ঢাকা ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
তদন্ত কমিটি গঠন

রংপুরে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় তিন পুলিশ ক্লোজড

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ১০:২৭:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
  • / ৫ Time View

দৈনিক আমার দেশের প্রতিনিধি এমএ সালাম বিশ্বাসকে মারধোরের ঘটনায় রংপুরের বদরগঞ্জ থানার এক এসআই ও ২ কনেস্টবলকে ক্লোজড এবং ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার ( ২১ মার্চ) সকাল ১০ টায় এই তথ্য জানিয়ে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বদরগঞ্জ থানায় সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধোরের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় থানার এএসআই রবিউল আলম (এবি-৩৮১), কনস্টেবল আলামিন হোসেন( ৯৯৪) ও মজিবুর রহমান(৬৩০) পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও ওসি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা দ্বায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( এ সার্কেল) শরীফুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার ( ১৯ মার্চ) দুপুরে থানা ক্যাম্পাসে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মধ্যকার হট্রগোলের ছবি তুলতে গেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধোর করেন। পরে চ্যাংদোলা করে ওসির সামনে নিয়ে গিয়ে আবারও মারধোর করে। ছিড়ে ফেলা হয় গায়ে থাকা শার্ট। এরপর তাকে ওসির রুমে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। এরপর অভিয়ুক্তদের সাথে মিমাংসা করে দেয়ার নাটক করেন ওসি। পরে সহকর্মীরা সেখান থেকে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।

মারধোরের শিকার সাংবাদিক এম এ সালাম জানান, থানার প্রধান ফটকের সামনে শহীদ মেনাজ সংঘ পাঠাগারে বসে আমি নিউজ লিখতে ছিলাম। এসময় বাইরে শব্দ শুনি গন্ডগোলের। ক্লাব থেকে বের হয়ে দেখি পুলিশের পিকআপ ভ্যানে ২ জন পুলিশ এবং বাইকে দুইজন পুলিশ নিজেদের মধ্যে উচ্চবাচ্চ এবং হট্রগলো করছে। বিষয়টি সাথে সাথেই আমি আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে থাকি। এসময় মোটরসাইকেলে থাকা এএসআই রবিউল আমার মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ কেড়ে নেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে বাইকে থাকা দুইজনের সাথে পিআক ভ্যানে থাকা দুইজন নেমে আমাকে ব্যাপক মারধোর করে। এসময় সেখানে বহু মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা চারজন মিলে আমাকে চ্যাংদোলা করে থানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে ওসির সামনে ফেলে দিয়ে লাথিমারে।

সালাম জানান, আমি রোজা থাকায় শরীর খুব দুর্বল ছিল। আমি পুলিশকে অনুরোধ করি আমার ফোন দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি সেটা না করে আমাকে তার রুমে নিয়ে যান এবং প্রায় ৪ ঘন্টা সেখানে আটকে রাখেন। আমার পরণের ছিন্নভিন্ন শার্ট আমাকে না নিয়ে একটা নতুন শার্ট কিনে এনে আমাকে পড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে আমার কিছু সহকর্মী সেখানে আসলে ওসি সাহেব অভিযুক্তদের সাথে হাত মিলিয়ে দিয়ে মিমাংসার করে দেয়ার কথা বলেন। এসময় আমি ওসি সাহেবকে বলি আমি আপনাকে একটা চড় মারি এবং পরে আপনার কাছে মাফ চাই তাহলেই কি সব হয়ে যাবে। এরপর সহকর্মীরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার জানান, তার পায়ে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পায়ের জন্য একটা এক্সরে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি ডেঞ্জার লেভেলে নাই।

বদরগঞ্জ থানার ওসি আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘ ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে মিমাংসা করে দেয়া হয়েছে। ‘

রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান জানান, ‘ এটি জঘন্যতম অপরাধ করেছে পুলিশ। তারা প্রকাশ্যে হট্টগোলে জড়াবে। আর ছবি তুললে তাদের অসুবিধা হবে। এটা মেনে নেয়ার মতো বিষয় না। এ ব্যপারে তিনজনকে ক্লোজড করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক। যাতে কখনই কোন ‍পুলিশ সদস্য এ ধরণের অপরাধে না জড়ান।

রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল জানান, ‘ পুলিশ সাংবাদিক সালামকে পিটিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এবং এটা খবুই এলার্মিং বিষয়। যা সাংবাদিক সমাজ কখনই কোনভাবে বরদাশত করবে না। শুধু ক্লোজড করেই যদি পুলিশ মনে করেন ঘটনার সমাধান হয়েছে। সেটা বুমেড়াং হবে। আমরা দেখতে চাই এ ঘটনার যথাযথ আইনানুগ এ্যকশন। তিনি জানান, পুরো ঘটনার সময় থানার ওসি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয দিয়েছেন। তার ব্যাপারে এখনও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।

