‘রাজনীতিটা’ রাজনীতিবিদগণের জন্য কঠিনতর হচ্ছে
- Update Time : ০৮:২৭:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
- / ২০০ Time View
রাজনীতিবিদ সংগ্রাম করে, কারাগার রাজনীতিবিদের সেকেন্ড হোম, দেশের জন্য রাজনীতিবিদ জীবন উৎসর্গ করবে। কিন্তু এসবই এখন অলিক কল্পনা। বাংলাদেশে রাজনীতিটা রাজনীতিবিদগণের জন্য কঠিনতর করা হচ্ছে। কোন একজন শীর্ষ নেতৃত্বের সর্বব্যাপী ক্ষমতার লোভের বলি হচ্ছেন রাজনীতিবিদগণ।
এমন স্বৈরশাসক শ্রেনীর সবশেষ উদাহরণ বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা। ছাত্র জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের কাজটা করেছে।
চাইলে নাহিদ-আসিফের নেতৃত্বে তরুণ বিপ্লবীরা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মত ক্ষমতা নিতে পারতেন। ওই পরিস্থিতিতে বাধা দেওয়ার কেউ ছিলো না। কিন্তু ক্ষমতার লোভ থেকে নিজেদের বিরত রেখে বিপ্লবী নাহিদ-আব্দুল্লাহরা জনসাধারণের মঙ্গল চিন্তা করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। প্রভুর সহায়তায় যেভাবে পলায়ন করেছেন, একইভাবে চেষ্টা চলছে সেই বিদেশী প্রভুর বদান্যতায় জাদুর কার্পেটে চেপে দেশে ফেরার। প্রশাসনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ভুতের ভেলকিবাজীও মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য মার্কিনমুলূকে লবিষ্টও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কোন কর্মকান্ড দূরে থাক নাম গন্ধও নেই। শেখ হাসিনার সব চেষ্টাই অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী পন্থায়। রাজনীতির চর্চা বাদ দিয়ে তিনি নিজে যেভাবে স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। চিন্তা চেতনায় এখনো সেভাবেই স্বপ্নের জাল বুনছেন। পালিয়ে থেকে ষড়যন্ত্র করছেন। শেখ হাসিনা সব থেকে বেশি ক্ষতি করেছেন রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিটা দিন দিন আরও কঠিনতর হচ্ছে।
তৃণমূল থেকে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিজ্ঞজন, রাষ্ট্রচিন্তক ধরনের মানুষকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত বা অন্তরীন করা হয়েছে। রাজনীতিতে টেনে আনা হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী, আন্তর্জাতিক স্মাগলার, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং পারিবারিক উত্তরাধিকার। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকা ব্যক্তিরাও তার কাছে ব্যত্যয়।
ছাত্র রাজনীতিতে চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজরাই পরবর্তিতে মূলধারায় স্থান পেয়েছে। এক কথায় সর্বব্যাপী বিরাজনীতিকিকরণ হয়েছে। জনগণ বা বিরোধী মত সুদূর অতিত।
নিজ দলের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদগণেরই অস্তিত্ব ছিলো না। বাকশালীয় কায়দায় শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছিলেন সর্বময় ক্ষমতার মালিক। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, সবাইকে ডুবিয়ে শেখ হাসিনা নিজে পালিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের সূচনা। পরবর্তি সময়ে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি সেই ধারাবাহিকতা আরও প্রলম্বিত করে। শেখ হাসিনা রাজনীতিবিদদের বারটা বাজিয়েছেন। আর নিজে পালিয়ে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়েছেন।
রাজনীতিবিদ ও রাজনীতি শুন্যতায় অতিষ্ঠ জনাসাধারণ তাদের পথ বেছে নিয়েছে। বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী ছিলো। স্বাধীনতা অর্জনের পর দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান গণ্য করা কি ঠিক? আমি বলবো “না”। বিপ্লবী ভগত সিং এর মতে ‘স্বাধীনতা মানে বৃটিশ সিংহের থাবা থেকে মুক্তি নয়’। বাঙালি বার বার রুখে দাড়িয়েছে। বৃটিশ থাবা, পাকিস্তানী হানাদার এবং বার বার স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু কাঙ্খিত স্বাধীনতা আর পায় না। এভাবে সিংহের থাবা থেকে মুক্ত মানে স্বাধীনতা হতে পারে না। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হতে পারে। মানুষকে স্বপ্ন দেখার সাহস জোগাবে এমন কিছু অর্জন স্বাধীনতা হতে পারে। মানুষকে পাশাপাশি সহবস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এমন কিছু স্বাধীনতা হতে পারে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা বার বার জনসাধারণকে আশাহত করেছে। মানুষের অধিকার নিশ্চিতের জন্য কোন রাজনৈতিক সরকারই আন্তরিক ছিলো না। যেখানে রাজনীতি করাই কঠিন সেখানে জনসাধারণের ভালো কিছু প্রত্যাশা করা সুদূর পরাহত। তাই সবার আগে রাজনীতি সহজ করতে হবে। রাজনীতিটা তাদের কাছে থাকতে হবে যারা রাজনীতি করেন।
একটি সফল বিপ্লবের পর সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। আসল জায়গায় কেহই আসছে না। আইন কানুন এই দেশে সব সময় ছিলো। কিন্তু অসৎ মানুষরা নিজেদের খেয়াল খুশিমত আইন কাজে লাগিয়েছে। সংস্কার করার পরও যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে তার নিশ্চয়তা কে দিবে। পাঁচ (৫) আগষ্ট পরবর্তি সময়ের বিভিন্ন কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে সহজেই বুঝা যায় রাজনৈতিক স্বপ্নবিলাসীগণ এখনো ক্ষমতা কেন্দ্রীক সব কিছু ভাবেন। এদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। রাষ্ট্র বা জনগণ এদের কাছে নিরাপদ থাকতে পারবে বলে মনে হয়না।
এখন বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিবিদ নন। কিন্তু তিনিতো একজন ভালো নেতা। যেখানেই গ্রামীন ব্যাংক সেখানেই ড. ইউনূস। তার আশপাশের লোকজন কেউই তাকে অস্বীকার করেনি। তা তিনি আদালতের কাঠগড়া বা আমেরিকা যেখানেই থাকেন না কেন।
এই পর্যায়ের লোক হিসেবে ড. ইউনূস একমাত্র বাঙালি যিনি দেশীয় পোশাক হিসেবে গ্রামীন চেক, কটি, পাজ্ঞাবি বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন। তার দেশ প্রেম প্রশ্নাতিত।
রাজনীতিবিদগণ ক্ষমতা হাতে পেয়ে রাতারাতি সব মামলা থেকে দায়মুক্তি পাচ্ছেন। সেখানে ক্ষমতার বড়াই দেখিয়ে রাতারাতি মামলা প্রত্যাহারেও ড. ইউনূসের অনিহা। বিপ্লবী ছাত্র-জনতার আস্থার জায়গাটা সময়োপযোগী এবং সুদূর প্রসারী একথা বলার সময় এখনো আসেনি।




















































































































































































