সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত বাংলাদেশের একমাত্র উপজেলা রাঙ্গাবালী

- Update Time : ০৪:২৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ২০ Time View
নেতার অভাব নেই শুধু উন্নয়নের অভাব, ক্ষমতার পালা বদল হয় কিন্তু উন্নয়নে হয় লুকোচুরি। শুধু আশায় চোরাবালি।
একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে দুই ইউনিয়নের ৪০ টি গ্রামের প্রায় লক্ষ্ মানুষের। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন! কৃষক,ব্যবসায়ী,স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। দুই ইউনিয়নে প্রায় লক্ষ মানুষের বসবাস হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন কোন উন্নতি হয়নি। একটি সেতুর অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতের করছেন তারা।
বলছিলাম পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দারছিড়া নদীর কথা। নদীটি উপজেলা সদর থেকে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী দুইটি ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। নদী পাড়ি দিয়ে জেলা-উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের।একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় এসব এলাকার কৃষক শ্রমিক স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীসহ হাজারো মানুষ।
রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৯ সালে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নকে ভেঙ্গে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী দুইটি ইউনিয়ন গঠন করা হয়।
এই উপজেলার উত্তরে আগুন মুখা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে দারছিড়া নদী। নদীর পূর্ব দিকে রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর ও পশ্চিমে বড়বাইশদিয়া এবং মৌডুবী ইউনিয়ন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নের বসবাসরত অধিকাংশ মানুষই মৎস্য,কৃষিজীবী। তাদের নানা প্রয়োজনে উপজেলা যাতায়াত করতে হয়। তবে ওই নদীতে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খেয়া চলাচল করেন।
এ ব্যাপারে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ আবুল কালাম বলেন, যুগ যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে আসছি, আমাদের দাবি খুব শীঘ্রই এখানে সেতু নির্মাণ । তাহলেই দুই ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তি কমবে।
একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের এই পরিস্থিতিতে ওই দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা ওই নদীর উপর সেতু নির্মাণে জোর দাবি জানিয়েছেন।
মৌডুবী ইউনিয়নের তরুন উদ্যোক্তা মোঃ আজিজুর রহমান সুজন বলেন,মৌডুবী ইউনিয়নের রয়েছেন পর্যটন স্পট জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত। সবুজ বনাঞ্চল পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ ও বিস্তীর্ণ বালুকাময় বীচ।দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। বালুচরে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি। ঢেউয়ের গর্জন। বাতাসের তালে ঝাউপাতার শো শো শব্দে এক অন্যরকম অনুভূতি। সমুদ্রতটে চিকচিকে বালুতে পা ফেলানো আর হঠাৎ সমুদ্রের জলরাশি ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাওয়া। সাজ বেলায় পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্যটা বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পরার মতো দৃশ্য যেকোন জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায়। ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে এ স্থানটি অতুলনীয়।
এখানে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন সমুদ্রবিলাসে আসেন। তবে এখানে আসতে হলে দাড়ছিড়া নদী পার হয়ে আসতে হয়। নদীতে ব্রীজ না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতে হয় প্রতিনিয়ত । এজন্য এখানে একবার কেউ এলে দ্বিতীয়বার আসতে চায় না। এই নদীতে একটি ব্রিজ হলে জাহাজমারা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে উন্নতি হবে পর্যটন শিল্প জাহাজ মারা।
এসময় কথা হয় বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন চরহালিম গ্রামের মোঃ জুলহাস মৃধা । সিয়াম রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তিনি বলেন, নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে কলেজে আসতে হয় তাকে।
একই ইউনিয়নের নারী শিক্ষার্থীরা বলেন,অনেক সময় ঘাটে নৌকা না থাকলে কলেজে পৌঁছতে দেরি হয়। আবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নদী উত্তাল হয়ে উঠেলে ঝূঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয়।
উপজেলার যুব ফোরামের সভাপতি ও সমাজকর্মী মোঃ রাকিবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হয়। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে।এখানে ব্রিজ এখন সময়ের দাবি।
উপজেলার খালগোড়া বাজার ব্যবসায়ীরা বলেন,ট্রলারে করে এই নদী পাড় হতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। উপজেলা সদরে আসতে এই খেয়াই একমাত্র বাধা। তাই এখানে ব্রিজ হলে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটবে।
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ফরহাদ হোসাইন বলেন,এই নদীতে একটি সেতুর নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার এলজিইডি কার্যালয়ের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রাঙ্গাবালী জাহাগিরিয়া শাহসূফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মোঃশাহিন মাহমুদ বলেন, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন থেকে আমার মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসে। কিন্তু নদীতে খেয়া থাকার কারণে বর্ষা মৌসুমে ওদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এজন্য অনেক অভিভাবকরা তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠাতে অনিহা প্রকাশ করেন। এখানে ব্রিজ হওয়া সময়ের দাবি।
রাঙ্গবালী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন,আমাদের দাড়ছিরা নদীর উপর ২৮০ মিটার একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে। ইতিমধ্যে ড্রইং নিয়ে সার্ভে করা হয়েছে। এলাইমেন্টের দুই দিকে ডান এবং বামে তিন কিলোমিটার সার্ভে করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার টীম স্থান পরিদর্শন করেছেন। তারা ফিজিবিলিটি নিয়ে গেছে। যেহেতু এটি একটি বড় প্রকল্প এটি স্টেজ বাই স্টেজ কাজ চলতেছে এবং চলমান আছে। আশা করি কাজটি বাস্তবায়ন হবে। যেহেতু এটি একটি বড় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হয় । প্রথমে এটি একনকে যাবে । তিনি আরো বলেন,আমার সাথে প্রকল্প পরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন কাজটি যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করা যায়।