ঢাকা ০২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রসিকের কাউন্সিলরসহ নিহত ৫ সাংবাদিকসহ আহত ৫০

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর
  • Update Time : ১১:২৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৫৯ Time View

বিভাগীয় নগরী রংপুরে অসহযোগ আন্দোলনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। সাংবাদিকসহ আরো প্রায় ৫০ জনের মতো আহত হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে।

রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে রংপুর নগরীতে সংঘর্ষ চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। নিহত হারাধন রায় হারা রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পশুরাম থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মহানগর পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রসিক কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান শাহাজাদা। নিহত অন্য চারজন হলেন নগরীর গুড়াতিপাড়ার স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা খরশু মিয়া, যুবলীগ নেতা মাসুম, হারাধন রায়ের ভাগ্নে অপরজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান নেয় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অবস্থান নেয় নগরীর টাউনহল চত্বরে। সেই সাথে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলিতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। বেলা ১২ টার দিকে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহাজকোম্পানী মোড় থেকে পায়রা চত্বরে অবস্থান শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সিটি করপোরেশনের দিকে চলে যায়। পরে টাউনহল কেন্দ্রিক অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে পাল্টা ধাওয়া করে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপরপরে আবারো জাহাজকোম্পানী মোড় থেকে পায়রা চত্বর পূণরায় অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে গিয়ে আটকে পরেন পশুরাম থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রসিক কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা। পরে পায়রা চত্বর থেকে পালিয়ে কালিবাড়ি মন্দিরে প্রবেশ করার সময় আন্দোলনকারীদের হাতে ধরা পরেন হারাধন রায় হারা। সেখানেই এলোপাতারি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলেও পূণরায় এলোপাতারি আঘাত করেন তারা। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনা জানার পর হারাধনের মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।

 

এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থান করা এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরমান, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের রিপোর্টার ফকরুল শাহীন, নিউজটুয়েন্টিফোর এর রিপোর্টার রেজাউল ইসলাম মানিক, একুশে টিভির ক্যামেরাম্যান আলী হায়দার রনি, ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, অনলাইনের মিজানসহ ১০ জন গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর করেছে আন্দোলনকারীরা।

 

অন্যদিকে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। রংপুর বদরগঞ্জ ২ আসনের আওয়ামীলীগের এমপি ডিউক চৌধুরীর বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে আগুন ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন, গংগাচড়া আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও আগুন, মিঠাপুকুর উপজেলার পরিষদ চত্বরে ইউএনও অফিস, বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের বাড়িতে আগুন দেয় দূর্বৃত্তরা।

 

এই মুহুর্তে রণক্ষেত্র রংপুর। দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর রংপুরের প্রধান নগরীর সিটি কর্পোরেশনের সামনে, সুপার মার্কেট, জাহাজকোম্পানীর ও পায়রা চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। চারিদিকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মাথায় হেলমেট দেখলেই তেড়ে আসছেন এবং তাদের নানা রকমের জিজ্ঞাসা করছেন আন্দোলনকারীরা।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আজকে কোথাও প্রতিরোধ কিংবা অবস্থান করতে দেখা যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

রসিকের কাউন্সিলরসহ নিহত ৫ সাংবাদিকসহ আহত ৫০

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর
Update Time : ১১:২৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪

বিভাগীয় নগরী রংপুরে অসহযোগ আন্দোলনে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। সাংবাদিকসহ আরো প্রায় ৫০ জনের মতো আহত হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে।

রবিবার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে রংপুর নগরীতে সংঘর্ষ চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। নিহত হারাধন রায় হারা রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পশুরাম থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মহানগর পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রসিক কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান শাহাজাদা। নিহত অন্য চারজন হলেন নগরীর গুড়াতিপাড়ার স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা খরশু মিয়া, যুবলীগ নেতা মাসুম, হারাধন রায়ের ভাগ্নে অপরজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে অবস্থান নেয় আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অবস্থান নেয় নগরীর টাউনহল চত্বরে। সেই সাথে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলিতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। বেলা ১২ টার দিকে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাহাজকোম্পানী মোড় থেকে পায়রা চত্বরে অবস্থান শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা সিটি করপোরেশনের দিকে চলে যায়। পরে টাউনহল কেন্দ্রিক অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে পাল্টা ধাওয়া করে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপরপরে আবারো জাহাজকোম্পানী মোড় থেকে পায়রা চত্বর পূণরায় অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করতে গিয়ে আটকে পরেন পশুরাম থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রসিক কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা। পরে পায়রা চত্বর থেকে পালিয়ে কালিবাড়ি মন্দিরে প্রবেশ করার সময় আন্দোলনকারীদের হাতে ধরা পরেন হারাধন রায় হারা। সেখানেই এলোপাতারি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হলেও পূণরায় এলোপাতারি আঘাত করেন তারা। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনা জানার পর হারাধনের মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান।

 

এদিকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থান করা এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরমান, চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের রিপোর্টার ফকরুল শাহীন, নিউজটুয়েন্টিফোর এর রিপোর্টার রেজাউল ইসলাম মানিক, একুশে টিভির ক্যামেরাম্যান আলী হায়দার রনি, ইত্তেফাকের ফটো সাংবাদিক রাশেদ রাব্বি, অনলাইনের মিজানসহ ১০ জন গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর করেছে আন্দোলনকারীরা।

 

অন্যদিকে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। রংপুর বদরগঞ্জ ২ আসনের আওয়ামীলীগের এমপি ডিউক চৌধুরীর বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে আগুন ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন, গংগাচড়া আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও আগুন, মিঠাপুকুর উপজেলার পরিষদ চত্বরে ইউএনও অফিস, বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, আনসার ভিডিপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের বাড়িতে আগুন দেয় দূর্বৃত্তরা।

 

এই মুহুর্তে রণক্ষেত্র রংপুর। দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর রংপুরের প্রধান নগরীর সিটি কর্পোরেশনের সামনে, সুপার মার্কেট, জাহাজকোম্পানীর ও পায়রা চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। চারিদিকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মাথায় হেলমেট দেখলেই তেড়ে আসছেন এবং তাদের নানা রকমের জিজ্ঞাসা করছেন আন্দোলনকারীরা।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আজকে কোথাও প্রতিরোধ কিংবা অবস্থান করতে দেখা যায়নি।