Please Share This Post in Your Social Media

তদন্ত কমিটি গঠন

রংপুরে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় তিন পুলিশ ক্লোজড

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
Update Time : ১০:২৭:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

দৈনিক আমার দেশের প্রতিনিধি এমএ সালাম বিশ্বাসকে মারধোরের ঘটনায় রংপুরের বদরগঞ্জ থানার এক এসআই ও ২ কনেস্টবলকে ক্লোজড এবং ওসির বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শুক্রবার ( ২১ মার্চ) সকাল ১০ টায় এই তথ্য জানিয়ে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বদরগঞ্জ থানায় সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধোরের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় থানার এএসআই রবিউল আলম (এবি-৩৮১), কনস্টেবল আলামিন হোসেন( ৯৯৪) ও মজিবুর রহমান(৬৩০) পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এছাড়াও ওসি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা দ্বায়িত্ব অবহেলাসহ পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( এ সার্কেল) শরীফুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার ( ১৯ মার্চ) দুপুরে থানা ক্যাম্পাসে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মধ্যকার হট্রগোলের ছবি তুলতে গেলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিক এম এ সালাম বিশ্বাসকে মারধোর করেন। পরে চ্যাংদোলা করে ওসির সামনে নিয়ে গিয়ে আবারও মারধোর করে। ছিড়ে ফেলা হয় গায়ে থাকা শার্ট। এরপর তাকে ওসির রুমে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। এরপর অভিয়ুক্তদের সাথে মিমাংসা করে দেয়ার নাটক করেন ওসি। পরে সহকর্মীরা সেখান থেকে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান।

মারধোরের শিকার সাংবাদিক এম এ সালাম জানান, থানার প্রধান ফটকের সামনে শহীদ মেনাজ সংঘ পাঠাগারে বসে আমি নিউজ লিখতে ছিলাম। এসময় বাইরে শব্দ শুনি গন্ডগোলের। ক্লাব থেকে বের হয়ে দেখি পুলিশের পিকআপ ভ্যানে ২ জন পুলিশ এবং বাইকে দুইজন পুলিশ নিজেদের মধ্যে উচ্চবাচ্চ এবং হট্রগলো করছে। বিষয়টি সাথে সাথেই আমি আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে থাকি। এসময় মোটরসাইকেলে থাকা এএসআই রবিউল আমার মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ কেড়ে নেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে বাইকে থাকা দুইজনের সাথে পিআক ভ্যানে থাকা দুইজন নেমে আমাকে ব্যাপক মারধোর করে। এসময় সেখানে বহু মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা চারজন মিলে আমাকে চ্যাংদোলা করে থানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে ওসির সামনে ফেলে দিয়ে লাথিমারে।

সালাম জানান, আমি রোজা থাকায় শরীর খুব দুর্বল ছিল। আমি পুলিশকে অনুরোধ করি আমার ফোন দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি সেটা না করে আমাকে তার রুমে নিয়ে যান এবং প্রায় ৪ ঘন্টা সেখানে আটকে রাখেন। আমার পরণের ছিন্নভিন্ন শার্ট আমাকে না নিয়ে একটা নতুন শার্ট কিনে এনে আমাকে পড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে আমার কিছু সহকর্মী সেখানে আসলে ওসি সাহেব অভিযুক্তদের সাথে হাত মিলিয়ে দিয়ে মিমাংসার করে দেয়ার কথা বলেন। এসময় আমি ওসি সাহেবকে বলি আমি আপনাকে একটা চড় মারি এবং পরে আপনার কাছে মাফ চাই তাহলেই কি সব হয়ে যাবে। এরপর সহকর্মীরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার জানান, তার পায়ে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পায়ের জন্য একটা এক্সরে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি ডেঞ্জার লেভেলে নাই।

বদরগঞ্জ থানার ওসি আতিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘ ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। পরে মিমাংসা করে দেয়া হয়েছে। ‘

রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান জানান, ‘ এটি জঘন্যতম অপরাধ করেছে পুলিশ। তারা প্রকাশ্যে হট্টগোলে জড়াবে। আর ছবি তুললে তাদের অসুবিধা হবে। এটা মেনে নেয়ার মতো বিষয় না। এ ব্যপারে তিনজনকে ক্লোজড করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক। যাতে কখনই কোন ‍পুলিশ সদস্য এ ধরণের অপরাধে না জড়ান।

রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী বাদল জানান, ‘ পুলিশ সাংবাদিক সালামকে পিটিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এবং এটা খবুই এলার্মিং বিষয়। যা সাংবাদিক সমাজ কখনই কোনভাবে বরদাশত করবে না। শুধু ক্লোজড করেই যদি পুলিশ মনে করেন ঘটনার সমাধান হয়েছে। সেটা বুমেড়াং হবে। আমরা দেখতে চাই এ ঘটনার যথাযথ আইনানুগ এ্যকশন। তিনি জানান, পুরো ঘটনার সময় থানার ওসি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয দিয়েছেন। তার ব্যাপারে এখনও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।