে।রামপুর গ্রামের মৃত রমানাথ বনিকের স্ত্রী সন্ধ্যা বনিক (৬৫) বানরদের অত্যাচারের এক দীর্ঘ ফিরিস্তি দিলেন। শেষে নিজস্ব একটি সমাধান বাতলালেন এর।তার মতে,রামপুর ভূমি অফিসের পেছনে সরকারী খালি জায়গা আছে কতক।জায়গাটিকে দেয়াল দিয়ে ঘিরে নেট দিয়ে আবদ্ধ করে চিড়িয়াখানার মতো করা যেতে পারে এখানে।এতে সন্ধ্যা বনিকরা যেমন বানরের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবেন,বানরদেরও হিল্লে হয় একটা। দর্শনার্থীরা তাদের খাবার দেবে টাকাও আয় হবে তাতে। মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করীম জানান,বানরের বিষয়টি নিয়ে তারাও ভাবছেন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কোন আবেদন পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনে সহায়ক হবে বলেও জানান তিনি।